মুসলিমবিডি২৪ডটকম
মা বাইনাল ইফরাত ওয়াত তাফরীত জামেউল উলুম মুফতী আবুল কালাম যাকারিয়া -রাহিমাহুল্লাহ
লাইলাতুল বারাআত বা মুক্তিরজনী! নিঃসন্দেহে এটি একটি ফযিলতপূর্ণ রাত,
তবে বিশুদ্ধ মতানুযায়ী এ রাতের কোন ফযিলতের কথা কুরআনে কারীমে উল্লেখ নাই।
অবশ্য বিভিন্ন সাহাবি থেকে এ রাতের ফযিলত সম্পর্কিত অনেক হাদিস বর্ণিত আছে।
তন্মধ্যে হযরত আয়েশা, আলী, আবু মুসা আশআরী, মুয়ায বিন জাবাল, আবু বারযাহ রাঃ এর হাদিস সবিশেষ উল্লেখযোগ্য।
তবে জুমহুর মুহাদ্দিসীনের অভিমত হলো, কেবল মুয়ায রাঃ'র হাদিস ছাড়া বাকি সবগুলো হাদিসই যইফ বা দুর্বল সূত্রে বর্ণিত! মুয়ায রাঃ'র হাদিসের সারমর্ম এই,
লাইলাতুন নিসফ মিন শাবানে (অর্থাৎ শবে বরাতে) আল্লাহ তায়ালা জমিনে ঘোষনা করে দেন
আজ রাতে দুই শ্রেণি মানুষ ব্যতীত বাকি সবাইকে ক্ষমা করে দেয়া হবে ১. মুশরিক ২.হিংসুক
আরো পড়ুনঃ শবে বরাতেও আল্লাহ তাআলা যাদেরকে ক্ষমা করবেন না
এই হাদিসটি মুহাদ্দিসীনদের পরিভাষায় সজহিহ (হাসান)এমনকি নিকট অতিতের আরব বিশ্বের মান্যবর আলেম
নাসিরুদ্দিন আলবানি সাহেবও হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন।
উপমহাদেশের প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ আব্দুর রহমান মুবারকপুরি রহঃ বলেন লাইলাতু বারাআতের সবগুলো হাদিস একত্র করলে বুঝে আসে,
এ রাতের বিশেষ ফযিলতের অস্তিত্ব হাদিস দ্বারা প্রমাণিত!
এ রাতের করণীয়ঃ
নির্জনে (ঘরে বসে ) নামাজ, তেলাওয়াত ও জিকির আজকার তাওবা ইস্তিগফার করলে এ রাতের বিশেষ ফযিলত অর্জিত হওয়ার আশাকরা যায়!
আরো পড়ুনঃ শবে বরাতের গুরুত্ব, ফজিলত ও আমল
এ রাতের বর্জণীয়ঃ
১. জামাতবদ্ধ হয়ে মসজিদে জিকির আজকার, দোআ দরুদপাঠ।
কারণ; এতে ইবাদতের মানসিকতা থাকেনা বরং একটা রুসম বা রেওয়াজ পালন করা হয়,যা অনেক ক্ষেত্রে বিদাতে পরিণত হয়ে যায়।
২. মাইক ছেড়ে ওয়াজ নসিহত, শবিনাখতম, ইত্যাদি। কারণ; এতে ইবাদত, অসুস্থ মানুষের বিশ্রাম,
কর্মব্যস্ত মানুষের কাজ ও লেখাপড়ায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়, মুসলমানদেরকে অযথা কষ্ট দেয়া হয়, যা শরীয়তের দৃষ্টিতে কোন ভাবেই বৈধ নয়।
৩. মাজারে মাজারে ঘুরে বেড়ানো, মাজার জিয়ারত করা।
৪. মোল্লা মুনশী ডেকে কবর যিয়ারত করানো কারণ; হাদিসে কবর জিয়ারত করার কথা বলা হয়েছে করানোর কথা কোথাও নেই।
তাছাড়া জিয়ারতের সাথে এই দিনেরতো কোন বিশেষত্ব নেই!
৫. শবে বরাতের রোযা বলতে গ্রহণযোগ্য কোন হাদিসে এমনকি ফেক্বহার কোন কিতাবেও কোন রোযার কথা উল্লেখ নেই!
হ্যা, আইয়ামে বিজের রোযা হিসেবে যদি কেউ রাখে তা ভিন্ন কথা।
আরো পড়ুনঃ শবে বরাতে কবর জিয়ারত
৬. শবেবরাতে মাগরিবের পর গোসলের মধ্যে কোন ফযিলত নেই কেউ ফযিলতের নিয়তে করলে তা বিদাত হবে,
তবে ইবাদতের জন্য প্রস্তুতি হিসাবে ওযূ, গোসল, খুশবু ব্যবহার করলে এতে আপত্তির কিছু নেই।
আর অনেকে লাইলাতুল বরাতের তরজমা করেন “ভাগ্যরজনী” যা মারাত্মক ভুল।
তাছাড়া ভাগ্য বা তাক্বদির মানুষের জন্মের আগেই আল্লাহ নির্ধারণ করে রেখেছেন এখন আর নতুন করে নির্ধারণের কিছু নেই।
তবে শবেক্বদরে তা নির্ধারিত ফিরিস্তার কাছে হস্তান্তর করা হয়।
আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে সঠিক পদ্ধতিতে আমল করে লাইলাতুল বারাতের ফযিলত হাসিল করার তাওফিক্ব দান করুন, আমিন!