(মুসলিমবিডি২৪ডটকম)
بسم الله الرحمن الرحيم
ইমাম শাফেয়ি রাহিমাহুল্লাহ যখন কুফায় যেতেন, তখন নামাজে রফয়ে ইয়াদাইন করতেন না৷
কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, ইমাম আবু হানিফার সম্মানার্থে করি না৷
শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবি রাহিমাহুল্লাহ “আল ইনসাফ” নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেছন৷
সেখানে তিনি জোরালোভাবে একটি বিষয়ে আলোচনা করেছন৷
যে এলাকায় একটি সুন্নাহ প্রচলিত আছে, সে এলাকায় গিয়ে যদি একই বিষয়ে ভিন্ন আরেকটি সুন্নাহ থাকে,
সে সুন্নাহর দাওয়াত প্রদান করবে না৷ কারণ, এরদ্বারা মানুষের মাঝে ফিতনা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেছে
নফল নামাজে দেখে কুরআন পড়ার বিষয়টি আয়েশা রা. এর গোলাম জাকওয়ান থেকে বর্ণিত হয়েছে৷
তিনি মুসহাফ দেখে রমজানে পড়িয়েছিলেন৷হাদিসে নামাজের ব্যাপারে একটি মূলনীতি বর্ণিত হয়েছে৷
আমাদের দেশের মডারেট শায়খরা বলাবলি করেন, পুরুষ এবং মহিলার নামাজে কোন পার্থক্য নেই৷
দলিল হিসেবে একটি হাদিস পেশ করেন৷
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনصلوا كما رئيتموني أصلي
অর্থাৎ তোমরা নামাজ পড়ো যেভাবে আমাকে নামাজ পড়তে দেখো৷ (বুখারি: হাদিস ন ১০৩৬)
মডারেট শায়খদের জিজ্ঞাসা করা দরকার যে,
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো জীবনে হাজার হাজার রাকআত নফল নামাজ পড়েছেন৷
তিনি কী কখনো কোন নামাজে কুরআন শরিফ দেখে তেলাওয়াত করেছেন?
তারাবিহ বিশ রাকআত উমর রা. এর সুন্নাহ বলে এড়িয়ে যান,
অথচ ইবনে তাইমিয়া, ইবনে আবদুল বার মালেকি,
ইবনে কুদামা মাকদেসি রাহিমাহুমুল্লাহ এর বক্তব্য অনুযায়ী বিশ রাকআত তারাবিহ সকল সাহাবির ইজমা দ্বারা প্রমাণিত৷
তারাবির ক্ষেত্রে সকল সাহাবির ইজমা বাদ দিয়ে দেন,
আবার নিজেদের সুবিধার জন্য রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এবং খুলাফায়ে রাশেদিনের আমল বাদ দিয়ে আয়েশা রা. এর হাদিসের উপর আমল করে বলেন,
নামাজে কুরআন দেখে পড়া যাবে!
সনদের দিক থেকে দুর্বল হলেও ইবনে আব্বাস রাযি. বর্ণনা করেন,
: نَہَانَا أمیرُ المُوٴمِنِیْنَ عُمَرُ رضی اللّٰہ عنہ أَن یَوٴُمَّ النَّاسَ فِي الْمُصْحَفِ، وَنَہَانَا أَن یَّوٴُمَّنَا اِلَّا الْمُحْتَلِمُ․
অর্থাৎ আমিরুল মুমিনিন উমর রা. রাযি. ইমাম সাহেবকে নামাজে কুরআন দেখে পড়তে নিষেধ করেছেন৷
কিতাবুল মুসহাফ, ইমাম আবু দাউদ লিখিত, হাদিস নং ১৮৯)
আচ্ছা, উমর রা. কে শয়তান প্রচণ্ড ভয় করত৷ আপনারাও কেন তাকে এত ভয় পান?
বিশ রাকআত তারাবিহ উমর রা. এর সুন্নাহ বলে কমিয়ে ফেলেন!
আবার উমর রা. এর মতের অনুসরণ না করে বলেন, নফল নামাজে কুরআন দেখে পড়া যাবে?
কাতাদা রাহিমাহুল্লাহ বিখ্যাত তাবেয়ি সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
إِذَا کَانَ مَعَہُ مَا یَقُوْمُ بِہِ لَیْلَہُ رَدَّدَہُ وَلاَ یَقْرَأُ فِي الْمُصْحَفِ
অর্থাৎ কেউ যদি কিয়ামুল লাইলে পড়ার মতো সামান্য কুরআন মুখস্থ থাকে,তাহলে সেটা বারবার পড়বে৷
তারপরও কুরআন দেখে পড়বে না৷
লাইস রাহিমাহুল্লাহ মুজাহিদ রাহিমাহুল্লাহ এর ব্যাপারে বলেন,
أنَّہُ کَانَ یَکْرَہُ أَنْ یَّتَشَبَّہُوْا بِأَہْلِ الْکِتَابِ یَعْنِيْ أَنْ یَّوٴُمَّہُمْ فِي الْمُصْحَفِ
অর্থাৎ আহলে কিতাবদের সাথে সাদৃশ্য রেখে তিনি নামাজে কুরআন দেখে পড়াকে মাকরুহে তাহরিমি বলেছেন৷
আমাশ ইবরাহিম নাখাঈ থেকে বর্ণনা করেন,
کَانُوْا یَکْرَہُوْنَ أَنْ یَّوٴُمَّ الرَّجُلُ فِي الْمُصْحَفِ کَرَاہِیَةً شَدِیْدَةً أَن یَّتَشَبَّہُوْا بِأَہْلِ الْکِتَابِ“
অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরাম নামাজে কুরআন দেখে পড়াকে মারাত্মক অপছন্দ করতেন
আহলে কিতাবদের সাথে সাদৃশ্য হয়ে যাওয়ার কারণে৷
(বক্তব্যগুলো ইমাম আবু দাউদ কিতাবুল মাসাহিফে উল্লেখ করেছেন৷ হাদিস নং ১৮৯, ১৯০, ১৯১)
খতিবে বাগদাদি রাহিমাহুল্লাহ তারিখে বাগদাদ এ আম্মার বিন ইয়াসির রাযি. এর আছার উল্লেখ করেছেন৷
: عَنْ عَمَّارِ بْنِ یَاسِرٍ کَانَ یَکْرَہُ أَن یَّوٴُمَّ الرَّجُلُ النَّاسَ بِاللَّیْلِ فِيْ شَہْرِ رَمَضَانَ فِي الْمُصْحَفِ ہُوَ مِنْ فِعْلِ أَہْلِ الْکِتَابِ
অর্থাৎ আহলে কিতাবদের সাথে সাদৃশ্য হয়ে যাওয়ার কারণে রমজানের রাতের নামাজে কুরআন দেখে ইমামতি করাকে তিনি মাকরুহ বলেছেন৷ (তারিখে বাগদাদ: ৮/১২০)
আরও অনেক বক্তব্য নকল করা যাবে৷ বাকি থাকল আয়শা রাযি. এর হাদিসের কথা৷
এ হাদিসের ব্যাপারে খোদ মডারেট শায়খদের মান্যবর নাসির উদ্দিন আলবানি রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
وما ذکر عن ذکوان حادثة عین لا عموم لہا
অর্থাৎ জাকওয়ান এর ঘটনা একটি বিশেষ ঘটনা৷
এটা ব্যাপক বিষয় নয়৷ (ফাতহুর রাহমান: ১২৩)
ইমাম কাসানি রাহিমাহুল্লাহ বলেন
অর্থাৎ সম্ভবত আয়েশা রাযি. সে বিধান জানতেন না৷
জানলে তিনি এমনটা করতেন না৷ অথবা বর্ণাকারীর কথা দ্বারা এটাও উদ্দেশ্য হতে পারে যে,
তিনি রমজানের দুটি অবস্থা বর্ণনা করেছেন৷ তিনি রমজানে ইমামতি করতেন
এবং নামাজের বাহিরে কুরআন দেখে পড়তেন৷ (বাদায়িউস সানায়ে: ২/১২৩)
ইমাম আইনি রাহিমাহুল্লাহও একই ধরণের বক্তব্য দিয়েছেন৷
তাদের উভয়ের কথা আরেকটি আছার দ্বারা শক্তিশালী হয়৷
হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি রাহিমাহুল্লাহ আয়শা রাযি. থেকে
এ সংক্রান্ত একটি আছার নকল করেছেন৷ সেখানে কুরআন দেখে পড়ার কথা নেই৷
عن ابن أبي ملیکة أنہم کانوا یأتون عائشة بأعلیالوادي ہو وعبید بن عمیر والمسور بن مخرمة
وناس کثیر فیوٴمہم أبو عمر و مولی عائشة، وأبو عمر وغلامہا حینئذ لم یعتق․
ইবনে আবি মুলাইকা বর্ণনা করেন, তিনি, মিসওয়ার বিন মাখরামা
এবং আরও অনেক মানুষ আয়েশা রাযি. এর কাছে আসেন৷
আয়েশা রাযি. গোলাম আবু আমর ইমামতি করেন৷ (আত তালখিসুল হাবির: ,২/১১০)
এ বর্ণনায় কুরআন দেখে পড়ার কথা নেই এর দ্বারা কাসানি এবং আইনি রাহিমাহুমাল্লাহ এর বক্তব্য শক্তিশালী হয়৷
অর্থাৎ নামাজের বাহিরে তিনি কুরআন দেখে পড়েছেন৷
আলোচনা দীর্ঘ না করে মডারেটদের প্রিয় ব্যক্তি শায়খ নাসির উদ্দিন আলবানি রাহি. এর বক্তব্য তুলে ধরছি৷তিনি বলেন
অর্থাৎ আমি এটাকে জায়েজ মনে করি না৷ আর জাকওয়ানের ঘটনা একটি বিশেষ অবস্থার, ব্যাপক বিধান নয়৷
এটাকে জায়েজ বললে মসজিদের ইমামরা কুরআন মুখস্থ করা ধীরে ধীরে বাদ দিতে থাকবে৷
আর এটা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদিস বিরোধী৷
আর শরিয়তে যে কাজ গুনাহের দিকে ধাবিত করে, সেটাও গুনাহ৷ (ফাতহুর রহমান: ১২৫)