কদমবুসি করা বা পা ছুঁয়ে সালাম করাকে সালাম বলা হয় না।
ইসলামে সালামের নির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে। কিন্তু গ্রামেগঞ্জে, এমনকি শহরেও সালামের পরিবর্তে কদমবুসি করতে দেখা যায় অনেককে।
আসলে এটি ইসলামি সংস্কৃতি নয়। ইসলামের দৃষ্টিতে সালাম বলতে যা বোঝানো হয় তা হলো: আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ বলা।
ইসলামে উত্তমভাবে সালাম ও সালামের উত্তর দেয়ার কথা রয়েছে। সাহাবায়ে কেরামরা রাসুল (সা.)-কে আসসালামু আলাইকুম বলেই সালাম দিয়েছেন।
সালাম সংক্রান্ত বিষয়ে একটি হাদিস পড়ুন
ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর নিকট এসে বলল, ‘আসসালামু আলাইকুম’।
রাসুলুল্লাহ (স.) তার সালামের উত্তর দিলে লোকটি বসল। তারপর রাসুল (স.) বললেন ‘দশ’।
তারপর অপর এক ব্যক্তি এসে বলল, ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ।’
রাসুল (স.) তার সালামের উত্তর দেয়ার পর লোকটি বসল। তার সম্পর্কে রাসুল (স.) বললেন ‘বিশ’।
তারপর অপর এক ব্যক্তি এসে বলল, ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু’,
রাসুল (স.) তার সালামের উত্তর দিয়ে বললেন ‘ত্রিশ’। (আবু দাউদ: ৫১৯৫; তিরমিজি: ২৬৮৯)
হাদিসে লক্ষণীয়, যত উত্তমভাবে সালাম দেয়া যায় তত বেশি সওয়াব। আবার উত্তমভাবে সালামের জবাব দিতেও বলা হয়েছে।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ পাক উত্তমভাবে সালামের জবাব দিতে নির্দেশ করেছেন।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যখন তোমাদের সালাম দেয়া হবে তখন তোমরা তার চেয়ে উত্তম সালাম দেবে।
অথবা জবাবে তাই দেবে। নিশ্চয় আল্লাহ সব বিষয়ে পূর্ণ হিসাবকারী।’ (সুরা নিসা: ৮৬)
হাদিসে বড়জোর মুসাফাহা-মুআনাকার কথা এসেছে, কিন্তু কদমবুসির কথা আসেনি।
আনাস (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল!
আমাদের মধ্যে কোনো ব্যক্তি যখন তার কোনো ভাই বা বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, তখন সে কি মাথা ঝুঁকাবে বা তাকে জড়িয়ে ধরবে বা চুমু খাবে?
তিনি বললেন, না। লোকটি বলল, তাহলে কি কেবল হাত ধরবে ও মুসাফাহা করবে?
রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, হ্যাঁ৷ (তিরমিজি: ২৭২৮; ইবনে মাজাহ: ৩৭০২; আহমদ: ১৩০৪৪)
রাসুলুল্লাহ (স.) মাথা ঝুঁকাতে নিষেধ করেছেন।
বাস্তবতা হচ্ছে, পা ছুঁয়ে ‘সালাম’ করার সময় সাধারণত মাথা ঝুঁকে যায়।
আর ‘রুকুর কাছাকাছি হয়ে সালামের জন্য ইশারা করা, ঝুঁকে পড়া এসব মাকরুহ।’ (সাকবুল আনহুর: ৪/২০৫)
আরেক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যখন দুজন মুসলিমের সাক্ষাৎ হয়,
তারপর তারা মুসাফাহা করে, তাহলে তারা পরস্পর আলাদা হওয়ার আগেই তাদের গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।
(মুসনাদে আহমদ: ১৮৫৪৭, ইবনে মাজাহ: ৩৭০৩, আবু দাউদ: ৫২১২, তিরমিজি: ২৭২৭)
হজরত আনাস বিন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের লক্ষ করে বললেন,
হে বৎস! তুমি গৃহে পরিবার-পরিজনের কাছে প্রবেশকালে সবাইকে সালাম করবে।
এতে তোমার এবং তোমার গৃহের সবার জন্য কল্যাণ হবে।’ (তিরমিজি: ২৬৯৮, আলমুজামুল আওসাত: ৫৯৯১)
উল্লিখিত সব কটি হাদিসই প্রমাণ করছে: কদমবুসি ইসলামি সংস্কৃতি নয়।
যদিও কেউ কেউ কদমবুসি বা পদচুম্বনকে সম্মানসূচক জায়েজ বলেছেন।
সাথে অবশ্য এ শর্তও দিয়েছেন যে, ‘যদি রুকু বা সেজদার সুরত হয়, তাহলে তা জায়েজ হবে না।
(আলমুজতাবা: ৪/২০৫, আলমুহিতুল বুরহানি: ৮/১১৮, ফতোয়ায়ে আলমগিরি: ৫/৩৬৯)
তবে মুহাক্কিকিনদের মতে তা জায়েজ নয়। কারণ বর্তমান প্রচলিত কদমবুসিতে রুকুর হালত এবং সেজদার হালত হওয়া স্পষ্ট।
সেইসঙ্গে এটি মুসলিম সংস্কৃতি নয়। তাই সালামের এই নতুন পদ্ধতি থেকে বিরত থাকতে হবে।
আরো পড়ুনঃ
কাদিয়ানীদের কে অমুসলিম ঘোষণা করা বাংলাদেশের পক্ষে কেন অসম্ভব