Breaking News
Home / জীবনী / কবি হাতিম আল- ফেরদৌসীর আত্মজীবনী

কবি হাতিম আল- ফেরদৌসীর আত্মজীবনী

(মুসলিমবিডি২৪ডটকম)

কবি হাতিম আল- ফেরদৌসীর আত্মজীবনী

بسم الله الرحمن الرحيم

এক আসা আর এক যাওয়া, এইতো দুনিয়া। প্রভাতে ফুটে ফুল সন্ধায় যায় ঝরে ,

আর সন্ধায় ফুটে কত প্রভাতে যায় পড়ে । তরঙ্গে চলছে এই আদি-অন্তের খেলা।

এক রাঙ্গা প্রভাতে নৃত্য খেলার মতো প্রকৃতিটা কেমন যেন আনন্দে ব্যকুল।

মনের সমস্ত আগ্রহ দু'চোখ দিয়ে বাইরের জগতে ঢেলে দিয়ে চেয়ে থাকি অবাক হয়ে।

অবশেষে প্রভাত উধাও হলো, সময় হারালো তার জৌলুস।

আমি আরো অবাক হলাম; মূহুর্তেই ঘটে গেলো কি যে আসা আর যাওয়ার খেলা! ঘটনাটি আমাকে করে দেয় আত্মমুখী।

আমারও তো জীবনে আছে আসা যাওয়ার অবিরাম প্রবাহ।

জন্ম নামক ‘আসা' ঘটলেও নামক যাওয়া যদিও এখনো ঘটেনি

তবুও যাপিত জীবনের নানা ক্ষেত্রে রয়েছে আসা আর যাওয়ার কত আনন্দ-বেদনা।

জন্মেছিলাম ১৯৯৫ সনের সেই সময়ে যখন ভুবি ফল পেকে বিক্রির উপযুক্ত।

মাসটি ছিলো জৈষ্ঠ্য শেষে আষাঢ়ের শুরু। আম্মুর মুখ থেকে শোনেছি,

তিনি বলেন,_” তোমার আব্বু ভুবি বিক্রি করতে রবিরবাজার গিয়েছিলেন

আর সেই দিনগত রাতের শেষভাগে অর্থাৎ সোমবার রাতে তোমার জন্ম হয়েছে।”

আমার মেজ ভাই আব্দুল গফূর আর ছোট আপু আছমা তখন ছোট।

ভোরে ঘুম থেকে উঠে যখন তাঁরা আমাকে দেখলেন তখন আনন্দ ও আগ্রহভরে জিজ্ঞাস করলেন ,

আম্মু মনা কোথায় পেলেন ? তখন ধাত্রী মাতা তামাশাচ্ছলে জবাব দিলেন,

তোমাদের বাবা গতকাল ভুবি বিক্রি করে বাজার থেকে মনা কিনে নিয়ে এসেছেন।

সেই কথা আজো আমার ভাইবুনেরা রশিকতার সাথে স্মরণ করেন।

জীবনের যাত্রা সেই থেকে শুরু। মা-বাবার অতি আদরে লালিত হতে থাকি।

বলতে পারো, সকল ই তো মা-বাবার কাছে আদরের হয়। আমি বলি, অবশ্যই।

তবে একাধিক সন্তানের অধিকারী মা-বাবার কোন এক সন্তানের মধ্যে যদি আলাদা কোন বিশেষত্ব থেকে থাকে,

তাহলে তার প্রতি আদরের দৃষ্টিটুকু বেশি ঝুঁকে যাওয়া যে স্বাভাবিক তা তো স্বীকার করতেই হবে।

আমি হলাম আমার মা-বাবার দৃষ্টিতে সতন্ত্র বিশেষত্বের অধিকারী। এর পিছনে আছে একাধিক কারণ।

* মায়ের মুখ থেকে শোনেছি,__ আমি যখন মাতৃগর্ভে ছিলাম তখন এক পাগল ভেশী ফকীরের আগমন ঘটে।

ফকীরের ছিলো গায়ে জীর্ণ পাঞ্জাবী, য় টুপি, কাঁধে ঝুলি, হাতে লাঠি আর মুখে আল্লাহ আল্লাহ তাসবীহ।

ফকীরের চলার গতি ছিলো দ্রুত। তিনি জুরেসুরে আল্লাহ আল্লাহ বলতে বলতে মানুষের বারি বাড়ি ঢুকতেন।

বাড়িতে ঢুকে একবার মাত্র বলতেন, দাও।

 

ফকীরের কথায় গুরুত্ব দিয়ে যারা সাথে সাথে দিয়ে দিত কিংবা দেওয়ার প্রস্তুতি নিত, তিনি কেবল তাদেরই দান গ্রহণ করতেন,

অন্যতায় দ্রুত বেরিয়ে চলে যেতেন। পরে তাঁর পিছু পিছু ছুটলেও আর গ্রহণ করতেন না।

আমাদের গ্রামেই দেখা গেছে অনেককে দান নিয়ে তাঁর পিছু ছুটতে,

কিন্তু তিনি গ্রহণ করছেন না। এজন্যে কোনো গ্রামে দু'এক বাড়ি থেকে তিনি দান পেতেন আর কোনো গ্রামে একেবারেই পেতেন না।

আমার মায়ের স্বভাব হলো, ফকীরদের দানের ক্ষেত্রে অবহেলা না করা।

গ্রামে কুপ্রতা আছে , বিশেষ বিশেষ সময়ে ভিক্ষুককে ভিক্ষা দেওয়া নাকি ঠিক নয়।

যেমন: আসরের পর, ফজরের পর, খানার সময় ইত্যাদি। আমার মায়ের কাছে এমন কোন বাঁধাধরা সময় নেই।

কোন ফকীর আসলেই মায়ের মনে জন্ম নেয়, আগে ফকীরকে ভিক্ষা দিয়ে বিদায় দেওয়ার তাড়া।

তাই এদিন ফকীর আসতেই তিনি পাঁচ মুষ্টি চাল নিয়ে ফকীরকে দিয়ে পাঠালেন। পাঁচ মুষ্টি দেওয়ার কারণ হলো,

পাঁচ সন্তান ছিলো তখন আমার মায়ের আর আমি ছিলাম গর্ভে ।

তখন ফকীর চাল থলিতে রেখে এগিয়ে এসে ে পা রেখে হাত তুলে আল্লাহর কাছে মুনাজাত করে গিয়ে ছিলেন।

তারপর যখন আমার জন্ম হলো তখন মায়ের ধারণা হলো, আমি ফকীরের দুআর ফসল।

পরবর্তীতে জানা গেছে এই ফকীর আমার নানার বাড়ির এলাকা নিশ্চিন্তপুরেও গিয়েছিলেন।

সেখানেও এক নিঃসন্তান মহিলার জন্যে দুআ করেছিলেন, সেই দুআ আল্লাহর কাছে কবুলও হয় ফলে তিনি সন্তান লাভ করেন।

* ছিলাম খুবই চঞ্চল প্রকৃতির। দুই-আড়াই বৎসর বয়স হতে না হতেই ীয় শিক্ষা লাভের প্রতি খুবই আগ্রহ সৃষ্টি হয়।

ঘরে মায়ের কাছে কালেমা, দোওয়া-দুরূদ ইত্যাদি শিখি।

বাড়ির পাশে মক্তব থাকার পরও ভাই-বুনেরা প্রথমে কমলাটিলা পরে গজভাগ মসজিদে গিয়ে সকালে মক্তব পড়তেন।

কারণ, আমাদের এক আত্মীয় যথাক্রমে স্হান দুটুতে পড়ান।

তাই ভালো পড়ার জন্য দূর হওয়াসত্ত্বেও ভাইবুনদের আব্বু উনার কাছে পাঠাতেন।

তাদের সাথে দূরের মসজিদে যাওয়ার বয়স আমার তখনো হয়নি।

কিন্তু আমি তাদের সঙ্গে যেতে ছিলাম খুবই আগ্রহী। এক ভোরে করলাম কি, বেশ যের ধরে বসলাম_ আমাকে সঙ্গে করে নিতেই হবে।

ভাই-বুনদের অনিচ্ছাসত্যেও তাদের পিছু ছুটলাম।

কিন্তু তাদের হাঁটার গতির সাথে আমার কচি দু'টু পা চলতে গিয়ে পেরে উঠতে পারছিল না।

তাই বাড়ি থেকে বেরিয়েই পথের ধারে ভুতুড়ে এক সাঁটগাছের তলায় আমি নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ি।

যেতে না পারার ব্যর্থতায় কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে লুটে মাথা ঠুকরাতে শুরু করি। সেই থেকে কি যে হলো ,

অল্প কিছুতেই চিৎকার করে কেঁদে উঠতাম আর মাটিতে গড়াগড়ি দিতে দিতে মাথা ঠুকরাতে শুরু করতাম।

মা-বাবার কাছে বিষয়টি বেদনাদায়ক ছিলো। আমাকে নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়লেন তাঁরা।

আচরণটি মা-বাবার কাছে জিনের প্রভাব বলে মনে হলো। এথেকে সেরে তুলতে -তুমারের আশ্রয় নিলেন।

কিন্তু কোন কিছুই কাজে আসছিলো না। আমাদের এলাকায় বিন্দারাণীর দিঘি নামে বিরাট বড় একটি দিঘি আছে।

দিঘির পূর্ব পাড়ে বাজার অবস্থিত। একে দিঘির পাড় বাজার বলে। এই বাজারেই থাকেন রহস্যময় এক পাগল।

গঠনে লম্বা আকৃতির। মাথায় ঘন-লম্বা জট বাঁধা চুল। অনাবৃত দেহ।

পরনে লুঙ্গি থাকলেও লজ্জাস্থান আবৃত রাখার প্রতি পাগলের কোনই আগ্রহ নেই।

এজন্য কোথাও বসতে গিয়ে লুঙ্গি তুলে লজ্জাস্থান বের করে বসতেন। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো,

বিশেষ বিশেষ ব্যাক্তিদের সামনে এই পাগল কাপড় টেনে লজ্জাস্থান ঢাকতেন। কারো সাথে কথা বলতেন না তিনি।

তবে একা একা আবুলতাবুল কথা বলতে শোনা যেত। পাগলকে অনেকদিন কোরান তেলাওয়াত করতে শোনেছেন আমার পিতা।

নির্জনে রাতের গভীরে দিঘি থেকে গোসল করে উঠতেও দেখা যেত পাগলকে।

নিঝুম রাতে জিকিরের আওয়াজও শোনা যেত পাগলের ঘরে। এসবের চাক্ষুষ সাক্ষী আমার পিতা।

তাইবলে লোকটির একেবারে ভক্ত ছিলেন না তিনি। শরীয়তের ধার ধারে না যে, সে তো অনুসরণ বা ভক্তির যোগ্য হতে পারে না।

এ লোকটির কাছে অনেককে অনেক আবদার নিয়ে এসে সফল হতে দেখা গেছে।

তাই তাবিজ-কবজে যখন আমার কোনোই কাজে আসছিলো না তখন আমার মা আমাকে ওই পাগলের কাছে পাঠিয়ে দিলেন।

সেই ঘটনা আমার পুরোপুরি মনে আছে। আমাকে নিয়ে গিয়ে ছিলেন সাত/আট বছর বয়সী আমার বুন মোছাঃ আছমা বেগম।

বাজারের সময় তখন ছিলো না বিধায় বাজারের একেবারে উত্তর পার্শে জনাব মোবারক আলীর দুকানের

বারান্দায় পূর্ব দিকে মুখ করে একটি বেঞ্চে নির্জন বসে ছিলেন পাগল।

বুন আমার আমাকে নিয়ে পাগলের নিকট হাজির হয়ে বললেন, __ “দাদা , আমার ভাই মাটিত মাথা আছাড়ে ।

তারে ফুঁ দিয়া দেও।” পাগলের প্রতি বুনের আতঙ্ক ছিলো, কিন্তু ভাতৃস্নেহ সেই আতঙ্ককে হারমানিয়েছে।

আমরা ছিলাম পাগলের দক্ষিণ পার্শে , কিন্তু তিনি তখন পূর্ব দিকে দিগন্তের সীমায় পূর্ব পাহাড়ের ঝাপসা চূড়ার দিকে চেয়ে।

তাই আমার দিকে মুখ না ঘুরিয়ে সেদিকেই তিনি ফুঁক দিলেন। বাড়িতে চলে আসলাম। এরপর থেকে আজও আমি সুস্থ।

এ পাগল সম্পর্কে কি আর বলব। তিনি সকলের কাছে পাগল,

কিন্তু আমার পিতার সাথে একেবারে সুস্থ মাথার মানুষের মতো বিভিন্ন সময় কথা বলতে দেখা গেছে।

এমনকি আব্বুকে একদিন তিনি একথাও জিজ্ঞেস করেছিলেন , আপনার ছেলে কয়জন।

ছুটবেলা আমি বাজারে গিয়ে প্রয়োজনে দিঘিতে নামছিলাম, এমন সময় পাগল গুরুস্থান থেকে আসছিলেন।

আমাকে দেখে মৃদু হেসে কি যেন বলছিলেন আমি খেয়ালে ছিলাম না।

তখন আব্বু আমাকে ্ক করে দিয়ে বললেন, তোমাকে কী বলছেন শোনো।

ভালো-মন্দের বিপরীতমুখী বৈশিষ্ট্যে গোলমাল ানো এই পাগলের উপর যেকোনো মন্তব্য করা কঠিন।

তাই জনসাধারণের কাছে এ পাগল খুবই ভক্তির পাত্র , ফলে সবাই তাকে পীর বলে সম্বুধন করতো ।

বিশেষ ব্যক্তিগণ কিন্তু ভালোমন্দের হুকুম লাগানো থেকে ছিলেন নিরব।

আমার পিতা-মাতার ধারণা, এই লোকটির সুদৃষ্টি আমার উপর আছে।

* বয়স যখন তিন-চার অতিক্রম করছিলাম তখন পুরোপুরি মৌলভী বনে গিয়েছিলাম।

দাঁত মাজনের বুতল দিয়ে মাইক্রুপন আর বুতলের ঢাকনা দিয়ে মাইক বানিয়ে

ঘরের পাশে কাঁতার বাঁশে মাইক বেঁধে দিয়ে মাইক্রুপন হাতে নিয়ে ঘরের দহলিজে চরে বসতাম।

কিরাত, দুআ-দুরূদ, কখনো আযান আবার কখনও কখনোও ওয়াজ-নসীহত অবীরাম চলত।

বাড়ির পাশে রাস্তাদিয়ে চলা লোকেরা আমার এগুলো মুগ্ধ হয়ে শোনত । এদের মধ্যে অনেকে আবার উৎসাহমূলক দু'এক কথাও বলে যেত।

এভাবে কয়েকদিন চলার পর আমার শ্রোতার সংখ্যা অনেক হয়ে গেলো।

বাড়ি থেকে বেরোলে যেখানেই দু'চারজন অবসর বসে আছে আর আমি তাদের নযরে পড়েছি সেখানেই ক্বেরাত,

দুআ, ওয়াজ কিংবা গজল এদের কোন একটি বলে যেতে হত। আমার মুনাজাতই লোকদের কাছে বেশি প্রিয় ছিলো।

* বয়স যখন প্রায় পাঁচ তখন আলীনগর দারুল ক্বিরাত মজিদিয়া ফুলতলী ট্রাস্টে রমযান মাসে ভর্তি হই।

পরীক্ষা নিয়ে ছোট ছুরায় ভর্তি না করে আমাকে ভর্তি করা হয় বড় ছুরায়।

মায়ের কাছে ছুরাগুলো আগেই শিখে নেওয়ায় এ প্রমোশন।

বাড়িতে আমার মোল্লাগিরীর কথা এখানকার ছাত্র-উস্তাদদের অজানা ছিলো না,

তাই প্রতিদিনই কয়েকবার তাদের পীড়াপিড়ীতে মুনাজাত করতে হতো।

একদিনের কথা আজো মনেপড়ে; তাজবীদের ঘন্টা আমাদের বাহিরে খোলা আকাশের নিচে এসে করতে হতো।

একপাশে কাঁঠাল গাছের ছায়া থাকলেও ছায়া এত প্রশস্ত ছিলো না যে সবাই আশ্রয় নিতে পারবে।

এদিকে ফখর রুদ। ক্বারী সালেহ আহমদ নামে আমাদের এক উস্তাদ ছিলেন।

আমার নাম ধরে বললেন, তুমি দোয়া করো, যেন রুদ চলে যায়। মেঘের আবর এমনসময় সূর্যকে আচ্ছাদন দিকে এগোচ্ছিলো।

তখনই আমি হাত তুলি । রুদ্র চলে যায়, অথচ আমি তখন দোয়া না করলেও হয়ত রুদ চলে যেত।

সবাই তখন আমার প্রতি ভক্তি ও আনন্দ করেন।  অসমাপ্ত….

 

About আবদুল্লাহ আফজাল

হাফিজ মাওঃ মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আফজাল। ২০১২ সনে হিফজ সম্পন্ন করেন। উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন২০১৬ সনে। দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) সম্পন্ন করেন ২০২০ সনে। ঠিকানা: বালাগঞ্জ, সিলেট। মোবাইল নাম্বার: 9696521460 ইমেইল:hafijafjal601@gmail.com সকল আপডেট পেতে এবং ওয়েবসাইটে লিখা পাঠাতে ফেসবুক পেজ👉MD AFJALツ ফলো করুন।

Check Also

রাসুল(সা.)-এর ঘোড়া ঘোড়াসমূ ঘোড়াসমূহের নাম

রাসুল (সা.)-এর ঘোড়াসমূহের নাম

(মুসলিম বিডি ২৪.কম)  بسم الله الرحمن الرحيم রাসুল (সা.)-এর নিকট বেশ কয়েকটি ঘোড়া ছিলো। এগুলোর …

Powered by

Hosted By ShareWebHost