ইসলামের প্রাথমিক যুগে ব্যবহৃত পরিমাপ পদ্ধতি ছিল অত্যন্ত সুনির্দিষ্ট ও ধর্মীয় দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।
এসব পরিমাপ একদিকে যেমন দৈনন্দিন লেনদেন ও খাদ্য বিতরণে ব্যবহৃত হতো, তেমনি তা ইবাদত, যাকাত, ফিতরা ইত্যাদি ধর্মীয় বিধান পালনের ক্ষেত্রেও অপরিহার্য ছিল।
📏 ইসলামী পরিমাপ এককসমূহ
১. মুদ্দ (المدّ)
– সংজ্ঞা: মুদ্দ হলো এমন একটি পরিমাপ যা দুই হাতের তালু ভরে ধারণ করা যায়।
– পরিমাণ:
– জমহূর (হানাফি ব্যতীত): প্রায় ৫১০ গ্রাম বা ০.৫ লিটার।
– হানাফি মাজহাব: প্রায় ৮১২.৫ গ্রাম বা ০.৭৫ লিটার। [1]
২. সা‘ (الصاع)
– সংজ্ঞা: সা‘ হলো চার মুদ্দের সমান একটি পরিমাপ।
– পরিমাণ:
– জমহূর: প্রায় ২.০৪ কেজি বা ২.০৪ লিটার।
– হানাফি মাজহাব: প্রায় ৩.২৫ কেজি বা ৩ লিটার। [1]
মুসলিম জীবনে মুদ্দ, সা‘ ও মসকের ভূমিকা
– ধর্মীয় গুরুত্ব: যাকাতুল ফিতর আদায়ে সা‘ পরিমাপ ব্যবহৃত হয়। প্রতি ব্যক্তির জন্য এক সা‘ খাদ্যদ্রব্য প্রদান করা সুন্নত।
৩. মসক বা মাখুক (المكوك)
– সংজ্ঞা: মসক হলো একটি বৃহৎ পরিমাপ একক।
– পরিমাণ: ১ মসক = ১.৫ সা‘। [2]
🕌 ইসলামের প্রাথমিক যুগে ব্যবহারের প্রেক্ষাপট
– ইবাদত: অজু ও গোসলের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি ব্যবহারে মুদ্দ ও সা‘ পরিমাপ নির্দেশিত হয়েছে।
– যাকাত ও ফিতরা: যাকাতুল ফিতর আদায়ে সা‘ পরিমাপ অনুসরণ করা হয়।
– লেনদেন: বাজারে খাদ্যদ্রব্যের লেনদেনে মুদ্দ ও সা‘ ব্যবহার হতো।
– পাত্রের ব্যবহার: সুনির্দিষ্ট মাপের পাত্র ব্যবহার করে এই পরিমাপগুলো নির্ধারণ করা হতো।
📚 ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ
ইসলামের প্রাথমিক যুগে পরিমাপের এই পদ্ধতিগুলো সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা,
ইবাদতের সঠিকতা নিশ্চিতকরণ এবং সামাজিক সমতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
এই পরিমাপ পদ্ধতির মাধ্যমে মুসলিম সমাজে একটি সুশৃঙ্খল ও ন্যায়ভিত্তিক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল।
✅ উপসংহার
মুদ্দ, সা‘, মসক ইত্যাদি পরিমাপ এককসমূহ ইসলামের প্রাথমিক যুগে ধর্মীয় ও সামাজিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল।
এগুলি শুধুমাত্র পরিমাপের একক নয়, বরং ইসলামী জীবনধারার প্রতিচ্ছবি।
বর্তমান যুগে এই পরিমাপগুলো সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন আমাদেরকে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতির সঙ্গে আরও গভীরভাবে পরিচিত করে।