(মুসলিমবিডি২৪ডটকম)
”আখলাক” আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ চরিত্র, স্বভাব, সদাচার, সৌজন্যমূলক আচরণ। মানুষের দৈনিক কাজকর্মের মাধ্যমে যেসব আচার-ব্যবহার,
চাল-চলন এবং স্বভাবের প্রকাশ পায় সেসবের সমষ্টি হল আখলাক। শরীয়তের পরিভাষায় আখলাক হল, মানুষের সাথে পারস্পরিক সম্পর্ক, সৌহার্দ্য ও সূভ্রাতৃত্ব
বজায় রেখে সদাচরণ ও সৌজন্যমূলক ব্যবহার করা। ইসলামে মানব চরিত্রের যেসব মহৎ গুণাবলীর কথা উল্লেখ আছে তাকে “আখলাকে হাসানাহ” বা “উত্তম চরিত্র” বলা হয়।
ইসলামী শিক্ষা বা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মহান আদর্শভিত্তিক চরিত্রই হলো আখলাকে হাসানাহ। আখলাক শব্দের অর্থ ব্যাপক।
সামাজিক জীব হিসেবে মানব চরিত্রের প্রতিটি দিক এর অন্তর্ভুক্ত। ব্যক্তিগত জীবন থেকে আন্তর্জাতিক জীবন পর্যন্ত আখলাক এর ক্ষেত্র বিস্তৃত।
আল্লাহর সৃষ্টি জীবজন্তুর সাথে আচার ব্যবহার ও সম্পর্ক বজায় রাখাও আখলাকের অন্তর্ভুক্ত। মানব চরিত্রের সৎ ও অসৎ গুণাবলীর প্রেক্ষাপটে আখলাক দুই ধরনের।
১/ আখলাকে হাসানাহ:- ইসলামে যেসব গুণাবলির কথা উল্লেখ আছে, সেগুলো চরিত্রে বিদ্যমান থাকলে তাকে আখলাকে হাসানাহ বা উত্তম চরিত্র বলা হয়।
তাকওয়া, সিদক, যিকর, সবর, শোকর আদল, ইহসান, আফউ খেদমতে খালক ইত্যাদির গুণ আখলাকে হাসানার অন্তর্ভূক্ত।
২/ আখলাকে সায়্যিআ:- যেসব অসৎ গুণ মানুষকে হীন, নীচ, ইতর শ্রেণীভূক্ত ও নিন্দনীয় করে তাকে আখলাকে সায়্যিআ বলে। ফিসক, খেয়ানত, গীবত, নিফাক, কিযব ইত্যাদি আখলাকে সায়্যিআর অন্তর্ভুক্ত।
মানবজীবনে আখলাকে হাসানার গুরুত্বপূর্ণ অপরিসীম। মানুষের পার্থিব জীবনের যাবতীয় সুখ শান্তি ও নিরাপত্তা যেমন আখলাকে হাসানার উপর নির্ভরশীল।
তেমনিভাবে তার পারলৌকিক সুখ-শান্তি ও নিরাপত্তাও এর উপর নির্ভর করে। একজন সৎ স্বভাবের অধিকারী ব্যক্তি যেমন সমাজের শ্রদ্ধাভাজন হয়ে থাকেন
তেমনি তিনি মহান আল্লাহ ও তার রাসুলের কাছেও প্রিয় হয়ে থাকেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবনাদর্শই হল আখলাকে হাসানার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
এ সম্পর্কে আল্লাহ পাক এরশাদ করেন :- আপনি অবশ্যই মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত (সূরা কালাম ৬৮:৪) এ প্রসঙ্গে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন:-
আমি উত্তম চরিত্রের পূর্ণতা সাধনের জন্য প্রেরিত হয়েছি। (মুসনাদে আহমদ, মিশকাত ৪৬২) বস্তুত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হলেন সকল মহৎ গুণের এক মহান আর্দশ।
রাসূল সা. এরশাদ করেন মুমিনের মাঝে উত্তম ও পূর্ণাঙ্গ ঈমানের অধিকারী তারাই, যারা সুন্দর চরিত্রের অধিকারী। (আবূ দাউদ, মিশকাত ৪৩২-৪৩৩)
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন:- তোমাদের মাঝে সেই ব্যক্তি উত্তম যার চরিত্র বা আখলাক সর্বোতকৃষ্ট। ( বোখারী ও মুসলিম, মিশকাত ৪৩১)
অপর হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:- কেয়ামতের দিন মুমিন ব্যক্তির নেকীর পাল্লায় অধিক ভারি বস্তু হবে উত্তম চরিত্র।
পরিশেষে বলা যায় যে, মানুষ যেহেতু আল্লাহ তাআলার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি তাই তার উপর অনেক গুরুদায়িত্ব ন্যাস্ত হয়েছে। আল্লাহর জমিনে মানুষ তার প্রতিনিধি বা খলিফা।
এ দায়িত্ব পালনের ক্ষমতা আল্লাহ মানুষকে দিয়েছেন, যাতে সে আল্লাহর ইচ্ছা মতো তার ব্যক্তিগত, পারিবারিক সামাজিক, জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় জীবন সুন্দরভাবে পরিচালিত করতে পারে।
আর এজন্য প্রয়োজন হল ইসলামী আখলাক বা-আখলাকে হাসানাহ তার জীবনে প্রতিষ্ঠিত করা। বস্তুত দুনিয়া ও আখেরাতের জীবনে কল্যাণ ও
মঙ্গল লাভের জন্য প্রতিটি মানুষের চরিত্রবান হওয়া একান্ত কর্তব্য। অন্যথায় মানব জীবন ব্যর্থতার গ্লানিতে পরিপূর্ণ হবে।