(মুসলিম বিডি২৪.কম)
بسم الله الرحمن الرحيم
বিবাহে প্রচলিত ভুল ধারাবাহিকভাবে দেয়া হলো
বিবাহ-শাদী মানব জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় যা মহান আল্লাহ তা‘য়ালা তার বান্দাদেরকে বিশেষ নে‘আমত হিসেবে দান করেছেন।
বাহ্যিক দৃষ্টিতে বিবাহ-শাদী দুনিয়াবীর কাজ বা মুবাহ মনে হলেও যথা নিয়মে সুন্নাত তরীকায় যদি তার সম্পাদন করা হয়।
তাহলে সেটা বরকতপূর্ণ ইবাদত ও অনেক সওয়াবের কাজ হয়ে, এর মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রী মধ্যকার দাম্পত্য জীবন সুখময় হয়।
কিন্তু বর্তমান সমাজে বিবাহ-শাদী সুন্নাত তরীকায় তো হয়ই না। ওপরন্তু এটা বিভিন্ন ধরনের কুপ্রথা এবং বড় বড় অনেক গুনাহ'র কারণ হয়ে দাড়িয়েছে।
ফলে পারিবারিক জীবনে অশান্তির ঝড় বয়ে চলছে। এজন্য নিম্নে বিবাহ-শাদী সাম্পর্কিত কিছু ভুল এবং কুপ্রথা তুলে ধরা হল।
যাতে এগুলো থেকে বাঁচা সহজ হয়ে।
বিয়ের পূর্বের ভুল সমূহ
১. বিয়ে শাদী যেহেতু ইবাদত, সুতরাং এখানে দীনদারীকে প্রাধান্য দিতে হবে।
দুনিয়াদারগণ সৌন্দর্য, মাল দৌলত ও খান্দানকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। এটা রাসুলের সুন্নাতের বিপরীত হওয়ায় শান্তি বয়ে আনে না।
২. কোনো কোনো জায়গায় অভিভাবক এবং সাক্ষী ছাড়া শুধু বছর কনের পরস্পরে সন্তুষ্টিতেই বিয়ের প্রচলন আছে অথচ এভাবে বিয়ে বিশুদ্ধ হয়ে না।
বরং এটা যিনা-ব্যভিচার বলে গণ্য হবে সাক্ষী থাকা সত্ত্বেও যদি মেয়ে পক্ষের অভিভাবকের সম্মতি না থাকে।
আর ছেলে সে মেয়ের ‘কুফু' তথা দীনদারী মাদারী ও পেশাগত দিক থেকে সামঞ্জস্যশীল না হয়ে তাহলে সে বিয়ে শুদ্ধ হয়ে না।
৩. কেউ কেউ ধারণা করে যে, মাসিক চলাকালীন বিয়ে শুদ্ধ হয় না অথচ এ অবস্থায় বিয়ে শুদ্ধ হয়ে যায় অবশ্য এ অবস্থায় সহবাস জায়েয নেই।
৪. কেউ কেউ ধারণা করে যে মুরিরদনীর সাথে পীর সাহেবের বিয়ে জায়েয নেই।
অথচ রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীগণ সকলেই তার মুরিদ ছিলেন।
৫. অনেক অনেক বয়স হওয়ার পরও বিয়ে করে না কিংবা প্রথম স্ত্রীকে তালাক
দেয়ার পর বা মৃত্যুবরণ করার পর,আর ২য় বিয়ে করে না অথচ শারীরিক বিবেচনায়।
তার বিয়ে করা জরুরী ছিলো এ অবস্থায় থাকা মানে যিনা- ব্যভিচারের রাস্তা খোলে দেয়া।
৬. অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় ( উদাহারণ স্বরুপ) ৬০ বছরের বয়স্ক লোক অল্প বয়সী।
যুবতী মেয়েকে বিয়ে করে বসে ফলে ঐ মেয়ে নিশ্চিত জুলুমের শিকার হয়।
৭. অনেকে স্ত্রীর খেদমতেে অক্ষম হওয়া সত্ত্বেও দুর্বলতা লুকিয়ে লোক দেখানোর জন্য বিয়ে করে স্ত্রীর জীবনকে নষ্ট করে দেয়।
এ মারাত্বক গুনাহের কাজ।
৮. কোনো কোনো আধুনিক শিক্ষিত লোক আধুনিক শিক্ষা তথা ডাক্তারি প্রফেসারি ইত্যাদি।
ডিগ্রি দেখে মেয়ে বিয়ে করে। তাদের জন্য ভাবা উচিত বিয়ের দ্বারা উদ্দেশ্য কি?
যদি তার স্ত্রীর দ্বারা টাকা কামানো উদ্দেশ্য হয়।তাহলে এটা তো বড় লজ্জাজনক কথা যে
পুরুষ হয়ে মহিলাদের কামাইয়ের আশায় বসে থাকবে মনে রাখতে হবে এ ধরনের পরিবারে শান্তি আসে না।
৯. কেউ কেউ পালক পুত্রের তালাক দেয়া স্ত্রীকরে বিয়ে করাকে নাজায়েয মনে করে এটা জাহিলী যুগের বদরসম।
১০. কেউ কেউ বিধবা মহিলাদের বিয়ে করাকে অপছন্দ করে। অথচ রাসুলুল্লাহ সাল্লাহুআ আলাইহি ওয়াসাল্লামের অধিকাংশ স্ত্রী বিধবা ছিলেন।
বুখারী হাদিস-৫০৭৭
বিয়ের সময়ের ভুল সমূহ
বরপক্ষের ভুল সমূহ
১. বিয়ে-শাদী যেহেতু ইবাদত তাই বিয়েকরে কেন্দ্র করে কোনো প্রকার গুনাহ না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হব।
তাহলে খায়ের বরকত লাভ হবে যদি বিয়েকে গুনাহ মুক্ত করা না যায় তাহলে সেখানে অশান্তি হওয়া নিশ্চিত।
২. প্রথাগতভাবে অনেক লোকের বর যাত্রী হিসেবে যাওয়া।
৩. দাওয়াতকৃত সংখ্যার অধিক লোক নিয়ে যাওয়া।
৪. লোক দেখানোর উদ্দেশ্য কন্যার জন্য যৌতুক পাঠানো এবং এটাকে জরুরি মনে করা।
৫. গায়ের মাহ রম পুরুষ দ্বারা মেয়ের ইযিন বা অনুমতি আনা।
৬. বেগানা পুরুষদের কন্যার মুখ দেখা এবং দেখানো।
৭. নাচ গান, বাজনা ইত্যাদি করা।
৮. সালামী গ্রহণ করা।
৯. মহরানা সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পূর্বেই না করা, বরং করাকে দোষ মনে করা অতঃপর বিয়ের সময় তর্ক-বিতর্ক করা।
১০. লোক দেখানোর জন্য বা গর্বের সাথে অলীমা করা।
১১. মহরানার বিষয়ে গুরুত্ব না দেয়া এবং মহরানা আদায়ে গাফলাতী করা।
১২. ইচ্ছাকৃত এমন কর্মকাণ্ড করা যে কারণে কোনো পক্ষের অদূরদর্শীতা প্রমাণিত হয় অথবা তাদের অস্থিরতার কারণ হয় আর নিজেদের সুনাম প্রকাশ পায়।
১৩. বিয়ে অনুষ্ঠানের কারণে ফরজ ওয়াজিবসহ শরীয়তের বিধানের ব্যাপারে উদাসীনতা এবং অনীহা প্রকাশ করা।
কন্যাপক্ষের ভুল সমূহ
১. বর যাত্রার চাহিদা।
২. ছেলের জন্য উপঢৌকন/যৌতুক প্রকাশ্যে পাঠানো, পাঠানোকরে পছন্দ করা এবং জরুরি মনে করা।
৩. আত্মীয়-স্বজন মহল্লাবাসীদের জন্য প্রথাগত দাওয়াত এবং খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা।
৪. বিয়ের সরঞ্জাম, অলংকারাদি প্রকাশ্যে দেখা এবং অন্যদেরকে দেখানো।
৫. বিয়ের পর জামাতাকে শরবত পান করানো।
৬. বেগানা মহিলারা জামাতার সামনে আসা।
৭. সালামী গ্রহণ করা এটাকে জরুরি মনে করা এবং নেয়া দেয়া।
৮. যাতে মহল্লায় খুব প্রসিদ্ধ হয়ে সে জন্য ইচ্ছাকৃত কোনো কিছু করা।
৯. ফরয-ওয়াজিব ইত্যাদি বিষয়ে উদাসীন হওয়া। এছাড়াও বিয়ে উপলক্ষে অনেক বেপর্দা, যুবক -যুবতীদের অবাধ মেলা-মেশা,
অপব্যয় ছবি তোলা এবং ভিডিও ইত্যাদি করা হয় যাতে বিয়ের সকল খায়ের বরকত নষ্ট হয়ে যায়।
বিয়ের কিছু কুপ্রথা
১. মেয়ের ইযিন আনার জন্য ছেলেপক্ষ সাক্ষী পাঠিয়ে থাকে শরীয়তের দৃষ্টিতে এটার কোনো প্রয়োজন নেই।
২. বিয়ের সময় অনেকে বর-কনের দ্বারা তিনবার করে ইজাব কবূল পাঠ করিয়ে থাকে এবং পরে তাদের দ্বারা আমীন বলানো হয় শরীয়তে এর কোনো ভিত্তি নেই।
৩. ইজাব – কবূলের মাধ্যমে আকদ সম্পাদন হওয়ার পর মজলিসে উপস্থিত সকলকে লক্ষ্য করে,
সামনে দাঁড়িহয়ে হাত উঠিয়ে বছর যে সালাম করে থাকে তার ও কোনো ভিত্তি শরীয়তে নেই।