(মুসলিম বিডি ২৪.কম)
بسم الله الرحمن الرحيم
কুরআনের ভাষায় যে মহিলা কথা বলতেন
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক (রহ.) বলেন– আমি একবার হজ্জের উদ্দেশ্য রওয়ানা হলাম পথে জনৈক বৃদ্ধা মহিলার সঙ্গে সাক্ষাৎ হল।
সে উলের জামা ও ওড়না পরিহিত অবস্থায় রাস্তার উপর বসে আছে আমি তাকে সালাম করলাম।
জবাবে বৃদ্ধা বললেন- سَلَامٌ قَوْلَاًمِّنْ رَّبِّ الرََّحِيْمَ
আমি জিজ্ঞেসা করলাম আল্লাহ তা‘য়াআলা তোমার উপর রহম করুন। তুমি এখানে কি করছো?
জবাবে বৃদ্ধা বললেন- وَمَنْ يُّضْلِلِ اللّٰهُ فَلَاهَادیَ لَهٗ
অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা যাকে পথ পাহারা করেন কেউ তাকে পথের দীশা দিতে পারে না।
আমার বুঝতে বাকি যে,সে পথ হারিয়ে ফেলেছে আমি তাকে জিজ্ঞেসা করলাম-তুমি কোথায় যাবে?
জবাবে বৃদ্ধা বললেন–سُبْحَانَ الَّذِيْ اَسْرٰی بِعَبْدِهٖ لَيْلًامِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ اِلٰی الْمَسْجِدِ الْاَقصیٰ
পবিত্র ও মহত্বপূর্ন সেই সত্ত্বা যিনি স্বীয় বান্দাকে মসজিদে হারাম হতে মসজিদে আকসাতে রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন।
আমি বুঝতে পারলাম যে, বৃদ্ধা হজ্জ সমাপন করেছে এখন সে বাইতুল মুকাদ্দাসের উদ্দেশ্য রওয়ানা হয়েছে।
আমি তাকে জিঙ্গাসা করলাম –বুড়ি মা! তুমি কতক্ষণ যাবৎ এখানে বসে আছো?
জবাবে বৃদ্ধা বললেন – ثَلَثَ لَيَالٍ َسوِيَّا লগাতার তিন রাত।
আপনার কাছে তো কোনো খাদ্য খাবার দেখছিনা আপনি কি খেয়ে থাকেন?
জবাবে বৃদ্ধা বললেন– هُوَ يُطْعِمْنِیْ وَيَسْقِيْنِ আল্লাহ তা‘আলাই আমাকে খাওয়ান এবং পান করান ।
আমি জিজ্ঞেসাা করলাম– আপনি অযু করেন কিভাবে? জবাবে বৃদ্ধা বললেন– فَتَيَمَّمُوْا صَعِيدًا طَيِّبًا পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম কর।
আমি বললাম- আমার নিকট কিছু খাবার আছে আপনি তার গ্রহণ করবেন?
জবাবে বৃদ্ধা বললেন-اَتِمُّوا الصِّيَامَ اِلَی الَّيْلِ তোমরা রোযাকে রাত্র পর্যন্ত পালন কর।
আমি বললাম- এখন তো রমজান মাস নয়। জবাবে বৃদ্ধা বললেন-وَمَنْ تَطَوَّعَ خَيْرًا فَاِنَّ اللّهَ شَاكِرٌعَلِيْمٌ
আর যে ব্যক্তি নফল রোযা রাখবে আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতিদান প্রদানকারী ও মহাজ্ঞানী।
আমি বললাম – সফরে থাকা অবস্থায় তো ফরয রোজাও ভঙ্গ করা যায়? জবাবে বৃদ্ধা বললেন- وَاَنْ تَصُوْمُوْا خَيْرٌ لَّكُم اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
যদি তোমরা বুঝে থাক, তবে রোযা রাখাটাই ভাল তোমাদের জন্য।
আমি জিজ্ঞেসা করলাম– আপনি আমার মতো স্বাভাবিক কথা বলেননা কেন? জবাবে বৃদ্ধা বললেন–مَا يَلْفِظُ مِنْ قَوْلٍ اِلّا لَدَيْهِ رَقِيْبٌ عَتِيْدٌ
মানুষের প্রতিটি কথা সংরক্ষণের জন্য তার নিকটই রয়েছে সংরক্ষণকারী প্রহরী।
আমি জিজ্ঞেসা করলাম – আপনি কোন গোত্রের ? জবাবে বৃদ্ধা বললেন– لَاتَقْفُ مَا لَيْسَلَكَ بِهٖ عِلْمٌ যে বিষয়েে তুমি অজ্ঞ সে বিষয়ের পেছনে পরবে না।
আমি বললাম ক্ষমা করে দিন ভুল হয়ে গেছে। জবাবে বৃদ্ধা বললেন– لَا تَثْرِيْبَ عَلَيْكُمُ الْيَوْمُ يَغْفِرُ اللّٰهُ لَكُم
আজ তোমার উপর আমার কোনো অভিযোগ নেই আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে ক্ষমা করুন।
আমি বললাম- আপনি ইচ্ছে করলে আমার উটে সওয়ার হতে পারেন। আমি আপনাকে আপনার হারানো কাফেলার নিকট পৌঁছে দেব।
জবাবে বৃদ্ধা বললেন -وَمَا تَفْعَلُوْا مِنْ خَيْرٍ يّعْلَمْهُ اللّٰه
তোমরা যে সকল ভাল কাজ করনা কেন, আল্লাহ তা‘আলা তা ভাল ভাবেই জানেন বৃদ্ধা মহিলার সম্মতি দেখে আমি তাকে উটে করালাম।
তবে তিনি আরোহন করার পূর্বে বললেন– قُلْ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ يَغُضُّوا مِنْ اَبْصارِهِمْ
আপনি মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন আপন দৃষ্টিকে সংযত রাখে আমি দৃষ্টিকে নিচু করে বললাম– আপনি উটে সওয়ার হোন।
কিন্তু বৃদ্ধা যখন সওয়ার হতে চাইলেন তখন আকস্মিক উট দাঁড়িয়ে পড়ল বৃদ্ধা উঠার চেষ্টা করলে তার জামা ছিড়ে গেল।
তিনি বললেন– وَمَا اَصَابَكُمْ مِنْ مُصِيْبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ اَيْدِ يْكُمْ
তোমাদের উপর আবর্তিত মুসিবাত তোমাদেরই হাতের কামাই আমি বললাম –আপনি দাঁড়ান আমি উটকে বেঁধে নিলে তখন উঠবেন।
জবাবে বৃদ্ধা বললেন– فَفَهّمْنَا هَا سُليْمَانَ
আমি সুলাইমান (আঃ) কে বিষয়টির সমাধান সম্পর্কে বুঝিয়ে দিয়েছি তারপর আমি উটকে বেঁধে নিয়ে তাকে বললাম – এবার সওয়ার হও।
অতঃপর সে সওয়ার হল এবং এই দু‘আ পাঠ করল–سُبْحَانَ الَّذِ سَخَّرَ لَناَ هٰذَا وَمَا كُنَّا لَهٝ مُقْرِنِيْنَ وَاِنَّا اِلٰی رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُوْنَ
পবিত্র মহিমামান সে সত্ত্বা যিনি আমাদের জন্য এ বাহনকে বশীভূত করে দিয়েছেন অথচ আমরা এদেরকে বশীভূত করতে সমর্থন ছিলাম না।
আর অবশ্যই আমরা সকলেই আমাদের পালন কর্তার নিকট প্রত্যাবর্তিত হব।
আমি উটের লাগাম হাতে নিয়ে রওয়ানা হলাম উটকে দ্রুত গতিতে চালানোর জন্য চিৎকার করে হাঁক ছাড়াতে লাগলাম।
এ দৃশ্য দেখে বৃদ্ধা বললেন –وَاقْصِدْ فِیْ مَشْيِكَ وَاغْضُضْ مِنْ صَوْتِكَ তুমি মধ্যম গতিতে চল এবং তোমার স্বরকে নিচু কর।
তারপর আমি ধীর চলতে লাগলাম এবং সুরালো কন্ঠে কয়েকটি কবিতা পাঠ করতে লাগলাম।
বৃদ্ধা মহিলা বললেন – فَقْرَؤُا مَا تَيَسَّرَ مِنَ الْقُرْاٰنِ কুরআনের যে অংশ সহজ মনে হয়ে সে অংশ পাঠ করো ।
আমি বললাম – তোমাকে আল্লাহ তা‘আলা অনেক পুন্য দ্বারা সুসজ্জিত করেছেন ।
জবাবে বৃদ্ধা বললেন –وَمَا يَذَّكَّرُ اِلَّا اُولُو لْاَ لْبَابِ বিজ্ঞরাই কেবলমাত্র শিক্ষা গ্রহণ করে।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে আমি তাকে জিজ্ঞেসা করলাম–আপনার কোনো স্বামী আছে কি?
জবাবে বৃদ্ধা বললেন–لَا تَسَْٔلُوْا عَنْ اَشْيَاءَ اِنْ تُبْدَلَكُمْ تَسُؤْكُمْ তোমরা এমন বিষয়াদি সম্পর্কে প্রশ্ন করবে না যা প্রকাশ করা হলে তোমরা দুঃখিত হবে ।
এরপর আমি বিলকুল চুপ হয়ে গেলাম এবং তার সহযাত্রী কাফেলার সন্ধান পাওয়া পর্যন্ত তার সঙ্গে আর কোন কথোপকথন করলাম না।
পরিশেষে কাফেলার সন্ধান পেয়ে তাদের নিকটে গিয়ে জিজ্ঞেসাা করলাম এ কাফেলায় আপনার কে আছে?
জবাবে বৃদ্ধা বললেন– اَلْمَالُ وَالْبَنُوْنَ زِِيْنَةُ الْحَيٰوةِ الدّّنْيَا সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি সব পার্থিব জীবনের শোভাবর্ধন কারী।
তখন আমি বুঝতে পারলাম যে, কাফেলায় তার ছেলে রয়েছে আমি তাঁকে জিজ্ঞেসা করলাম – কাফেলায় সে কি উদ্দেশ্য রয়েছে।
জবাবে বৃদ্ধা বললেন وَعَلَامَاتٍ وَّ بِالنَّجْمِ هُمْ يَهْتَدُوْنَ এবং পথনির্ণয়কারী সকল উপকরণ ও তারকারাজি দ্বারা তারা দীশা পায়।
এতক্ষনে আমি বুঝলাম যে, তার ছেলে কাফেলার রাহবারী করে আমি উনাকে নিয়ে তাবুর ভেতরে ঢুকে তাকে বললাম– তোমার ছেলে কে?
জবাবে বৃদ্ধা বললেন- وَتَّخَذَ اللَّهُ اِبْرَاهِيْمَ خَلِيْلًا وَكَلَّمَ اللَّهُ مُوْسٰ تَكْلِيْمًا يَا يَحْیٰ خُذِ الْكِتَابَ
আল্লাহ তা‘আলা হযরত ইবরাহীম (আঃ) কে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছেন।
আর মূসা (আঃ) এর সঙ্গে কথা বলেছেন হবে ইয়াহইয়া! তুমি কিতাবকে ভাল ভাবে আঁকড়ে ধর।
বৃদ্ধার কথা শুনে আমি ডাক দিলাম হে মূসা ! হে ইয়াহইয়া ! হে ইবরাহীম ! অল্পক্ষণের মধ্যেই চাঁদের মতো সুন্দর কয়েকজন সুশ্রী যুবক,
আমার সামনে এসে দাঁড়াল অতঃপর যখন সকলে স্থীর হয়ে বসে পড়লাম।
তখন বৃদ্ধা বললেন– فَابْعَثُوا اَحَدَكُمْ بِوَرِقِكُمْ هٰذِهٖ اِلَی الْمَدِيْنَةِ فَلْيَنْظُرْ اَيُّهَا اَزْكٰی طَعَامًا فَلْيَاْ تِكُمْ بِرِزْقٍ مِّنْهُ
তোমাদের মধ্য হতে কাউকে এ মুদ্রাগুলো দিয়ে শহরে প্রেরণ কর সেখানে গিয়ে দেখবে কোনটি উত্তম খাবার।
অতঃপর সেখান থেকে কিছু খাবার যেন নিয়ে আসে একথা শুনার পর তাদের মধ্য হতে একটি নওজোয়ান দাঁড়িয়ে গেল।
এবং কিছু খাদ্য-খাবার ক্রয় করে নিয়ে এসে আমার সামনে হাযির করল। বৃদ্ধা তখন বললেন- كُلُوْا وَاشْرَبُوْا هَنِيْئٗا بِمَا اَسۡلَفْتُمْ فِي الْاَيَّامِ الْخَالِِیَهُ
তোমরা আনন্দ উৎফুল্লের সাঙ্গে খাওয়া-দাওয়া কর।তোমাদের অতীতের কৃতকর্মের ফল সরূপ।
আল্লাহু আকবার কত সুন্দর কুরআনের বানী দ্বারা কথা বললেন
আমি চরম আবেগ ও উৎকন্ঠায় ছেলেদেরকে বলললাম- এই খাদ্য আমার উপর হারাম, যতক্ষণ না তোমরা এ বৃদ্ধার হকীকত সম্পর্কে আমাকে অবগত করবে।
যুবকরা বললো- আমাদের মায়ের এ অবস্থা চল্লিশ বছর থেকে এর মধ্যে তিনি কুরআনের আয়াত ব্যতীত অন্য কোনো স্বাভাবিক কথাবার্তা বলেন না।
আর এতে অধিক মনোযোগীতার কারণ হল – কুরআন ব্যতীত অন্যান্য যে কোন কথার মধ্যে কোন প্রকার নাজায়েয।
কিংবা অনুপযোগী কথা বের হয়ে যেতে পারে যা আল্লাহর নাফরমানী ও অসন্তুষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
আমি বললাম- ذٰلِكَ فَضْلُ اللَّهِ يُؤْتِيْهِ مَنْ يَشَاءُ ইহা আল্লাহর বিশেষ করুনা, তিনি যাকে ইচ্ছা এ সম্পদ দান করে থাকেন আর তিনি মহান করুনাময়।
আল্ মুসতাতারাফ ১/৫৬-৫৭
সুত্র- নির্বাচিত গল্প সংকলন(পৃষ্ঠা৪২-৪৩)