তাওবার বয়ান
━━ • ✿ • ━━
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, “হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট খাঁটিভাবে তাওবা কর”। [ সূত্র: সূরা তাহরীম, আয়াত-৭]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “গুনাহ থেকে তাওবাকারী এমন পবিত্র হয়ে যায় যে, যেন তার কোন গুনাহই নেই”। [সূত্র: ইবনে মাজাহ, পৃষ্ঠা-৩১৩]
খালিস তাওবা কাকে বলে?
জনৈক বুযুর্গ অতি সংক্ষেপে তাওবার ব্যাখ্যা এভাবে প্রদান করেছেন, “গুনাহের কারণে মনের ভিতর অনুতাপের আগুণ জ্বলাকেই তাওবা বলে”।
ইবনে মাসউদ রাযি. বলেন:, “অনুতপ্ত হওয়াই তাওবা”। [সূত্র: ইবনে মাজাহ, পৃষ্ঠা-৩১৩]
গীবত বা পরনিন্দা জঘন্যতম অপরাধ
খালিস তাওবার জন্য কয়েকটি শর্ত আছেঃ
০১। গুনাহের কাজ স্মরণ করে মনে মনে লজ্জিত হওয়া এবং মনের মধ্যে দুঃখ অনুভব করা।
০২। সঙ্গে সঙ্গে ঐ অন্যায় কাজ তরক করে দেয়া।
০৩। ভবিষ্যতের জন্য মনে মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা যে, আর কখনো এমন কাজ করব না এবং নফস যখন আবার সেই কাজ করার খায়েশ হয়,
তখন তাকে দমন করে রাখা। আর খোদার কাছে এমন কাকুতি-মিনতি করে মাফ চাওয়া,
যেমনিভাবে মাফ চেয়ে থাকে কোন চাকর যখন সে তার মালিকের নিকট অপরাধ করে ফেলে।
সে কাকুতি-মিনতি করে মালিকের হাত জড়িয়ে ধরে, একবারের জায়গায় দশবার করে মাফ চায়।
তাই খোদার কাছে অন্তত এতটুকু তো করা উচিত।
আর উক্ত ত্রুটির জন্য তাওবার সাথে সাথে শরী‘আতে বর্ণিত পদ্ধতিতে প্রতিকার শুরু করে দেয়া উচিত।
যেমন, নামায, রোযা, যাকাত ইত্যাদি আদায় না করে থাকলে, সেগুলো হিসেব করে আদায় করা উচিত।
কিন্তু সেগুলোর চূড়ান্ত হিসাব করা সম্ভব না হলে, মনের প্রবল ধারণার ভিত্তিতে হিসাব করে পিছনের সবগুলোর কাযা আদায় শুরু করে দেয়া কর্তব্য।
কাযা আদায় শেষ হওয়ার পূর্বে মৃত্যু এসে গেলে সেগুলো আদায় করার জন্য ওসীয়ত করে যাওয়া বাঞ্ছনীয়।
আল্লাহ না করুন, কারো থেকে কালিমায়ে কুফর বা শিরক প্রকাশ পেলে তার জন্য কালিমা পড়ে নতুনভাবে ঈমান আনতে হবেএবং বিবাহ দোহরাতে হবে।
কেউ যদি অন্যের অর্থ অবৈধভাবে নিয়ে থাকে, তাহলে সে অর্থ নিজের প্রবল ধারণার ভিত্তিতে যে পরিমাণ হয়,
তা মূল মালিককে পৌঁছে দিবে। মালিক না থাকলে, তার ওয়ারিসদেরকে পৌঁছৈ দিবে।
তাদেরকেও না পেলে মূল মালিককে সাওয়াব পৌঁছানোর নিয়তে গরীব মিসকীনদেরকে দান করে দিবে।
এসব বিষয় খালিস তাওবার জন্য একান্ত জরুরী। এরকম খালিস তাওবা করলে আল্লাহর ওয়াদা আছে যে,
নিশ্চয়ই তিনি তাওবা কবুল করে নিবেন এবং তাওবাকারীকে ক্ষমা করে মুহাব্বত করবেন।
তাওবা কবুলিয়াত সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেন,
اِنَّمَا التَّوْبَۃُ عَلَی اللهِ لِلَّذِیْنَ یَعْمَلُوْنَ السُّوْٓءَ بِجَهَالَۃٍ ثُمَّ یَتُوْبُوْنَ مِنْ قَرِیْبٍ فَاُولٰٓئِکَ یَتُوْبُ اللهُ عَلَیْهِمْ ؕ وَکَانَ اللهُ عَلِیْمًا حَکِیْمًا ﴿۱۷﴾
وَلَیْسَتِ التَّوْبَۃُ لِلَّذِیْنَ یَعْمَلُوْنَ السَّیِّاٰتِ ۚ حَتّٰۤی اِذَا حَضَرَ اَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ اِنِّیْ تُبْتُ الْـٰٔنَ وَلَا الَّذِیْنَ یَمُوْتُوْنَ وَهُمْ كُفَّارٌ ؕ اُولٰٓئِکَ اَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابًا اَلِیْمًا ﴿۱۸﴾
“অবশ্যই আল্লাহ তাদের তাওবা কবুল করবেন, যার ভুলবশত মন্দ কাজ করে অনতিবিলম্বে তাওবা করে।
এরাই হল সে সব লোক যাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী, সর্বজ্ঞ। আর এমন লোকদের জন্য কোন ক্ষমা নেই,
যার মন্দ কাজ করতেই থাকে, এমন কি যখন তাদের কারো মাথার উপর মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন বলতে থাকে: আমি এখন তাওবা করছি।
আর তাওবা নেই তাদের জন্য, যারা কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে।
আমি তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি”। [সূত্র: সূরা নিসা, আয়াত ১৭-১৮]
উৎসঃ কিতাবুল ঈমান | ইসলামী জিন্দেগী