কু- দৃষ্টির ক্ষতি ও পরিমাণ
✿✿ কুদৃষ্টির দ্বারা স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যায়
হযরত মাওলানা খলীল আহমাদ সাহারানপুরী রহ. বলতেন, পরনারী এবং নাবালেগ শিশুদের কামভাবের সাথে দেখার ফলে স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যায়। এ দাবির স্বপক্ষে এই প্রমাণই যথেষ্ট যে, কুদৃষ্টিতে অভ্যস্ত হাফেযদের কুরআন মুখস্থ থাকে না। আর যারা কুরআন হিফজ করছে তাদের দৈনন্দিন সবক আয়ত্ত করা মুশকিল হয়ে পড়ে। ইমাম শাফেয়ী রাহিমাহুল্লাহ তাঁর উস্তাদ ইমাম ওকী রহ.-কে স্মৃতিশক্তি দুর্বলতার অভিযোগ করলে তিনি তাকে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার উপদেশ দেন। ইমাম শাফেয়ী রাহিমাহুল্লাহ উস্তাদের তার সাথে সেই কথোপকথনকে কবিতাকারে বর্ণনা করেছেন:
شَكَوْتُ إِلَى وَكِيعٍ سُوءَ حِفْظِي
فَأَرْشَدَنِي إِلَى تَرْكِ الْمَعاصِي
وَأَخْبَرَنِي بِأَنَّ الْعِلْمَ نُورٌ
وَنُورُ اللهِ لَا يُهْدَى لِعَاصِي
“উস্তাদ ওয়াকীর দরবারে শুধালাম পেয়েছে ভুলোমন ব্যাধি
শুধালেন তিনি, ছেড়ে দাও গুনাহ, মেনে নাও রবের বিধি।
মনে রেখো বাছা, দ্বীনের এ ইলম রবের বিশেষ নূর,
পাপী তাপী তাতে ঋদ্ধ হবে, সে আশা বহুদূর।”
মাদরাসা ও কলেজ ইউনিভার্সিটির ছাত্রছাত্রীদের জন্য এতে বড় শিক্ষা রয়েছে।
✿✿ কুদৃষ্টি লাঞ্ছনা ও অপদস্থতার কারণ
শায়খ ওয়াসেতী রাহিমাহুল্লাহ বলতেন, আল্লাহ তাআলা যখন কাউকে অপদস্থ ও লাঞ্ছিত করতে চান তখন তাকে চেহারার সৌন্দর্যে অবৈধ দৃষ্টি দেয়ায় অভ্যস্ত করে দেন। এ থেকে বোঝা যায় যে, কুদৃষ্টি লাঞ্ছনা ও অপদস্থতার মৌলিক কারণ।
যে সকল সৌভাগ্যবান লোকেরা নিজেদের দৃষ্টিকে সংযত রাখতে সক্ষম হয়, তারা বড় ধরনের বিপদ-আপদ থেকে বেঁচে যায়।
মীর তাকী মীর বলেন:
اس عاشقی میں عزت سادات بھی گئی
এই উন্মাদনায় সম্মান, বংশীয় মর্যাদা সবই গেল।
মীর্যা গালিব এক কবিতায় বলেন:
عشق نی غالب نکما کر دیا … ورنہ ہم بھی آدمی تھے کام کی
‘প্রেমাসক্তি অপদার্থ করে দিয়েছে গালিবকে
নইলে কাজের লোক ছিলাম আমরাও সব দিক থেকে।’
✿✿ কুদৃষ্টির প্রভাবে বরকত নষ্ট হয়ে যায়
কুদৃষ্টির কুফলগুলোর মধ্যে এটিও একটি যে, কুদৃষ্টির কারণে মানুষের রিযিক এবং সময় থেকে বরকত উঠিয়ে নেয়া হয়। ছোট ছোট কাজ বিশদাকার ধারণ করে। যে কাজের চেষ্টাই করুক তা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। বাহ্যিকভাবে মনে হয় কাজ হয়ে যাবে। কিন্তু যথাসময়ে গিয়ে হতে হতে কাজ অসম্পন্ন থেকে যায়। এতে দুশ্চিন্তা ও পেরেশানী বাড়ে। মানুষেরা মনে করে, কেউ হয়তো (জাদুটাদু) কিছু করেছে। আসলে সে স্বীয় প্রবৃত্তির কুকর্মের কারণে বিপদে পড়ে গেছে। সে নিজেই তা স্বীকার করে বলে, ‘একটা সময় ছিল যখন স্পর্শ করলে মাটিও সোনায় পরিণত হতো। আর এখন তো সোনা স্পর্শ করলেও তা মাটি হয়ে যাচ্ছে।’ বোঝা গেল, কুদৃষ্টির প্রভাবে মানুষের জীবন থেকে বরকত উঠিয়ে নেয়া হয়।
✿✿ কুদৃষ্টি দেয় এমন ব্যক্তির ব্যাপারে শয়তানের বড় আশা
এক বুযুর্গের শয়তানের সাথে কথা হলে তিনি অভিশপ্ত শয়তানকে জিজ্ঞাসা করলেন, এমন ক্ষতিকর কোনো আমলের কথা বলো যার কারণে মানুষ সহজেই তোমার ফাঁদে ফেঁসে যায়। বিতাড়িত শয়তান উত্তর দিল, পরনারীর প্রতি কামনার দৃষ্টিতে দেখা এমন যে, আমি ওই ব্যক্তির ব্যাপারে বড়ই আশাবাদী, কখনো না কখনো তাকে আমি গুনাহে লিপ্ত করে আমার জালে বন্দী করেই নেব। যারা দৃষ্টি নত রাখে আমার অনেক আক্রমণই তাদের ওপর কার্যকরী হতে পারে না। আমি চতুর্দিক থেকে মানুষকে বিপথগামী করার কসম খেয়েছি। কিন্তু নিচের দিকটি নিরাপদ। যে দৃষ্টি অবনত রাখে সে আমাকে নিরাশ করে দেয়।
✿✿ কুদৃষ্টির ফলে নেকীর বরবাদি ও গুনাহ অবশ্যম্ভাবী
পরনারীর প্রতি লালসার দৃষ্টি দানকারী ব্যক্তি দ্রুত হোক বা দেরিতে, সাধারণত সে প্রেমরোগে আক্রান্ত হয়েই যায়। সে সৃষ্টিকে নিজের প্রেমাস্পদ বানিয়ে নেয়। কোনো ব্যক্তি বলেছেন-
تو میرا دین ایمان سجنا
‘ওগো প্রেয়সী আমার জান! তুমিই আমার দ্বীন, ধর্ম, তুমিই আমার ঈমান।’
একে ছোট শিরক বলা হয়। শিরক এমন গুনাহ যা কৃত আমল ধ্বংসের কারণ হয়। আর একেই বলে ‘নেকীর বরবাদি গুনাহ অবশ্যম্ভাবী