প্রচলিত নিয়মে ঈদ মোবারক বলার হুকুম
প্রশ্নঃ ঈদের দিন বিশেষ করে ঈদের নামাজের পরে ‘ঈদ মোবারক' বলার যে প্রচলন বর্তমান সমাজে চালু রয়েছে, শরীয়তে এর কোনো ভিত্তি আছে কি?
উত্তরঃ শরীয়তে এর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। আর জনগণের মাঝে যেহেতু এর ব্যাপকতা লাভ করেছে, তাই তা মাকরূহ।
যদি একে সওয়াবের কাজ মনে করা হয়, তা হলে শরী'আর আহকাম বৃদ্ধির নামান্তর এবং বিদআত হওয়ার কারণে গুনাহ হবে।
ফুকাহায়ে কেরাম ঈদের যাবতীয় সুন্নাত ও মুস্তাহাব গুলো বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন।
যদি ‘ঈদ মোবারক' বলা মুস্তাহাব হত, তাহলে অবশ্যই তারা এটিকে মুস্তাহাব হিসেবে উল্লেখ করতেন।
আর যদি বাস্তবেই তা মুস্তাহাব হত, তাহলে উলামায়ে কেরাম ও বুযুর্গানে দ্বীন এর উপর আমল করতেন। অথচ তারা কেউ এর উপর আমল করেন না।
শুধু সর্ব সাধারণ তা করে থাকে। আর যদি হাদীস দ্বারা বিষয়টি প্রমাণিত হয়ে থাকে, তা হলে শুধু বরকতের দু'আ করা মুস্তাহাব বলে বিবেচিত হবে।
আর নির্দিষ্ট শব্দ বা বাক্য ব্যবহার করা বিদআত। অবস্থা জানতে যেমনি বিভিন্ন শব্দ ব্যবহৃত হয়,
যেমনঃ কেমন আছেন ইত্যাদি, তদ্রূপ দু'আর জন্যও বিভিন্ন বাক্য ব্যবহৃত হয়।
যেমনঃ ভালো থেকো! আল্লাহ তোমার উপর সন্তুষ্ট হোন, আল্লাহ হাফেজ ইত্যাদি।
ঈদের দিন দোয়ার মত করে কিছু বলা যেতে পারে
এমনিভাবে ঈদের দিনে দু'আর মতো করে কিছু বলা যেতে পারে। যেমন : আল্লাহ তাআলা তোমাকে ঈদের বরকত দান করুন ইত্যাদি।
এতে কোন দোষ নেই। সর্বদা ‘ঈদ মোবারক' বলা এটিকে নির্দিষ্ট করে নেওয়ার দলিল।
সুতরাং বিষয়টি দ্বীনের মধ্যে বৃদ্ধির নামান্তর হওয়ার কারণে তা মাকরূহ এবং বিদআত। (আহসানুল ফাতাওয়া: ১/৩৮৪)
ঈদের দিন আনন্দ প্রকাশ করা এবং মোবারকবাদ জানানো মুস্তাহাব। তবে তা যেন হয়, আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলের ঈদ কবুল করুন।
এ জাতীয় মোবারকবাদ দেওয়া নিষেধ নয়। কারণ حليه কিতাবের রচয়িতা সহীহ সনদে এ জাতীয় অনেক আছারে সাহাবা বর্ণনা করেছেন।
তবে ‘মুহীত' নামক কিতাবে আছে, ঈদের নামাজের পরে মুসাফাহা (হাত মিলানো) সর্বাবস্থাতেই মাকরূহ।
কারণ সাহাবায়ে কেরাম থেকে এরূপ প্রমাণিত নয় বরং তা ‘রাফেজী' সম্প্রদায়ের পদ্ধতি। এ থেকে আরো প্রমাণিত হয়,
ঈদ নামাজের পর কুলাকুলি করা মাকরূহ
ঈদের নামাজের পরে মু'আনাকা (কুলাকুলি) করার যে প্রচলন ভারত উপমহাদেশে চালু রয়েছে, তা ও মাকরূহ। ( দুররে মুখতার: ১/৭৮৮)
ঈদের দিন যে শব্দে মোবারকবাদ দেওয়া জায়েয
ঈদের দিনে একে অপরকে মোবারকবাদ দেওয়া জায়েয।
এক্ষেত্রে – تقبل الله منا ومنكم বা ‘ তোমার ঈদ মোবারক হোক! ‘ জাতীয় বাক্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
(দুররে মুখতার শামীসহ : ১/৭৭৭) (ফাতওয়ায়ে রাহিমিয়্যাহ : ১/২৮১)
আরো পড়ুন 👉👉 ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম ও তার হুকুম, ঈদের নামাজের জন্য কি কি শর্ত রয়েছে?