(মুসলিমবিডি২৪ডটকম)
ইলিয়াস বিন শহীদুল্লাহঃ সমস্থ প্রসংসা আল্লাহ তা'য়ালার জন্য যিনি আমাদের কে শেষ নবী,শ্রেষ্ট নবী,সমগ্র উম্মাহর নবী হযরত মুহাম্মদে আরাবী সা:এর উম্মত বানিয়েছেন ৷
দুরুদ ও সালাম অবতীর্ণ হোক দরদী নবী সা:এর উপর যিনি না আসলে হয়ত আমরা হক্ব ও হক্বানিয়্যাত এর দিশা পেতাম না,
যিনি আমাদের কে এমন সব ফিতনা সম্পর্কে অবহীত করেছেন যেগুলো না জানলে হয়ত চতুর্মুখি ষড়যন্ত্রের মুখে এই উম্মাহ বিলুপ্ত হয়ে যেত ৷
আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক তার পরিবার পরিজন ও সমস্থ সাহাবায়ে কেরামের উপর ৷
প্রিয় বন্ধুগণ! আমরা আজ আলোচনা করব কিয়ামতের আগের কিছু ফিতনা নিয়ে,
যেগুলোর ব্যপারে রাসুলুল্লাহ সা:আমাদের কে 1400 বছর আগে সতর্ক করে গেছেন,
আর বর্তমানে সেগুলো পরিপূর্ণ ভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে, এবং হবে ইনশাআল্লাহ ৷
এবং আগামীতে ইনশাআল্লাহ এই বিষয়ে আরো লেখার চেষ্টা করব ৷(আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে ফিতনা থেকে হেফাযত করুন আমিন)
প্রথম আলামতঃ আমানের খিয়ানত করা
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ : بَيْنَمَا النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي مَجْلِسٍ يُحَدِّثُ الْقَوْمَ، جَاءَهُ أَعْرَابِيٌّ فَقَالَ: مَتَى السَّاعَةُ ؟
فَمَضَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُحَدِّثُ، فَقَالَ بَعْضُ الْقَوْمِ : سَمِعَ مَا قَالَ فَكَرِهَ مَا قَالَ،
وَقَالَ بَعْضُهُمْ: بَلْ لَمْ يَسْمَعْ حَتَّى إِذَا قَضَى حَدِيثَهُ، قَالَ : ” أَيْنَ أُرَاهُ السَّائِلُ عَنِ السَّاعَةِ ؟ ” قَالَ : هَا أَنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ. قَالَ : ” فَإِذَا ضُيِّعَتِ الْأَمَانَةُ فَانْتَظِرِ السَّاعَةَ “. قَالَ : كَيْفَ
إِضَاعَتُهَا ؟ قَالَ : ” إِذَا وُسِّدَ الْأَمْرُ إِلَى غَيْرِ أَهْلِهِ فَانْتَظِرِ السَّاعَةَ “.
হযরত আবু হুরায়রা রাযি: থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,একবার রাসুল সা:কথা বলছিলেন,
এমন সময় এক গ্রাম্য ব্যক্তি এসে তাকে জিজ্ঞাসা করল কিয়ামত কখন হবে?
কিন্তু রাসুল সা:তার প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে তার আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন ৷
তখন কতক সাহাবায়ে কেরাম বললেন, সে যা বলেছে তা রাসুল স. শুনেছেন তবে তিনি তা অপছন্দ করেছেন,
আর কেউ বলল, তিনি তার কথা শুনেনই নাই ৷ এক পর্যায়ে রাসুল সা:তার আলোচনা শেষ করে বললেন যে কিয়ামত সম্পর্কে প্রশ্নকারী ব্যক্তি কোথায়?
সে বলল য়া রাসুলাল্লাহ আমি এখানেই আছি, তখন রাসুল সা.বললেন কিয়ামতের আলামত হলো
যখন আমানত নষ্ট করা হবে তখন কিয়ামতের অপেক্ষা কর ৷
লোকটি জিজ্ঞাসা করল আমানত কি ভাবে নষ্ট করা হবে? তিনি বললেন,
যখন দায়িত্ব অযোগ্য লোকদের হাতে অর্পণ করা হবে তখন কিয়ামতের অপেক্ষায় প্রহর গুনতে থাক ৷ _বুখারী হাঃ নং ৫৯
এটি হলো একটি কিয়ামতের আলামত ৷ এখন আমরা যদি সমগ্র দুনিয়ার দিকে তাকাই তাহলে কি দেখতে পাব?
যারা রাষ্ট বা বিচারের দায়িত্বে আছেন তারা কি আসলেই এর যোগ্য?
আজ দেখা যায় যাদের ধর্ম সম্পর্কে নূন্যতম ধারনা টুকুও নাই তারা ধর্ম মন্ত্রী ৷
যাদের ইসলাম সম্পর্কে আছে একেবারে নগন্য জ্ঞান তারা এখন ইসলামিক স্কলার ৷
আমি কেবল একটা উদাহরণ দিয়ে বুঝালাম, এমন অবস্থা বর্তমানে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র এমনকি আন্তরজাতিক পর্যায়েও ৷
যে যা না বুঝে সে তার প্রধান, এখানে পাঠক নিজেই এই ব্যপারে বিচার করবেন বলে আশাবাদী ৷
আমার একটা ঘটনা মনে পরল, আমাকে একজন বন্ধু শুনিয়েছিলেন,
একবার মসজিদ কমিটির লোকেরা মসজিদে ইমাম নিয়োগ দেবে এই জন্য তারা ইন্টারভিউ নিচ্ছে ৷
তো যিনি ইন্টারভিউ দিতে এসেছেন তিনি আলেম, আর বাংলাদেশের মসজিদ কমিটি সম্পর্কে তো সবারই জানা আছে ৷
তখন তারা ইমাম সাহেবকে জিজ্ঞাসা করল যে কিয়ামতের তো অনেক আলামত বা নিদর্শন আছে!সেগুলো থেকে একটি আলামত সম্পর্কে আমাদের বলেন ?
তো ইমাম সাহেব কি আর বলবেন? তিনি সরাসরি বলে দিলেন যে, মুর্খরা জ্ঞানিদের ইন্টারভিও নিবে এটাই একটা কিয়ামতের বড় আলামত ৷
তাই আসুন আমার ভাইয়েরা আমরা প্রতিজ্ঞা করি আমরা কোন দিন কোন আমানতের খিয়ানত করব না!
দ্বিতীয় আলামতঃ গণনা ছাড়াই সম্পদ বন্টন
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ ، وَجَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ ، قَالَا : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ :
” يَكُونُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ خَلِيفَةٌ يَقْسِمُ الْمَالَ وَلَا يَعُدُّهُ
হযরত আবু সাঈদ ও যাবের রা:থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা:বলেছেন,
শেষ যুগে এমন রাষ্ট্র প্রধান থাকবে যে কোন গণনা ছাড়াই সম্পদ বন্টন করবে ৷মুসলিম হাঃ নং ২৯১৩
এখন আমরা যদি আমাদের রাষ্ট্র ও পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্র সমুহের দিকে তাকাই,
তাহলেই এই বিষয়টা আমাদের মাঝে সুর্যের আলোর ন্যায় স্পষ্ট হয়ে যাবে।
যে বর্তমানে পৃথিবীতে কি হচ্ছে ও হতে চলেছে?সব জায়গায় গরিব দুঃখিদের পেটের মধ্য লাথি দিয়ে নিজের লোকদের কে হিসাব ছাড়া দান করা হচ্ছে৷
যা লাগবে নিয়ে যা তার পরেও আমার পিছনে থাক, কেবল বাংলাদেশেই নয় সারা বিশ্বে চলছে ৷
তাই আমরা অযথা সম্পদ বন্টন ও আহরণ থেকে বেচে থাকব, ,আপনি কি রাজি নয় ভাই?
তৃতীয় আলামতঃ অধিক হারে মিথ্যাবাদীর আগমন
عن جابر بن سمرة قال سَمِعْتُ النبي عليه السلام يَقُولُ : ” إِنَّ بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ كَذَّابِينَ فَاحْذَرُوهُمْ
হযরত জাবের ইবনে সামুরা রাযি: হতে বর্ণিত তিনি বলেন আমি রাসুল সা:কে বলতে শুনেছি যে,কিয়ামতের আগে অনেক মিথ্যবাদী আসবে ৷
তোমরা তাদের থেকে সাবধান থেক। (সহিহ মুসলিম শরীফ হাঃ নং ১৮২২)
আজকের দুনিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখ ভাই দুনিয়াতে কিভাবে মিথ্যার সয়লাব চলছে ৷
হাজারো মানুষকে হাজারো প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় যে, আমি তোমাদেরকে এই এই করে দিব! কিন্তু শেষ পরিনাম কি হয় তা তো সবারই জানা ৷
আজ বিশ্বের রাষ্ট্র প্রধানদের থেকে মিথ্যার জয়গান শুনা যায় ৷ অথচ রাসুল সা:বলেছেন,
أَرْبَعٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ كَانَ مُنَافِقًا خَالِصًا، وَمَنْ كَانَتْ فِيهِ خَصْلَةٌ مِنْهُنَّ كَانَتْ فِيهِ خَصْلَةٌ مِنَ النِّفَاقِ حَتَّى يَدَعَهَا : إِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ، وَإِذَا حَدَّثَ كَذَبَ، وَإِذَا عَاهَدَ غَدَرَ، وَإِذَا خَاصَمَ فَجَرَ
অর্থাৎ যার মধ্য চারটি জিনিস থাকবে সে হলো খালেস মুনাফেক যতক্ষন না সে সেগুলো ছেড়ে দিবে।
1/আমানত রাখলে সে তার খিয়ানত করে ৷ 2/ যখন কথা বলে তখন মিথ্যা কথা বলে ৷ 3/প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা পুরন করেনা ৷ 4/ ঝগড়া বিবাদে অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করে ৷
অন্য এক হাদিসে এসেছে মিথ্যা হলো সকল গুনাহের মা ৷ হে ভাই চল আজ থেকে প্রতিজ্ঞা করি আর কখনো মিথ্যা বলবনা ৷
চতুর্থ আলামতঃ পথভ্রষ্ট নেতার আবির্ভাব
عَنْ ثَوْبَانَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” إِنَّمَا أَخَافُ عَلَى أُمَّتِي الْأَئِمَّةَ الْمُضِلِّينَ
হযরত সাওবান রাযি:থেকে বর্ণিত তিনি বলেন ,রাসুল সা:বলেছেন আমি আমার উম্মতের উপর পথভ্রষ্ট নেতাদের আবির্ভাবের ভয় করছি ৷
আজ সমাজের সর্ব স্তরে পথভ্রষ্ট নেতা নেত্রিদের অবাধ আনাগোনা দেখা যায় ৷
যার ব্যখ্যার কোন প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হচ্ছে না ৷
আস ভাই দ্বীনের খতিরে পথ ভ্রষ্টদের বাদ দিয়ে পথ প্রাপ্তদের অনুস্বরণ করি ৷আল্লাহ তোমায় কবুল করুন, ,
পঞ্চম আলামতঃ নারীর ক্ষমতায়ন
قال رسول الله عليه الصلاة و السلام لَنْ يُفْلِحَ قَوْمٌ، وَلَّوْا أَمْرَهُمُ امْرَأَةً
রাসুল সা:বলেছেন ঐ জাতি কখনো সফলকাম হতে পারবেনা যারা তাদের শাসন ভার মহিলাদের হাতে দিয়ে দেয় ৷ বুখারী হাদিস নম্বরঃ ৪৪২৫
এটি একটি কিয়ামতের বড় আলামত ৷ আজ সারা বিশ্বে নারীর ক্ষমতায়নের জোয়ার চলছে ৷
আল্লাহ পাক আমাদেরকে এইসব ফিতনা থেকে হেফাযত করুন! দ্বীনের উপর অবিচল রাখুন ৷আমীন।
প্রিয় ভাইয়েরা! বিশেষ করে যুবক ভাইয়েরা তোমরা কিসের পিছনে দৌরাচ্ছ?
তোমরা কোন দিকে যাচ্ছ?একটু সামনের দিকে তাকিয়ে দেখ? তুমি তো সাপ বিচ্ছু আর জাহান্নামের আগুনের দিকে দৌরাচ্ছ!
আর কতকাল তোমার মহান রব কে ভুলে থেকে নষ্ট ভ্রষ্ট নেতা নেত্রি আর মাল সম্পদ ,বেশ্যা মহিলাদের পিছনে দৌড়াবে?
তুমি কি আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য কাজ করতে পারবেনা?
তুমি কি চাওনা জান্নাতের পূত পবিত্র হুরদের পেতে? আল্লাহ তোমাকে সঠিক বুঝ দান করুন!
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আসুন আমরা সবাই মিলে দ্বীনের জন্য কাজ করি ও ফিতনার অন্ধকার থেকে পরিত্রান লাভ করি।
আমি এখানে কিছু বিষয় আলোচনা করার চেষ্টা করেছি যাতে করে এজাতি বিশেষ করে জাতির হৃদস্পন্দন,
আমার যুবক ভাইয়েরা এসব ফিতনা থেকে বেচে দ্বীনের উপর অবিচল থাকতে পারেন ৷
আল্লাহ তোমাকে আমাকে সবাইকে কবুল করুন আমীন
আরো পড়ুনঃ কিয়ামতের আলামতঃ দ্রুত সময় পার হওয়া, পরস্পর হিংসা বিদ্বেষ কিয়ামতের লক্ষন, কিয়ামতের আলামতঃ ব্যাপক লেখালেখি ও কলামিষ্টদের ছড়াছড়ি