(মুসলিমবিডি24ডটকম)
এক. প্রশ্ন – কোন সমস্ত মানুষের উপর কুরবানী ওয়াজিব ?
উত্তর – প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থমস্তিষ্ক সম্পন্ন প্রত্যেক মুসলিম নারী-পুরুষ,
যে ১০ যিলহজ্ব ফজর থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত (নেসাব পরিমাণ) সম্পদের মালিক হবে,তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব।
মনে রাখবেন টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা, অলঙ্কার, প্রয়োজন অতিরিক্ত জমি, বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় সকল আসবাবপত্র কুরবানীর নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য।
দুই. প্রশ্ন – কুরবানির নিসাব মানে কী ?
উত্তর – নিসাব হল স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি, রূপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি।
টাকা-পয়সা ও অন্যান্য বস্তুর ক্ষেত্রে নিসাব হল সাড়ে বায়ান্ন ভরি (তোলা) রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া ।
আর যদি এমন হয় যে সোনা ও রূপা কিংবা টাকা-পয়সা এগুলোর কোনো একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ নেই,
কিন্তু প্রয়োজন অতিরিক্ত একাধিক বস্তু মিলে সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপার মূল্যের সমপরিমাণ
(ভারতীয় বাজার দর অনুযায়ী ৪৩ হাজার টাকা বা তার বেশি) হয়ে যায়, তাহলে ওই ব্যক্তির জন্য কুরবানী করা ওয়াজিব।
সূত্র.আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৫৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪০৫
তিন.প্রশ্ন – নিসাবের মেয়াদ বা সময়সীমা কতটা ?
উত্তর – কুরবানীর নিসাব পুরো বছর থাকা জরুরি নয়; বরং কুরবানীর তিন দিনের মধ্যে যে কোনো দিন থাকলেই কুরবানী ওয়াজিব হবে।
সূত্র.বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩১২
চার.প্রশ্ন – কুরবানী দেওয়ার সময় কতক্ষণ থাকে ?
উত্তর – মোট তিনদিন কুরবানী করা যায়। ১০ই জ্বিলহজ অর্থাৎ ঈদুল আযহার দিন এবং তার পরের দুদিন ১১ ও ১২ই জ্বিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত। তবে ঈদুল আযহার দিন কুরবানী করা উত্তম।
সূত্র.মুয়াত্তা মালেক ১৮৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৮, ২৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৫
পাঁচ. প্রশ্ন – নাবালেগ ও মস্তিষ্ক বিকৃত ব্যক্তি সম্পদের মালিক হলে তাকেও কি কুরবানী দিতে হবে ?
উত্তর – নাবালেগ শিশু-কিশোর তদ্রূপ যে সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন নয় এমন মানুষ নেসাবের মালিক হলেও তাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়।
অবশ্য তার অভিভাবক চাইলে নিজে তাদের পক্ষ থেকে কুরবানি দিতে পারে।
সূত্র.বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৬
ছয়.প্রশ্ন – সাহেবে নেসাব মুসাফির ব্যক্তির জন্যেও কুরবানী করা কী ওয়াজিব ?
উত্তর – যে ব্যক্তি কুরবানীর দিনগুলোতে মুসাফির থাকবে
(অর্থাৎ ৪৮ মাইল বা প্রায় ৭৮ কিলোমিটার দূরে যেয়ে ১৫ দিনের মধ্যে ফিরে আসার নিয়তে নিজ এলাকা ত্যাগ করেছে) তার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়।
সূত্র.ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৪৪,বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৫, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৫
সাত.প্রশ্ন – দরিদ্র ব্যক্তির উপর কখন কুরবানী ওয়াজিব হয় ?
উত্তর – দরিদ্র ব্যক্তির উপর কুরবানী করা ওয়াজিব নয়;
কিন্তু সে যদি কুরবানীর নিয়তে কোনো পশু কিনে অথবা পুষে রাখে তাহলে তা কুরবানী করা ওয়াজিব হয়ে যাবে।
সূত্র.বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯২
আট.প্রশ্ন – সাহেবে নিসাব ব্যক্তি কুরবানী করতে না পারলে তার জন্য কি করনীয় ?
উত্তর – সাহেবে নিসাব ব্যক্তি কোনো যদি কুরবানীর দিনগুলোতে কুরবানী দিতে না পারে,
তাহলে কুরবানীর পশু ক্রয় না করে থাকলে তার উপর কুরবানীর উপযুক্ত একটি ছাগলের মূল্য সদকা করা ওয়াজিব।
আর যদি পশু ক্রয় করে ছিল কিন্তু কোনো কারণে কুরবানী দেওয়া হয়নি তাহলে ঐ পশু জীবিত সদকা করে দিতে হবে।
সূত্র.বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৪,ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৪৫
নয়.প্রশ্ন – ঈদুল আযহার দিন কত সকাল থেকে কুরবানী করা যাবে?
উত্তর – যতো সকালে সম্ভব ঈদুল আযহা নামাযের পরে কুরবানী করা যাবে।
ঈদুল আযহা নামায আদায় না করে কোনো মতে কুরবানী করা জায়েজ নেই।
তবে বৃষ্টিবাদল বা অন্য কোনো কারণে যদি ঈদুল আযহার দিন ঈদের নামায আদায় করা সম্ভব না হয়,
তাহলে ঈদের নামাযের সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর (কোনো যোগ্য আলেমের সাথে আলোচনা করে) কুরবানী করা জায়েয।
সূত্র.কাযীখান ৩/৩৪৪, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৮
দশ.প্রশ্ন – বিশেষ কোনো কারণে রাতে কুরবানী করা কী জায়েজ আছে ?
উত্তর – ঈদুল আযহার দিন এবং তার পর দিবাগত রাতেও কুরবানী করা জায়েয। তবে দিনে কুরবানী করাই অধিক উত্তম।
সূত্র.মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং : ১৪৯২৭; মাজমাউয যাওয়াইদ ৪/২২, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২০,কাযীখান ৩/৩৪৫,বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৩
এগারো.প্রশ্ন – কুরবানীর জন্য পশু কেনার পর কোনো কারণে জয়াই করতে না পারলে সেই পশু কি করতে হবে ?
উত্তর – উক্ত পশু কুরবানীর দিনগুলোতে যদি জবাই করতে না পারে তাহলে খরিদকৃত ওই পশুটি সদকা করে দিতে হবে
(কুরবানির জন্য নিদিষ্ট তিনদিনের পরে) তবে চাইলে নিজেও জবাই করতে পারবে কিন্তু তখন সব গোশত সদকা করে দিতে হবে।
এক্ষেত্রে গোশতের মূল্য যদি জীবিত পশুর চেয়ে কমে যায় তাহলে যে পরিমাণ মূল্য কমেছে তা সদকা করতে হবে।
সূত্র. বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০২, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২০-৩২১
বার. প্রশ্ন – কোন কোন পশু কুরবানী করা যাবে?
উত্তর – উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয।
তবে এসব গৃহপালিত পশু ছাড়া অন্যান্য পশু যেমন হরিণ, বন্যগরু ইত্যাদি দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়।
সূত্র.কাযীখান ৩/৩৪৮,বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫
তের.প্রশ্ন – নর ও মাদা পশু মানে কী এবং এর কুরবানীর নিয়ম কী ?
নর ও মাদা পশু বলতে নারী এবং পুরুষ পশুকে বোঝানো হয়েছে।
যেসব পশু কুরবানী করা জায়েয সেগুলোর নর-মাদা দুটোই কুরবানী করা জায়েজ আছে।
সূত্র.কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫
চৌদ্দ.প্রশ্ন – কুরবানীর পশুর বয়স কম করে কতো হতে হবে ?
উত্তর – উট কমপক্ষে ৫ বছরের হতে হবে। গরু ও মহিষ কমপক্ষে ২ বছরের হতে হবে।
ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা কমপক্ষে ১ বছর হতে হবে। তবে ভেড়া ও দুম্বা যদি ১ বছরের কিছু কমও হয়,
কিন্তু এমন হৃষ্টপুষ্ট হয় যে দেখতে ১ বছরের মতো মনে হয় তাহলে তা দ্বারাও কুরবানী করা জায়েয।অবশ্য এক্ষেত্রে কমপক্ষে ৬ মাস বয়সের হতে হবে।
উল্লেখ্য :- ছাগলের বয়স ১ বছরের কম হলে কোনো অবস্থাতেই তা দ্বারা কুরবানী জায়েয হবে না।
সূত্র.কাযীখান ৩/৩৪৮,বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫-২০৬
পনের.প্রশ্ন – কোন পশুতে সাত ভাগ আর কোন পশুতে শুধুমাত্র একভাগ কুরবানির জন্য দেওয়া যাবে ?
উত্তর – ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা দ্বারা শুধু একজনই কুরবানী দিতে পারবে, এসব পশু কয়েকজন মিলে কুরবানী করলে কারোটাই সহীহ হবে না।
আর উট, গরু, মহিষে সর্বোচ্চ সাত জন শরীক হতে পারবে। সাতের অধিক শরীক হলে কারো কুরবানী সহীহ হবে না।
সূত্র.সহীহ মুসলিম ১৩১৮, মুয়াত্তা মালেক ১/৩১৯, কাযীখান ৩/৩৪৯, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭-২০৮
ষোল. প্রশ্ন – সাত শরীকের কুরবানী দেওয়ার নিয়ম কী ?
উত্তর – সাতজনে মিলে কুরবানী করলে সবার অংশ সমান হতে হবে কারো অংশ (এক সপ্তমাংশের) কম হতে পারবে না।
যেমন কারো আধা ভাগ, কারো দেড় ভাগ, এমন হলে কোনো শরীকের কুরবানীই সহীহ হবে না।
সূত্র.বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭
সতের. প্রশ্ন – বড় পশু সাত ভাগের কমে কোরবানি দেওয়া যাবে ?
উত্তর – উট, গরু, মহিষ সাত ভাগে এবং সাতের কমে যেকোনো সংখ্যা যেমন দুই, তিন, চার, পাঁচ ও ছয় ভাগে কুরবানী দেওয়া যাবে ।
সূত্র.সহীহ মুসলিম ১৩১৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭
আঠারো.প্রশ্ন – কোনো অংশীদারের খারাপ নিয়েত থাকলে তার সাথে কুরবানি জায়েজ হবে ?
উত্তর – যদি কেউ আল্লাহ্ তাআ’লার হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে কুরবানী না করে
শুধু মাত্র গোশত খাওয়া সহ যেকোনো খারাপ নিয়তে কুরবানী করে তাহলে (জেনে শুনে) তাকে কুরবানীর অংশীদার বানানো যাবে না,
এমন ব্যক্তিকে অংশীদার বানালে শরীকদের কারো কুরবানী সহি হবে না। তাই অত্যন্ত সতর্কতার সাথে শরীক নির্বাচন করতে হবে।
সূত্র.বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৮, কাযীখান ৩/৩৪৯
উনিশ. প্রশ্ন – কুরবানীর পশুতে আকীকা দেওয়া যাবে ?
উত্তর – গরু, মহিষ ও উটে কুরবানির সাথে আকীকার নিয়তে শরীক হতে পারবে।
এতে কুরবানী ও আকীকা দুটোই সহীহ হবে। তবে অনেকে এমন আছে কুরবানির না দিয়ে
শুধুমাত্র আকিকাতে অংশ নিতে চায় (সাহেবে নেসাব ব্যক্তির জন্য) এটা মোটেও জায়েজ না।
সূত্র.তাহতাবী আলাদ্দুর ৪/১৬৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩৬২
বিশ.প্রশ্ন -কোনো ব্যক্তি কুরবানির পশু একা কুরবানী দেওয়ার নিয়তে কেনার পর অন্যদের ভাগে নিয়ে পারবে ?
উত্তর – যদি কেউ গরু, মহিষ বা উট একা কুরবানী দেওয়ার নিয়তে ক্রয় করে এবং ওই ব্যক্তি যদি ধনী হয়
তাহলে ইচ্ছা করলে অন্যকে শরীক করতে পারবে কিন্তু ওই টাকা সদকা করে দেওয়া উত্তম। তবে এক্ষেত্রে একা কুরবানী করাই শ্রেয়।
আর যদি ওই ব্যক্তি এমন গরীব হয়, যার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব নয়, তাহলে সে অন্যকে শরীক করতে পারবে না।
এমন গরীব ব্যক্তি যদি কাউকে শরীক করতে চায় তাহলে পশু ক্রয়ের সময়ই নিয়ত করে ক্রয় করতে হবে ?
সূত্র.কাযীখান ৩/৩৫০-৩৫১,বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১০
একুশ. প্রশ্ন – কোনো রকম রুগ্ন ও দুর্বল পশু কুরবানী দেওয়া জায়েজ হবে ?
উত্তর. শুকনো দুর্বল পশু, যা জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারবে না তা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়।
সূত্র.জামে তিরমিযী ১/২৭৫,আলমগীরী ৫/২৯৭,বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৪
বাইশ.প্রশ্ন – দাঁত নেই এমন পশুর কুরবানী দেওয়া যাবে ?
যে পশুর একটি দাঁতও নেই বা এত বেশি দাঁত পড়ে গেছে যে, ঘাস বা খাদ্য চিবাতে পারে না এমন পশু দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়।
সূত্র.বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৫,আলমগীরী ৫/২৯৮
তেইশ. প্রশ্ন – যে পশুর শিং ভেঙ্গে বা ফেটে গেছে সে পশু কুরবানি দেওয়া যাবে ?
উত্তর – যে পশুর শিং একেবারে গোড়া থেকে ভেঙ্গে গেছে, যে কারণে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে পশুর কুরবানী জায়েয নয়।
পক্ষান্তরে যে পশুর অর্ধেক শিং বা কিছু শিং ফেটে বা ভেঙ্গে গেছে বা শিং একেবারে উঠেইনি সে পশু কুরবানী করা জায়েয।
সূত্র.জামে তিরমিযী ১/২৭৬,সুনানে আবু দাউদ ৩৮৮,বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬,রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৪,আলমগীরী ৫/২৯৭
চব্বিশ.প্রশ্ন – কান বা লেজ কাটা পশু কুরবানী দেওয়া জায়েজ হবে ?
উত্তর – যে পশুর লেজ বা কোনো কান অর্ধেক বা তারও বেশি কাটা সে পশুর কুরবানী জায়েয নয়।
আর যদি অর্ধেকের বেশি থাকে তাহলে তার কুরবানী জায়েয।
উল্লেখ্য: জন্মগত ভাবে যদি কান ছোট হয় তাহলে অসুবিধা নেই।
সূত্র.জামে তিরমিযী ১/২৭৫,মুসনাদে আহমদ ১/৬১০,ইলাউস সুনান ১৭/২৩৮,কাযীখান ৩/৩৫২,ফাতআলমগীরী ৫/২৯৭-২৯৮
এই সম্পর্কে আরও জানতে (কলকাতা সময় রাত 10 টার পর) কল করুন +917872115887