(মুসলিমবিডি২৪ডটকম)
সম্প্রতি ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের ট্রান্সজেন্ডার নিয়ে মন্তব্য-
‘কেউ চাইলেও লিঙ্গ পরিবর্তন করতে পারে না’ অথবা ‘পুরুষ পুরুষই, নারী নারীই’- বিশ্বে আলোড়ন তৈরি করে।
আমরা এমন সময়ে বাস করছি যখন আমেরিকার মতো উন্নত দেশের সংসদে বিতর্কের বিষয় হয়- ‘পুরুষ কি গর্ভে সন্তান ধারণ করতে পারে?’
এ বছরের শুরুতে জেলখানায় এক ট্রান্সজেন্ডার নারী (জন্মগত পুরুষ) প্রকৃত নারীকে (রুমমেট) ধর্ষণের ইস্যুতে স্কটল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগে (১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩) বাধ্য হোন।
স্কুলের পাঠ্যক্রমে ট্রান্সজেন্ডার বা এলজিবিটি মতাদর্শ অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে গত ২০ সেপ্টেম্বর কানাডার লক্ষ লক্ষ (মিলিয়ন মার্চ) পিতামাতা রাস্তায় নেমে আসেন।
আসন্ন আমেরিকার প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে ট্রান্সজেন্ডার একটি বড় ইস্যু হতে যাচ্ছে। তুরষ্কের সাম্প্রতিক নির্বাচনে এলজিবিটি বড় একটি ইস্যু ছিল।
নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে এরদোয়ান বলেন- এই বিজয় এলজিবিটি মতাদর্শের বিরুদ্ধে বিজয়।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ট্রাডিশনাল মূল্যবোধ রক্ষার্থে এলজিবিটির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন।
চায়নাও একই মনোভাব পোষণ করে, এলজিবিটি গোষ্ঠীর প্রাইড মাসে রঙধনু পতাকা বহনের অপরাধে দু’জনকে গ্রেপ্তার করে।
হিজড়া এবং ট্রান্সজেন্ডার শব্দের মৌলিক পার্থক্য না বুঝার করার কারণে ২০১৮ সালে পাকিস্তানে ট্রান্সজেন্ডার বিল সংসদে পাস হয়।
কিন্তু জন্মগত লিঙ্গ পরিচয়ের সাথে মনস্ত্বাত্তিক জেন্ডার পরিচয় অন্তর্ভুক্তির কারণে
সমাজে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে বিধায় কোর্ট ১৭ মে ২০২৩ আইনটি বাতিল ঘোষণা করে।
সামাজিক এবং ধর্মীয় মূল্যবোধ অক্ষুণ্ন রাখতে মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকা মহাদেশের দেশগুলো এলজিবিটির বিরুদ্ধে সক্রিয় অবস্থান নিয়েছে।
এমনকি উগান্ডা পশ্চিমা ভিসা নিষেধাজ্ঞা, বিশ্বের ব্যাংকের ঋণ স্থগিত করার মতো অর্থনৈতিক ব্যাপারকেও উপেক্ষা করেছে।
পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোও ট্রান্সজেন্ডার মতাদর্শে বিরুদ্ধে অবস্থা নিয়েছে। জেন্ডার আইডেন্টিটি ইস্যুতে ইতালির সরকার পরিবর্তন হয়।
সম্প্রতি হ্যাংগেরি ট্রান্সজেন্ডাদের লিগালাইজেশন বন্ধ ঘোষণা করেছে।
বিশ্বের বিখ্যাত টেক বিলিনিয়ার ইলন মাস্ক ট্রান্সজেন্ডার মতাদর্শের বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নিয়েছেন।
এই বিষয়ে তিনি মাঝে মাঝে সোস্যাল মিডিয়াতে পোস্ট দিয়ে পিতামাতাকে সচেতন রাখেন।
এই বিষয়টির ভয়াবহতা অনুধাবন করাতে সম্প্রতি তিনি একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি (what is a woman) শেয়ার করেন।
এক সপ্তাহের মধ্যে বিশ্বের ১৭০ মিলিয়ন মানুষ ভিডিওটি দেখেছে।
উপরোক্ত ঘটনাগুলোয় থেকে স্পষ্টভাবে উপলব্ধি করা যায়, ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুটি কেন এত গুরুত্বপূর্ণ।
তা না হলে রাষ্ট্রপ্রধান ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এত বেশি সোচ্চার হতেন না। এগুলো কয়েক মাস আগের ঘটনাবলি।
গত বছর পর্যন্তও প্রেক্ষাপট ভিন্ন ছিল যখন এই মতাদর্শের বিরুদ্ধে যারা
প্রতিবাদ করতে চেষ্টা করেছেন(একাডেমিশিয়ান, ক্লিনিসিয়ান, রিসার্চার) তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়।
এমনকি সন্তানের পিতা (কানাডা) এবং স্কুলের শিক্ষককেও (আয়ারল্যান্ড) গ্রেপ্তার করা হয়েছে
ট্রান্সজেন্ডারদের পরিবর্তিত সম্ভোধনমূলক শব্দ (pronouns : She-এর পরিবর্তে He) ব্যবহার না করার অপরাধে!
জেন্ডার আইডেন্টিটি, ট্রান্সজেন্ডার ও হিজড়া শব্দ নিয়ে বিভ্রান্তি
এই শব্দগুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকার কারণে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। যেমন বিবিসি উল্লেখ করে
‘As transgender activists acknowledge, it is a complex area, which can be difficult for those less than fully versed in a vast range of terms to negotiate.’
সেক্স এবং জেন্ডার শব্দ দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করলেও এই ফিল্ডের বিশেষজ্ঞ ছাড়া প্রায় সবাই গুলিয়ে ফেলেন।
সমাজ বিজ্ঞানে দুটি জেন্ডার আইডেন্টিটি (নারী ও পুরুষ) হিসেবে অত্যন্ত সুপরিচিত হলেও বর্তমান সময়ে এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করে।
জেন্ডার শব্দটি ব্যক্তির অস্তিত্ব বা পরিচয়ের প্রশ্ন। বর্তমানে ১০০টির বেশি জেন্ডার আইন্ডেনিটি রয়েছে এবং এর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
চিকিৎসাবিজ্ঞান এবং স্বাস্থ্য গবেষণায় এই শব্দ দুটোর পরিপূর্ণ অর্থ অস্পষ্ট থাকলে তা প্রয়োগের ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করতে পারে।
এজন্য আমেরিকার National Institute of Health (NIH) এই শব্দ দুটোর পার্থক্য বুঝাতে বিশেষ উদ্যোগ নেয় এবং ছবির মাধ্যমে তা তুলে ধরে।
NIH-এর সজ্ঞা মতে সেক্স হচ্ছে জন্মগত বা বায়োলজিক্যাল বিষয় যেখানে ছেলে এবং মেয়ের দৈহিক গঠন, শারীরবৃত্তীয়, জেনেটিক এবং হরমোনগত পার্থক্য রয়েছে।
অপরদিকে জেন্ডার হচ্ছে সামাজিক বা মনস্ত্বাতিক পরিচয় যার সাথে বায়োলজির উল্লেখযোগ্য সম্পর্ক নেই।
এলজিবিটি ( এটি হচ্ছে গুচ্ছ শব্দ যেখানে লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সুয়াল, ট্রান্সজেন্ডার অন্তর্ভুক্ত)
আন্দোলন মূলধারায় এসেছিল ১৯৫৫ সালে যখন সেক্স শব্দটির প্রতিভাষা হিসেবে জেন্ডার নামক শব্দ প্রবর্তনের মাধ্যমে।
এরপর থেকে সমকামিতা ইস্যুতে অনেক শব্দ যুক্ত হয়েছে এবং প্রতিনিয়ত শব্দগত বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।
শুরুতে এটা পরিচিত ছিল গে এবং লেসবিয়ান ইস্যু। বর্তমানে জেন্ডার আইডেন্টিটি ফিল্ডে প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল হওয়া প্রসঙ্গে
Annual Review on Law and Social Science নামক জার্নালে David Frank and Nolan Phillips উল্লেখ করেন-
‘The expansion of sexuality in society is self-reinforcing. The legitimation of each new identity endangers others.
Thus, the old gay center on campus morphs into the lesbian and gay center, and then the LGB center,
then the LGBT center and then the LGBTQ center, and at some point the LGBTQI center,
and now even the LGBTQQIAAP center (lesbian, gay, bisexual, transgendered, queer,
questioning, intersex, asexual, allies and pansexual).’
জেন্ডার আইডেন্টিটি হচ্ছে একধরনের অন্তর্নিহিত বিশ্বাস বা অনুভূতি বা মানসিক অবস্থা
(‘deeply internal sense of gender or a person’s innate understanding of their own gender)।
এটি যদি জন্মগত লৈংগিক পরিচয়ের সাথে সামঞ্জস্য হয় তবে তাকে সিসজেন্ডার (aligned between sex and gender) বলা হয়।
যদি এই মানসিক অনুভূতি জন্মগত লিঙ্গের (not aligned between sex and gender) সাথে অমিল হয় তবে তাকে ট্রান্সজেন্ডার বলা হয়।
একসময় ট্রান্সজেন্ডার বলতে যারা হরমোন এবং সার্জারির আশ্রয় নিতো তাদেরকে শুধু এই শব্দ দ্বারা বুঝানো হতো।
বর্তমানে ট্রান্সজেন্ডার হচ্ছে আম্রেলা বা গুচ্ছ শব্দ। এটি এলজিবিটি এবং নন-বাইনারি নামক শব্দের সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত।
কার্যত এই শব্দগুলো সমকামিতা বা হোমোসেক্সুয়ালিটির সাথে জড়িত।
যে প্রক্রিয়ায় কোনো ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তি (ট্রান্স ম্যান বা ট্রান্স উইমেন) বাহ্যিকভাবে নিজের আইডেন্টিটি প্রকাশ করতে পারে তাকে ট্রান্সজিশন বলা হয়।
এলজিবিটি মুভমেন্টের সবচেয়ে শক্তিশালী প্লাটফর্ম, GLAAD (Gay & Lesbian Alliance Against Defamation) ডেফিনেশন অনুযায়ী, তিনভাবে ট্রান্সজিশন বা রূপান্তর হতে পারে-
সামাজিক রূপান্তর- নামের পরিবর্তন, নতুন সম্বোধন (pronouns, e.g they, hir), বেশভূষা পরিবর্তন, মেকাপ শুরু করা
বা বাদ দেয়া (e.g nail polish), মেয়েদের অলংকার পরিধান শুরু করা বা বাদ দেয়- ইত্যাদির মাধ্যমে পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, কলিগদের শুধু জানানোর মাধ্যমে ট্রান্সজেন্ডার হওয়া যায়।
আইনগত রূপান্তর- জন্ম সনদে সেক্স আইডেন্টিটি পরিবর্তন করে জেন্ডার আইডেন্টিটি গ্রহন,
ন্যাশনাল আইডিকার্ড পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, সোস্যাল সিকিউরিটি রেকর্ড, ব্যাংক একাউন্টে নাম পরিবর্তন করা
মেডিকেল রূপান্তর- অত্যন্ত ব্যয়বহুল হরমোন ট্রিটমেন্ট এবং বিভিন্ন ধরনের সার্জারি করে অবয়ব পরিবর্তন করা হয়।
কিন্তু আমেরিকা এবং ব্রিটেনের ডাটা অনুযায়ী কমপক্ষে ৯৭% ক্ষেত্রে ট্রান্সজেন্ডারদের যৌনাঙ্গ (পেনিস বা যোনী) অক্ষত থাকে,
যদিও তাদের শরীরের উপরে অংশ (মুখাবয়ব, স্তন, শারীরিক কমনীয়তা ইত্যাদি)।
হিজড়ারা ট্রান্সজেন্ডার নয়- দেশের প্রধান মিডিয়াগুলোসহ বিশ্বমিডিয়া হিজড়দের ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে প্রচার করা হয়।
এমন কি এমন শিরোনামও করা হচ্ছে ‘বাংলাদেশে প্রথম ট্রান্সজেন্ডার মুসলিম মাদ্রাসা’,
বাংলাদেশের প্রথম রূপান্তরকামী সংবাদপাঠিকা’- মিসলিডিং বা ভুল পথে পরিচালিত করতে পারে।
হিজড়া একটি জন্মগত জেনেটিক সমস্যা বা ডিসঅর্ডার। সম্প্রতি ভারতের হিজড়া গোষ্ঠীর প্রেসিডেন্ট
নিজেদের ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে সংগায়িত করার জন্য প্রতিবাদ জানিয়েছে
(The terms ‘Transgender’ and Hijra are not the same’ says Joya Sikder)।
আমেরিকার বিখ্যাত গণমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টও এই বিষয়টা আলোকপাত করেছে যে হিজাড়া এবং ট্রান্সজেন্ডার এক নয়
(Why terms like ‘transgender’ don’t work for India’s ‘third-gender’ communities)।
অন্যদিকে এলজিবিটি বা ট্রান্সজেন্ডারকে কোন অসুস্থতা, ডিসওয়ার্ডার বা কোনো মানসিক সমস্যা হিসেবে গণ্য করা হয় না।
ট্রান্সজেন্ডার এর বাংলা অভিধানিক শব্দ হিজড়া লেখা হচ্ছে, আবার রূপান্তরকামীও বলা হচ্ছে যা মিসলিডিং।
দেশে ট্রান্সজেন্ডার সামাজিকীকরণে হবে ভয়াবহ বিপর্যয় :
ট্রান্সজেডার নিয়ে অনেকের কাছে মনে হতে পারে, এতে সমস্যা কী,
সবাই তো আর এক রকম হয় না। ওদের সংখ্যাই বা আর কত। তারা তো আমাদের কোনো সমস্যা করছে না। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন।
পশ্চিমা দেশগুলোতে এই মতাদর্শ পলিসি বাস্তবায়নের ফলে বিভিন্ন সামাজিক,
স্বাস্থ্য এবং আইনগত সমস্যা গত কয়েক বছরে অনুধাবন করা যাচ্ছে।
এটি হাজার হাজার বছরের প্রতিষ্ঠিত লিঙ্গভিত্তিক সিস্টেমকে ওলোট-পালট করে দিচ্ছে, তৈরি হচ্ছে নানা বিতর্ক।
এক যুগ কম সময়ের মধ্যেই শিশু-কিশোরদের মাঝে ট্রান্সজেন্ডার আইডেন্টিটি নেওয়ার হার ব্যাপকভাবে বেড়ে যাচ্ছে।
আমেরিকায় ২০১০ তুলনায় জেন্ডার ডিস্ফোরিয়া (যারা নিজেদের ভুল দেহে আটকা পড়েছে বলে মনে করে) ইস্যুতে (এটা মানসিক সমস্যা মনে করা হয়না)
ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসা শিশু-কিশোরদের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৫০০০%,
আরো পড়ুনঃ হিজড়াদের জানাযার নামাজের বিধান!,