Home / জরুরী মাসাইল / ইতিকাফ কাকে বলে ও ইতিকাফের বিস্তারিত আলোচনা

ইতিকাফ কাকে বলে ও ইতিকাফের বিস্তারিত আলোচনা

(মুসলিমবিডি২৪ ডটকম)

ইতিকাফ কাকে বলে ও ইতিকাফের বিস্তারিত আলোচনা

মসজিদে ইতিকাফ (তথা সওয়াবের নিয়তে মসজিদে অবস্থান) করা একটি ইবাদত।  তবে জামে মসজিদে ইতিকাফ করা সর্বোত্তম।

কেউ ইতিকাফ করার মান্নত করলে তা ওয়াজিব হয়ে যায়। সওয়াবের নিয়তে মসজিদে অবস্থান করাকে শরীয়তের পরিভাষায় ইতিকাফ বলা হয়।

ইমাম আবু হানীফা (রহ.)-এর মতে ইতিকাফের সর্বনিম্ন সময়সীমা এক দিন। ইমাম আবু ইউসুফ (রহ.)-এর মতে একদিনের অর্ধেকের বেশী সময়।

ইমাম মুহাম্মদ (রহ.)-এর মতে মাত্র এক ঘণ্টা।

রমজানের শেষ দিন ইতিকাফ করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা (কিফায়া) এবং ইতিকাফের সময় রোজা রাখা ওয়াজিব।

নফল ইতিকাফের ক্ষেত্রেও কোন কোন বর্ণনা অনুসারে রোজা রাখা শর্ত।

মহিলাগণ নিজ ঘরের মসজিদে (ঘরের যে স্থানে অধিকাংশ সময় বা সর্বদা নামাজ আদায় করে) ইতিকাফ করবে।

ইতিকাফের জন্য কেমন মসজিদ হওয়া শর্ত?

ইমাম আযম আবু হানীফা (রহ.)-এর মতে ইতিকাফ সহীহ হওয়ার জন্য এমন মসজিদ হওয়া শর্ত যেখানে পাঞ্জেগানা নামাজ জামায়াতে পড়া হয়।

সাহেবাইন (ইমাম মুহাম্মদ ও ইমাম আবু ইউসুফ) (রহ.)-এর মতে প্রত্যেক মসজিদেই ইতিকাফ সহীহ। সর্বোৎকৃষ্ট ইতিকাফ হলো যা মসজিদে হারামে করা হয়।

অত:পর মসজীদে নববী, অত:পর বায়তুল মুকাদ্দাস, অত:পর জামে মসজি, অত:পর যে মসজিদে মুসল্লি অধিক হয়।

মহিলারা কোথায় ইতিকাফ করবে?

মহিলারা কোথায় ইতিকাফ করবে

মহিলারা বাড়ির ভিতরের মসজিদে (অর্থাৎ ঘরের যে স্থানে তারা অধিকাংশ সময় নামাজ আদায় করে) ইতিকাফ করবে।

মসজিদ না থাকলে ঘরের কোন জায়গা নামাজের জন্য নির্ধারিত করে সেখানে ইতিকাফ করবে। সেখান থেকে মহলারা মানবীয় চাহিদা ছাড়া বের হবে না।

মহিলারা যদি এমন মসজিদ ইতিকাফ করে যেখানে জামায়াত হয়, তাহলে জায়েজ হবে। কিন্তু এরূপ জায়গায় ইতিকাফ করা মাকরূহ।

ইতিকাফকারী মসজিদ থেকে বের হতে পারবে কি?

ইতিকাফকারী মসজিদ থেকে বের হতে পারবে না তবে পেশাব পায়খানার প্রয়োজন হলে অথবা জুমুয়ার নামাজ,

আদায়ের উদ্দেশ্যে এতটুকু সময় হাতে রেখে বের হতে পারবে যাতে  সুন্নতসহ জুমুয়া আদায় করা সম্ভব হয়।

এর চেয়ে অধিক সময় জামে মসজিদে অপেক্ষা করা ঠিক নয়। তবে দেরী করলেও ইতিকাফ নষ্ট হবে না।

ইতিকাফকারী ব্যক্তি মসজিদ হতে কতটুকু দূরে যেতে পারবে?

ইতিকাফকারীর বাড়ি থেকে খানা পৌছে দেয়ার কোন লোক নেই, তার জন্য নিজে বাড়ি গিয়ে খানা আনার অনুমতি আছে।

মুয়াজ্জিনের জন্য মিনার পর্যন্ত যাওয়া শরয়ী প্রয়োজনের অন্তর্ভুক্ত।

কোন কোন ফিকাহবিদের মতে মুয়াজ্জিন না হলেও মুতাকিফ(ইতিকাফকারী) আজানের জন্য বের হতে পারে।

যদি মুতাকিফের দুটি বাড়ি থাকে, একটি নিকটে অপরটি দূরে, এমতাবস্থায় পেশাব পায়খানার প্রয়োজনে দূরের বাড়িতে গেলে ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে।

ইতিকাফকারী বিনা ওজরে কত সময়ের জন্য বাইরে যেতে পারবে?

ইতিকাফকারী বিনা ওজরে এক মুহূর্তের জন্যও মসজিদ থেকে বের হলে ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে।

তবে সাহেবাইনের মতে অর্ধদিন অপেক্ষা অধিক সময় মসজিদের বাইরে না কাটালে ইতিকাফ নষ্ট হবে না।

আর ইতিকাফকারীর জন্য মসজিদে খানা-পিনা, ঘুমানো এবং (ক্রয়-বিক্রয়ের) মালামাল মসজিদে উপস্থিত না করে ক্রয়-বিক্রয় করা জায়েজ।

মসজিদে উক্ত কাজগুলো সম্পন্ন করা ইতিকাফকারী ব্যতীত অন্য কারো জন্য জায়েজ নেই।

মাসআলা:

ইতিকাফকারীর জন্য সহবাস করা এবং সহবাসের প্রতি উদ্ধুদ্ধকারী কোন আচরণ করা হারাম।

সহবাসের কারণে ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যায়। যদিও তা রাত্রে হয়। রাত্রে হোক বা দিনে হোক, জেনে বুঝে হোক বা ভুলবশত: হোক সর্বাবস্থায়ই ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে।

স্পর্শ বা চুম্বন দ্বারা যদি বীর্যপাত ঘটে তাহলে ইতিকাফ নষ্ট হবে; অন্যথায় নয়। ইতিকাফ অবস্থায় একেবারে নিশ্চুপ থাকা মাকরূহ।

তাই কোরআন তিলাওয়াত ও অন্যান্য নফল ইবাদতে মশগুল থাকা চাই। অনর্থক কথাবার্তা বলা আরো খারাপ। তাই ভাল কথা বলবে।

যদি কেউ কয়েকদিনের ইতিকাফ করার নিয়ত করে তাহলে তার হুকুম কি?

যদি কেউ কয়েকদিনের ইতিকাফ করার নিয়ত করে, তাহলে উক্ত দিনগুলোর সঙ্গে রাত্রে ইতিকাফ করা জরুরী।

অনুরূপভাবে দুইদিনের ইতিকাফের মান্নত করলে তার সঙ্গে দুই রাতও ইতিকাফ করতে হবে।

ইমাম আবু ইউসুফ (রহ.)-এর মতে দুইদিনের মধ্যবর্তী মাত্র এক রাত্রির ইতিকাফ আবশ্যক হবে।

কোন ব্যক্তি যদি এক মাস ইতিকাফ করার মান্নত করে, তাহলে তার উপর একটানা এক মাস ইতিকাফ করা জরুরী।

যদিও মুখে লাগাতার (ধারাবাহিকভাবে) শব্দ উচ্চারণ না করে থাকে।

মাসআলা:

ইতিকাফ শুরু করলেই তা জরুরী হয়ে যায়। তবে ইমাম মুহাম্মদ (রহ.)-এর মতে জরুরী হয় না।

নফল ইতিকাফ ছেড়ে দিলে তার হুকুম কি?

নফল ইতিকাফ শুরু করে পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই ছেড়ে দিলে ক্বাযা করা ওয়াজিব। ইমাম মুহাম্মদ (রহ.)-এর মতে এক মিনিটও ইতিকাফ হতে পারে।

এজন্যই ইতিকাফ শুরু করে ছেড়ে দিলে তা নষ্ট হয়ে যাবে, তবে ক্বাযা জরুরী হবে না এটাই উলামায়ে কেরামের সুস্পষ্ট অভিমত।

ক্বাযা ওয়াজিব হওয়ার কথা যারা বলেন তাদের এ বক্তব্য খুবই দুর্বল।

(সূত্র: মালাবুদ্দা মিনহু-১৩২, ১৩৩)

About Admin

আমার নাম: এইচ.এম.জামাদিউল ইসলাম ঠিকানা: সিলেট, বাংলাদেশ। আমি কোরাআনের খেদমতে আছি এবং MuslimBD24.Com সাইটের ডিজাইনার (Editor) প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও সম্পাদক এর দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। অনলাইন সম্পর্কে মোটামুটি জ্ঞান থাকায়, তাই সময় পেলে দ্বীন ইসলাম প্রচারের সার্থে দ্বীন ইসলাম নিয়ে কিছু লেখালেখি করি। যাতে করে অনলাইনেও ইসলামিক জ্ঞান সম্পর্কে জ্ঞানহীন মানুষ, ইসলামিক জ্ঞান সহজে অর্জন করতে পারে। একজন মানুষ জন্মের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নিজের জীবনকে ইসলামের পথে চালাতে গেলে ইসলাম সম্পর্কে যে জ্ঞান অর্জন করার দরকার, ইনশা-আল্লাহ! এই ওয়েব সাইটে মোটামুটি সেই জ্ঞান অর্জন করতে পারবে। যদি সব সময় সাইটের সাথে থাকে। আর এই সাইটটি হল একটি ইসলামিক ওয়েব সাইট । এ সাইটে শুধু দ্বীন ইসলাম নিয়ে লেখালেখি হবে। আল্লাহ তায়ালার কাছে এই কামনা করি যে, আমরা সবাইকে বেশী বেশী করে ইসলামিক জ্ঞান শিখার ও শিখানোর তাওফিক দান করুন, আমিন। তাজবীদ বিষয়ে কিছু বুঝতে চাইলে যোগাযোগঃ 01741696909

Check Also

ফজরের সুন্নত পড়ার সময়সীমা

Muslimbd24.com ফজরের সুন্নত নামাজ কতক্ষণ পর্যন্ত পড়া যাবে? এর উত্তরে বলা হয়: জামাত শুরু হয়ে …

Powered by

Hosted By ShareWebHost