Breaking News
Home / আল কোরান / দৃষ্টি সংযত রাখার ১০ টি উপায়

দৃষ্টি সংযত রাখার ১০ টি উপায়

()

দৃষ্টি সংযত রাখার উপায়

بسم الله الرحمن الرحيم

আল্লাহর শাস্তি থেকে নিজেকে রক্ষা জন্য প্রত্যেক মুসলিমের তার দৃষ্টিকে সংযত রাখা একটি অত্যন্ত জরুরী বিষয়।

প্রতিটি বিশ্বাসী মুসলমানের উচিত নিজের দৃষ্টির সংরক্ষণের জন্য ও নিজের

এই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠার জন্য বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেওয়া ও এ বিষয়ে কোন রকম ত্ না করা।

দৃষ্টি অবনত রাখার উপায়ের ব্যপারে প্রখ্যাত আলেম শেইখ মুহাম্মাদ সালিহ আল মুনাজ্জিদ বলেনঃ

ইসলামী শরিয়ত এমন সমস্ত পথকে নিষিদ্ধ করে যা মানুষকে অনৈতিকতার দিকে নিয়ে যেতে পারে;

তার মধ্যে একটি হল গায়ের মাহরাম বা বেগানা নারীর দিকে তাকানো।

মাহরাম হল বিয়ের জন্য নিষিদ্ধ এমন আত্মীয়

যেমন পুরুষদের জন্য মা, বোন, মেয়ে, আপন খালা, ফুফু, শাশুড়ি ইত্যাদি;

নারীদের জন্য বাবা, ভাই, , আপন চাচা, মামা, শ্বশুর ইত্যাদি।

সুতরাং গায়ের মাহরাম হল এমন সমস্ত মানুষ যারা মাহরাম নন।

মহান আল্লাহ বলেন

“মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে (নিষিদ্ধ জিনিস দেখা হতে) এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে।

এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।”    [সূরা নুরঃ৩০]

এই আয়াত সম্পর্কে ইমাম ইবনে কাসীর বলেছেন

আল্লাহ তা'য়ালার নির্দেশ হল যেগুলোর প্রতি দৃষ্টিপাত করা হারাম করা হয়েছে বান্দা যেন সেগুলোর প্রতি দৃষ্টিপাত না করে।

হারাম জিনিস হতে চক্ষু নিচু করে নেয়। যদি আকস্মিকভাবে দৃষ্টি পড়েই যায় তবে দ্বিতীয়বার যেন দৃষ্টি না ফেলে।

জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত: তিনি বলেন, আমি ুল্লাহ (সাঃ) কে হঠাৎ দৃষ্টি পড়ে যাওয়ার ব্যপারে জিজ্ঞেস করলে

তিনি বলেনঃ ‘সাথে সাথেই দৃষ্টি সরিয়ে নেবে।' [মুসলিম ৫৩৭২]

দৃষ্টি নিম্নমুখী করা, এদিক ওদিক দেখতে শুরু না করা, আল্লাহর হারামকৃত জিনিসগুলোকে না দেখা এই আয়াতের উদ্দেশ্য।

হযরত বুরাইদা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে: রাসুল (সাঃ) হযরত আলী (রাঃ) কে বলেন- ‘হে আলী! দৃষ্টির উপর দৃষ্টি ফেলো না।

হঠাৎ যে দৃষ্টি পড়ে ওটা তোমার জন্য ক্ষমার্হ, কিন্তু পরবর্তী দৃষ্টি তোমার জন্য ক্ষমার যোগ্য নয়।' [আবু দাউদঃ২১৪৪]

ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘হঠাৎ দৃষ্টি' বলতে বোঝায় যখন কোন ব্যক্তির চোখ অনিচ্ছাকৃতভাবে কোন বেগানা নারীর উপর পড়ে যায়।

এভাবে হঠাৎ করে চোখ পড়ে যাওয়াতে কোন গুনাহ নেই, তবে সাথে সাথে তার দৃষ্টি অন্য দিকে সরিয়ে নিতে হবে।

কিন্তু যদি সে এর পরও দেখা বন্ধ না করে, তাহলে সে এই হাদিস মোতাবেক গুনাহগার হয়ে যাবে।

পুরুষরা তাদের দৃষ্টি অবনত রাখবে, সব অবস্থায় নিষিদ্ধ জিনিস দেখা থেকে নিজেকে বিরত রাখবে,

যদি না একান্তই কোন বৈধ কারণ থাকে, যেমন – কোন সাক্ষ্য দেওয়া,

চিকিৎসা, বিয়ের প্রস্তাব, আর্থিক লেনদেন এর সাথে সম্পর্কিত কোন বিষয় ইত্যাদি।

এই সমস্ত ক্ষেত্রেও ঠিক ততটুকুই দেখা বৈধ ঠিক যতটুকু দরকার, এর বেশী নয়।

দৃষ্টি সংযত রাখার অনেক উপায় আছে। আর আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি যেন আল্লাহ আমাদের করেন।

১) সবসময় মনে রাখা যে আল্লাহ আপনাকে দেখছেন,

আপনি যেখানেই যান আল্লাহ আপানার সঙ্গেই আছেন (তাঁর সর্বময় জ্ঞানের মাধ্যমে) হতে পারে আপনি লুকিয়ে আপনার পাশের জনকে দেখছেন যা সে জানে না, কিন্তু আল্লাহ তা জানছেন।

চোখের চুরি এবং অন্তরের গোপন বিষয় তিনি জানেন। [সূরা গাফিরঃ১৯]

২) আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া, মিনতি সহকারে তাঁকে ডাকা। আল্লাহ বলেন:

তোমাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি সাড়া দেব। [সূরা গাফিরঃ৬০]

৩) সবসময় মনে রাখবেন, আপনি যা যা নেয়ামত উপভোগ করছেন তার সবই আল্লাহর তরফ থেকে পেয়েছেন,

আর এ জন্য আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত। আল্লাহর দেওয়া দৃষ্টির নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা জানাতে হলে

আপানাকে আপনার চোখ দুটিকে সে সব জিনিস দেখা থেকে বিরত রাখতে হবে

যা যা আল্লাহ নিষেধ করেছেন। ভাল কাজের প্রতি কি ভাল ছাড়া কিছু হতে পারে?

তোমাদের কাছে যে সমস্ত নেয়ামত আছে, তা আল্লাহরই পক্ষ থেকে। [সূরা নামলঃ৫৩]

৪) নিজের সাথে সংগ্রাম করা, দৃষ্টি নত রাখার জন্য নিজে নিজে অভ্যাস করার চেষ্টা করা এবং এ কাজে ধৈর্যশীল হওয়া ও হাল ছেড়ে না দেওয়া।

আল্লাহ বলেন: যারা আমার পথে সাধনায় আত্মনিয়োগ করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করব।

নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের সাথে আছেন। [সূরা আনকাবুতঃ ৬৯]

৫) এমন সব স্থান এড়িয়ে চলার চেষ্টা করা যেখানে নিষিদ্ধ দৃষ্টির প্রলোভনে পড়ার আশঙ্কা আছে বলে মনে হয়।

যেমন, মার্কেট, বিপনী বিতান, হীন দাওয়াতের আসর,

রাস্তা ঘাটে অলস আড্ডা, ইন্টারনেটে অহেতুক ঘাঁটাঘাঁটি ইত্যাদি।

রসুল (সাঃ) বলেছেন: তোমরা রাস্তার উপর বসা ছেড়ে দাও।

লোকজন বলল, এ ছাড়া আমাদের কোন উপায় নেই।

কেননা, এটাই আমাদের উঠাবসার জায়গা আর এখানেই আমরা কথাবার্তা বলে থাকি। তিনি বললেন,

“যদি তোমাদের সেখানে বসতেই হয়, তহলে রাস্তার হক আদায় করবে।”

তারা বলল, রাস্তার হক কি? তিনি (সাঃ) বললেন, ‘দৃষ্টি অবনমিত রাখা, কষ্ট দেওয়া হতে বিরত থাকা,

সালামের জবাব দেওয়া, সৎকাজের আদেশ দেওয়া এবং অসৎকাজে নিষেধ করা।'[বুখারী ২৩০৩; ইফা]

ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রেও এই হাদিসটি প্রযোজ্য। এখানেও নিজের দৃষ্টিকে (নিষিদ্ধ সাইট,

অন্যের প্রোফাইল অকারণে দেখার মাধ্যমে) যত্রতত্র নিক্ষেপ করা,

কাউকে কটাক্ষ করে মন্তব্য করা, অর্থহীন আলোচনায় লিপ্ত হওয়া অনুমোদনযোগ্য নয়।

৬) সবসময় এটা মনে রাখা যে, পরিস্থিতি যেমনই হোক, নিষিদ্ধের প্রতি আকর্ষণ বা প্রলোভন যতই বড় হোক,

আপনার মনের ভেতরে যতই আবেগের তাড়না আসুক, এই ব্যপারে আপনার আর কোন পথ খোলা নেই।

আশেপাশের কলুষিত পরিবেশের অজুহাত দিয়ে বা আপনি প্রলোভনের শিকার হয়েছেন

এসব কথা বলে নিজের দোষের সপক্ষে যুক্তি দেখানোর কোন অবকাশ নেই।

৭) বেশী বেশী করে নফল ইবাদত করা, কারণ নিয়মিত ফরজ এবাদতের সাথে সাথে

নফল ইবাদত করে নিজের শারীরিক কার্যাবলীকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়।

৮) এটা মনে রাখা যে আমরা যে জমীনের উপর গুনাহ করি, সেই জমীন আমাদের বিরুদ্ধে আমাদের গুনাহের সাক্ষী দেবে।

আল্লাহ বলেনঃ সেদিন সে (পৃথিবী) তার বৃত্তান্ত বর্ণনা করবে। [সূরা জিলজালঃ ৪]

৯)অপ্রয়োজনীয় এদিক সেদিকে দৃষ্টিপাত করা থেকে বিরত থাকা, শুধুমাত্র যা দেখা প্রয়োজন সেদিকে তাকানো;

বিশেষ করে এমন জায়গায় অযথা দৃষ্টি না ফেরানো যেখানে এমন প্রলোভনের আশঙ্কা থাকে যা থেকে সহজে মুক্ত হওয়া কঠিন।

হতে পারে সেটা আপনার আশেপাশের দৃশ্যে, বা কোন ম্যাগাজিনে, টিভিতে, অথবা ইন্টারনেটে।

১০) বিয়ে হল একটি কার্যকরী প্রতিকার। নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেছেন:

“হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যারা বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে তারা যেন বিয়ে করে।

কেননা, তার দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং যৌনতাকে সংযমী করে;

এবং যাদের বিয়ে করার সামর্থ্য নেই, সে যেন পালন করে। কেননা,

রোজা তার যৌনতাকে দমন করবে।” [সহীহ বুখারী ৪৬৯৬, ইফা]

About আবদুল্লাহ আফজাল

হাফিজ মাওঃ মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আফজাল। ২০১২ সনে হিফজ সম্পন্ন করেন। উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন২০১৬ সনে। দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) সম্পন্ন করেন ২০২০ সনে। ঠিকানা: বালাগঞ্জ, সিলেট। মোবাইল নাম্বার: 9696521460 ইমেইল:hafijafjal601@gmail.com সকল আপডেট পেতে এবং ওয়েবসাইটে লিখা পাঠাতে ফেসবুক পেজ👉MD AFJALツ ফলো করুন।

Check Also

একটি ভুলের জন্য সারা জিবোনের কান্না

একটি ভুলের জন্য সারা জীবনের কান্না

(মুসলিমবিডি২৪ডটকম) বাইরে থেকে আসা প্রচুর মাসআলার তামরীন করতে হয়েছিল। বেশিরভাগ মাসআলা ছিল তালাক সংক্রান্ত। একবার …

Powered by

Hosted By ShareWebHost