Breaking News
Home / জীবনী / কুরাইশী ঈগল আব্দুর রহমান বিন মুয়াবিয়াঃ হাতিম আল-ফেরদৌসী

কুরাইশী ঈগল আব্দুর রহমান বিন মুয়াবিয়াঃ হাতিম আল-ফেরদৌসী

(মুলিমবিডি২৪ডটকম)

কুরাইশী ঈগল আব্দুর রহমান বিন মুয়াবিয়া

بسم الله الرحمن الرحيم

আসল , । কুরাইশী ? তাঁর অসাধারণ প্রতিভা-গুণে শত্রুপক্ষের পক্ষ থেকে দেওয়া উপাধি।

তিনি ছিলেন আন্দালুসের ওই স্বাধীন সুলতান, যিনি ৭৫৫ খৃস্টাব্দের পূর্বেকার বিদ্রোহ ও গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত

আন্দালোসকে গড়ে ছিলেন সর্বদিক বিবেচনায় আন্দালুস ইতিহাসের সবচে শক্তিশালী দেশ হিসেবে। আন্দালুসে তাঁর হাতে হয়ে ছিলো,

সুদৃঢ় সামরিক শক্তি প্রতিষ্ঠা ফলে শত্রুপক্ষ ছিলো ত্রাসে প্রকম্পিত। জ্ঞান-চর্চা ও ধর্মীয় বিষয়াদিতে তিনি দিয়েছিলেন বিশেষ গুরুত্ব ফলে অজ্ঞতা দূর হয়ে খুলে যায় আলোর দ্বার।

নাগরিক সুবিধাদির ব্যাপারে তিনি ছিলেন উদার ফলে প্রজারা জীবন কাটায় অতি সুখে।

শত্রুদের লালসা থেকে দেশ বাঁচাতে সীমান্ত প্রতিরক্ষাব্য্তা করেছিলেন সুদৃঢ় ফলে প্রজারা ছিলো নিশ্চিন্তে।‌

আন্দালুসের ইতিহাসে তিনি যে দাপটশালী সম্রাট তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

এখন যদি প্রশ্ন তুলি, তিনি এ সাম্রাজ্য কী ভাবে লাভ করেন? তবে এর জবাব বড়ই আশ্চর্য ধরনের।

এসময়কালটি এটি ছিল মুসলিম প্রাচ্যের বনু উমাইয়ার খেলাফতের পতন কাল। আব্বাসীরা এ সময় বনু উমাইয়ার যারাই খেলাফতের দায়িত্ব পালনের উপযুক্ত ছিল,

সবাইকে নির্বিচারে হত্যা করেছিল। আমির, গভর্নর, গভর্নর-পুত্র বা গভর্নর-পৌত্র কাউকে তারা রেহাই দেয়নি।

উমাইয়া রাজবংশের একেবারে অল্প কয়েকজন রাজপুত্র সেসময় আব্বাসীয়দের খড়গহস্ত থেকে বাঁচতে পেরেছিলেন।
বনু আব্বাস যে সমস্ত উমাইয়া রাজপুত্রের নাগাল পায়নি,

তাদেরই একজন হলেন উমাইয়া খলীফা হিশাম বিন আব্দুল মালিক। (১০৫-১২৫ হি./৭২৩-৭৪৩ খৃ.)-এর পৌত্র আব্দুর রহমান বিন মুয়াবিয়া।

শৈশবকাল হতেই আব্দুর রহমান প্রতিপালিত হয়েছিলেন উমাইয়া খিলাফতের রাজকীয় পরিবেশে। তার পিতা মুয়াবিয়ার চাচা তথা খলিফা হিসামের ভাই বিখ্যাত

বীরযোদ্ধা মাসলামা বিন আব্দুল মালিক শৈশবেই আব্দুর রহমানের মাঝে দেখতে পেয়েছিলেন মেধা ও অভিজাত্য,

প্র-দক্ষতা ও নেতৃত্বগুণের ভবিষ্যৎ-। একথা তিনি নাতি আব্দুর রহমানকে বলেও ছিলেন।

মহান পিতামহের বচন -নিঃসৃত প্রশংসা বাণী শৈশবেই আব্দুর রহমানের কচি হৃদয়ে

এক ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করেছিল এবং পরবর্তী সময়ে এর ফলাফল প্রকাশ পেয়েছিল।

তারুণ্যের উচ্ছল বয়সে উপনীত হতেই আব্দুর রহমান এক আকস্মিক ও ভয়াবহ পরিস্থিতি'র মুখোমুখি হলেন।

রক্তাক্ত অভ্যুত্থান ঘটিয়ে আব্বাসীরা মুসলিম সাম্রাজ্যের খেলাফত-আসনে অধিষ্ঠিত হল।

ভবিষ্যতে বনু উমাইয়ার কেউ যেন খেলাফত পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা করতে না পারে, এ লক্ষ্যে শুরু হলো ‘তরবারি-অভিযান'।

উমাইয়া রাজবংশের সাবালক প্রতিটি পুরুষকে খুঁজে খুঁজে আব্বাসীরা হত্যা করতে লাগলো। নারী ও শিশুরা যেহেতু আব্বাসি সালতানাতের জন্য হুমকি ছিল না,

তাই তারাই কেবল রেহাই পেল এ হত্যাযজ্ঞ থেকে।
যুবক আব্দুর রহমান তখন শামের কিননাসরিন (Qinnasrin) প্রদেশের একটি গ্রামে অবস্থান করছিলেন।

আব্বাসী দের হাত থেকে বাঁচতে তিনি আপন অবস্থান থেকে পালিয়ে ফুরাত নদীর নিকটবর্তী ইরাকের একটি গ্রামে আত্মগোপন করলেন। কি

গুপ্তচরদের মাধ্যমে আব্বাসী ঘাতক দল তার সন্ধান পেয়ে গেলো। আব্দুর রহমান তখন অসুস্থ শরীর নিয়ে ঘরেই অবস্থান করছিলেন।

হঠাৎ তার চার বছর বয়সী শিশু পুত্র ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে ঘরে প্রবেশ করল। চক্ষুপ্রদাহে আক্রান্ত হওয়ায় অসুস্থ আব্দুর রহমান তখন ঘরের এক কোণে

অন্ধকারে একাকী বসে ছিলেন। সন্তানকে কাঁদতে দেখে তিনি শিশুদের যেভাবে শান্ত করা হয়, সেভাবে শান্ত করার চেষ্টা করতে লাগলেন।

কিন্তু ভীত-আতঙ্কিত শিশুটি কিছুতেই শান্ত হচ্ছিলো না। তখন আব্দুর রহমান উঠে দাঁড়িয়ে বাইরে তাকাতেই দেখতে পেলেন ,

পুরো গ্রাম আব্বাসী সালতানাতের প্রতীক কৃষ্ণবর্ণ পতাকায় ছেয়ে গেছে। এতক্ষণে তিনি সন্তানের আতঙ্কিত হওয়ার কারণ খুঁজে পেলেন।

তিনি বুঝতে পারলেন, শত্রুপক্ষ তার খোঁজ পেয়ে গেছে এবং তাকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলেছে।

সঙ্গে থাকা যাবতীয় সম্পত্তি এবং মহিলা ও শিশুদের সেখানেই রেখে কেবল নগদ অর্থ সঙ্গে নিয়ে তৎক্ষণাৎ তিনি তার ভাই হিশামকে সঙ্গে করে পালালেন।

তিনি জানতেন, আব্বাসীরা নারী ও শিশুদের কোন ক্ষতি করবে না। ভাই হিশামকে নিয়ে আব্দুর রহমান ফোরাত নদীর দিকে ছুটলেন।

ফুরাতের তীরে পৌঁছতেই আব্বাসী অশ্বারোহী বাহিনী তাদের দেখে ফেলল এবং ধাওয়া করলো। জীবন বাঁচাতে দু' ভাই খরস্রোতা ফুরাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে সাঁতার কাটতে লাগলেন।

দূর থেকে ধাওয়াকারী আব্বাসী ঘাতকদল তাদেরকে ডেকে বলতে লাগলো, তোমরা ফিরে এসো, তোমাদের নিরাপত্তা দেওয়া হবে।

তারা কসম করে বারবার নিরাপত্তার আশ্বাস দিতে লাগলো। কিশোর হিশামের পক্ষে সাঁতরে নদী পাড়ি দেওয়া সম্ভবপর ছিল না।

আব্বাসী দের আহ্বান ও নিরাপত্তার আশ্বাসবাণীতে সে প্রভাবিত হলো এবং ফিরে যেতে মনস্থ করল। আব্দুর রহমান বারবার তাকে ডেকে সাহস যোগাতে লাগলেন

এবং সতর্ক করে বললেন, ভাই ! খবরদার! ফিরে যেয়োনা ; নাগালে পাওয়ামাত্রই ওরা তোমাকে মেরে ফেলবে। হিশাম প্রত্যুত্তরে বলল, তারা তো আমাদেরকে নিরাপত্তা দিয়েছে।

এরপর সে ফিরে চলল। বাস্তবিকই নাগাল পাওয়ামাত্র আব্বাসীরা তাকে নির্মমভাবে হত্যা করল। আব্দুর রহমান কোনমতে নদী পাড়ি দিয়ে ওপারে পৌঁছলেন।

এরপর তিনি তাঁর মাতুলকুলের কাছে আশ্রয় পাওয়ার আশায় মাগরেবের পথ ধরলেন। তাঁর মা ছিলেেন আমাজেেগ বংশোদ্ভূত।

ইরাক থেকে মাগরিবে পলায়নের উদ্দেশ্যে তার এই দীর্ঘ সফর-দাস্তানও যেমন হৃদয়বিদারক ; তেমনি বিস্ময়কর। সিরিয়া, মিশর, লিবিয়া

ও কায়রোয়ান পাড়ি দিয়ে তিনি মাগরেবে পৌঁছলেন। আব্দুর রহমান প্রথমে লিবিয়ার বারকা (Cyrenaica) এলাকায় পৌঁছলেন

এবং পাঁচ বছর সেখানেই আত্মগোপন করে রইলেন। ইতোমধ্যে আব্বাসীয়দের ধাওয়া ও গুপ্তহত্যার ধারা অনেকটা স্তিমিত হয়ে যাওয়ায় এরপর

তিনি লিবিয়া থেকে বের হয়ে কায়রোয়ান এর পথ ধরেন। কায়রোয়ানে তখন চলছিল আব্দুর রহমান বিন হাবিব আলফিহরীর স্বাধীন শাসন।

তিনি আব্বাসীয় খেলাফতের বশ্যতা স্বীকারের পরিবর্তে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে উত্তর আফ্রিকা শাসন করছিলেন।

আব্দুর রহমান বিন হাবীব ছিলেন প্রথম মাগরিব-বিজেতা মহান সাহাবী উকবা বিন নাফে এর বংশধর। একই সময় আন্দালুসের প্রশাসন দায়িত্বে ছিলেন তার চাচাতো ভাই

ইউসুফ আলফিহরী। আব্দুর রহমান বিন হাবীব নিজে মাগরেবের পাশাপাশি আন্দালুসের শাসনেরও স্বপ্ন দেখতেন। কেননা, আন্দালুস তখন মাগরেবের অধীন ছিল।

কিন্তু আব্দুর রহমান বিন মুয়াবিয়ার হঠাৎ আবির্ভাব আব্দুর রহমান বিন হাবীবের এ স্বপ্নপূরণের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ালো।

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন দাঁড়ায়, ইবনে মুয়াবিয়ার আগমনে ইবনে হাবীবের স্বপ্নপূরণের পথ কেন বাধাগ্রস্ত হবে ? এর উত্তরের দু'টি দিক রয়েছে।

একটি বাস্তব বিশ্লেষণমূলক দিক, আরেকটি ভবিষ্যদ্বাণীতে দৃশ্যমান বিস্ময়কর এক দিক। পূর্বেই আমরা বলেছি, আব্দুর রহমান বিন হাবিব ছিলেন কায়রোয়ানের অধিপতি।

তিনি ছিলেন উত্তর আফ্রিকার স্বাধীন প্রশাসক, যেখানে নবগঠিত আব্বাসী সালতানাতের কোন প্রভাব-প্রতিপত্তি বা কর্তৃত্ব ছিল না।

আবার তিনি তৎকালীন আন্দালুসপ্রশাসক ইউসুফ আলফিহরির চাচাতো ভাইও ছিলেন। তিনি জানতেন, আব্দুর রহমান বিন মুয়াবিয়া উমাইয়া রাজপরিবারের সন্তান।

আর উমাইয়া খলিফাদের হাতেই এ অঞ্চল বিজিত হয়েছে। এ অঞ্চলের প্রশাসক নির্ধারণ-অপসারণ এবং নিয়োগ-বিনিয়োগের ক্ষমতাও তাই উমাইয়াদের।

তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, উমাইয়া রাজবংশের সন্তান আব্দুর রহমান বিন মুয়াবিয়া মাগরেবে এসে কেবল নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ জীবনযাপনের নিশ্চয়তা লাভ করে

পরিতৃপ্ত হয়ে বসে থাকবেন না ; অবশ্যই তিনি তার পূর্বপুরুষের রাজত্বে তার অধিকার প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হবেন

কারণ, এ ভূমি তার পূর্বপুরুষগনই জয় করেছেন, তারাই এ দেশ শাসন করেছেন এবং এ ভূখণ্ডে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছেন।

পরিস্থিতির নিরিখে এটাই ছিল তখনকার বাস্তবতা। প্রসঙ্গত বলতে হয়, আব্দুর রহমান বিন হাবীব যে চিন্তা করছিলেন, তৎকালীন ক্ষমতাসীন আব্বাসীয়দের চিন্তা ধারাও সেই

একই খাতে প্রবাহিত হচ্ছিল। এই একি আশঙ্কায় তারা উমাইয়াদের সমূলে ধ্বংস করার রক্তাক্ত অধ্যায় রচনা করেছিল।

তারা জানত, যতদিন উমাইয়া বংশধারার একজন ব্যক্তিও জীবিত থাকবে, অবশ্যই সে নিজেদের লুণ্ঠিত রাজত্ব পুনরুদ্ধার করার জন্য জান-প্রাণ চেষ্টা করবে।

আর এ ‘শঙ্কা-সমস্যা' দূর করার একমাত্র পথ হলো উমাইয়া রাজবংশকে সমূলে ধ্বংস করা। সরয়ী দৃষ্টিিও এক্ষেত্রে আব্বাসীয়দের প্রতিকূলে ছিলো।

উমাইয়াগাণ যেহেতু এসব অঞ্চল যুদ্ধের মাধ্যমে জয় করেছিলেন, তাই তাদের শাসনের সরয়ী বৈধতা ছিল সম্পূর্ণ সংশয়মুক্ত ।

বিপরীতে উমাইয়াদের বিরুদ্ধে আব্বাসিয়দের বিপ্লব-অভ্যুত্থান কোনভাবেই সমালোচনা ও আপত্তির ঊর্ধ্বে ছিল না।

সুতরাং আব্দুর রহমান বিন মুয়াবিয়ার ন্যায় একজন উমাইয়া রাজপুত্রের মাগরেবের মাটিতে অবস্থান মাগরিবের প্রশাসকের মাঝে শঙ্কা,

উৎকণ্ঠা ও অস্বস্তির এক চোরা সৃষ্টি করবে, এটাই স্বাভাবিক। কেননা, একজন উমাইয়া শাহজাদা তার মহান পিতামহদের মীরাস এ অঞ্চলের শাসন ক্ষমতা লাভের

অধিকার বেশি রাখেন। আর স্বাভাবিকভাবেই এ আশঙ্কা পরবর্তী সময়ে আন্দালুসপ্রশাসকের মনেও সৃষ্টি হবে।

আব্দুর রহমান বিন হাবীবের মাথায় এসব চিন্তা ঘুর খাচ্ছিল। বরং নিশ্চিত করেই বলা যায়, এসব চিন্তা তখন নেতৃত্বের উপযুক্ত প্রতিটি চিন্তাশীল

ব্যক্তির মাথায়ই আলোড়ন তুলছিল।
এই হল আব্দুর রহমান বিন হাবীবের আন্দালুসস্বপ্ন বাধাগ্রস্ত হওয়ার বাস্তব দিক।

আর বিস্ময়কর দিকটি হলো একটি ভবিষ্যদ্বাণী প্রসঙ্গ। এবার সে আলোচনায় আসছি।

ইতিহাস-গ্রন্থাবলীর ঐক্যমত্য বর্ণনা মতে, উমাইয়া বংশের মহান বীর সেনানী, ককেশীয় অঞ্চলসহ

উত্তরের বিভিন্ন অঞ্চলে অভিযানের মহানায়ক মাসলামা বিন আব্দুল মালিক পূর্বেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, অচিরেই মুসলিম প্রাচ্যে উমাইয়া সালতানাতের পতন ঘটবে,

আর জনৈক উমাইয়া তরুণ প্রাচ্য থেকে প্রতীচ্যের মাগরেব অঞ্চলে পালিয়ে গিয়ে উমাইয়াদের শাসন-ক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করবে।

কোন কোন গ্রন্থের বর্ণনায় অতিরিক্ত একথাও আছে যে, তিনি অনুমান করেছিলেন, আব্দুর রহমান বিন মুয়াবিয়াই হবেন সেই যুবক,

যিনি প্রাচ্যে উমাইয়া শাসনব্যবস্থার বিলুপ্তির পর মুসলিম প্রতীচ্যে তা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবেন। মূলত এ ভবিষ্যদ্বাণীর আলোকেই ঐতিহাসিকদের অনেকে

পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহকে বিশ্লেষণ করেছেন। তাদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী এ ভবিষদ্বাণীর কারণেই আব্বাসীগণ বিশেষভাবে আব্দুর রহমান বিন মুয়াবিয়ার নাগাল পেতে মরিয়া হয়ে

উঠেছিলএবং এ কারণেই আব্দুর রহমান বিন মুয়াবিয়া পালিয়ে অন্য কোথাও না গিয়ে মাগরীবের পথে অগ্রসর হয়েছিলেন।

এ ভবিষ্যদ্বাণীর কারণেই খলীফা হিশাম বিন আব্দুল মালিক তার সন্তান ও অন্যান্য পৌত্রদের তুলনায় পৌত্র আব্দুর রহমানকে বেশি স্নেহ ও তত্ত্বাবধান করতেন

এবং এ কারণেই আব্দুর রহমান বিন হাবীব কায়রোয়ানে আব্দুর রহমান বিন মুয়াবিয়াকে হত্যা কারার চেষ্টা করেছিলেন।

ভবিষ্যদ্বাণীতে আরও আছে, সেই ‘ভবিষ্যৎ আন্দালুস-শাসক' প্রলম্বিত কেশগুচ্ছের অধিকারী হবেন এবং তিনি আপন কেশগুচ্ছকে দুটি বিনুনি করে রাখবেন।

ভবিষ্যদ্বাণীর অভিনবত্ব ও বিস্ময়মাতা আরো বৃদ্ধি পায় যখন জানা যায় যে, আব্দুর রহমান বিন মুয়াবিয়া এমন কেশগুচ্ছেরই অধিকারী ছিলেন।

আরো আশ্চর্যের বিষয়, আব্দুর রহমান বিন হাবীবের কেশগুচ্ছও ছিল একই ধরনের। এদিকে আব্দুর রহমান বিন হাবীবও আন্দালুসের অধিকর্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন।

কেননা, তিনিও ছিলেন শাহজাদা ও দুই বিনুনির অধিকারী। আর তাই ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবায়নে তার প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারেন, এমন কারো আবির্ভাব তার কাছে এক মহা সমস্যারূপেই

বিবেচিত হল এবং তিনি তা থেকে নিস্কৃতির পথ ও পন্থা খুঁজতে লাগলেন।

আব্দুর রহমান বিন হাবিব ভবিষ্যদ্ববাণীর কথা তার জনৈক ইহুদি অনুচরের কাছ থেকে শুনে ছিলেন। সে ইতঃপূর্বে ভবিষ্যদ্বক্তা মাসলামা বিন আব্দুল মালিকের সেবা করতো।

সে-ই আব্দুর রহমান বিন হাবীবকে মাসলামার এ অনুমানের কথা জানিয়েছিল যে , মুসলিম প্রাচ্যে উমাইয়া শাসন ব্যবস্থার পতনের পর জনৈক উমাইয়া যুবক

মুসলিম বিশ্বের পশ্চিমাঞ্চলে রাষ্ট্রক্ষমতার অধিকারী হবে। পলাতক উমাইয়াদের অনেকেই যখন মাগরেব ভূমিতে আশ্রয় নিতে লাগলো,

তখন আব্দুর রহমান বিন হাবিব এর আশঙ্কা আরও বৃদ্ধি পেল। তিনি আশঙ্কা করলেন, এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই তার দেশে উমাইয়া গুষ্টি একটি শক্তিশালী

ও সঙ্ঘবদ্ধ জোটে পরিণত হবে। এ আশঙ্কায় তিনি আশ্রয় নেওয়া উমাইয়াদের অনেককেই তাড়িয়ে দিলেন, ওয়ালিদ বিন ইয়াজিদের দুই সন্তানকে হত্যা করলেন ,

ইসমাঈল বিন আবান বিন আব্দুল আযীয বিন মারওয়ানের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে তার বোনকেজোরপূর্বক বিয়ে করেন।

এরপর সর্বশক্তি নিয়োগ করলেন আব্দুর রহমান বিন মুয়াবিয়া খুঁজে। শত্রুর নাগাল থেকে নিজেকে রক্ষার প্রাণান্ত চেষ্টায় দীর্ঘদিন যাবৎ ছুটে বেড়ানো আব্দুর রহমান

বিন মুয়াবিয়ার এ ধরনের তৎপরতার খবর অজানা থাকার কথা নয়। তার বিরুদ্ধে আব্দুর রহমান বিন হাবীবের এই অভিযানের সংবাদ পেয়ে তিনি

কায়রোয়ান ছেড়ে টাডলায় চলে গেলেন। এরপর সেখান থেকে আশ্রয় নিলেন মাগরেবের উপকূলবর্তী এলাকায় নাফযা গোত্র অধ্যুষিত অঞ্চলে।

নাফযা গোত্র ছিল তার মাতুল বংশীয় । কেননা, আব্দুর রহমানের মা নাফযা গোত্রেরই ছিলেন। অবশ্য এ এলাকাও তার জন্য নিরাপদ ছিল না।

কারণ, এ অঞ্চলে খারেজী ফিরকার বহুলোকের অস্তিত্ব ছিল, যারা উমাইয়াদের মনেপ্রাণে ঘৃণা করতো। তাই এ অঞ্চলে অবস্থান তার জন্য ছিল পতনোন্মুগ

খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে আত্মহত্যার নামান্তর। প্রকৃতপক্ষে পরিস্থিতির দাবি অনুযায়ী তখন আব্দুর রহমান বিন মুয়াবিয়ার আন্দালুস ছাড়া অন্য কোথাও

যাওয়ার সুযোগ ছিল না। আর ভবিষ্যদ্বাণীর দিক বিবেচনা করলে আমরা বলতে পারি, আন্দালুস ভূমি আব্দুর রহমান বিন মুয়াবিয়া একমাত্র নিরাপদ গন্তব্য ছিল না;

শৈশবে যেদিন তিনি তার পিতামহ মাসলামা বিন আব্দুল মালিকের মুখ থেকে আন্দালুসের কথা শুনে ছিলেন, সেদিন থেকেই আন্দালুস ছিল তার কাঙ্ক্ষিত ও প্রত্যাশিত গন্তব্য।

আব্দুর রহমান বিন মুয়াবিয়ার মাথা তখন পুরো মুসলিম বিশ্বের প্রতিটি অঞ্চলে সবচেয়ে মূল্যবান মস্তক। প্রাচ্যের সীমান্তে পারস্য ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে তখন ছিল

আব্বাসীয়দের প্রবল প্রতাপ ও শক্তিশালী দুর্গ। সেসময় পারস্যের শাসনকর্তা ছিলেন প্রতাপশালী ও স্বৈরাচারী শাসক আবু মুসলিম খোরাসানী,

নৃশংসতার কারণে যিনি পরিচিত ছিলেন আব্বাসের হাজ্জাজ নামে। ইরাকে ছিল আব্বাসীয় খিলাফতের রাজধানী।

শাম ও মিশরেও ইতোমধ্যে আব্বাসীয়দের প্রতিপত্তি সুদৃঢ় হয়েছিল। উত্তর আফ্রিকা ও মাগরেবে আব্দুর রহমানকে খুঁজে ফিরছিলো খারেজীরা এবং আব্দুর রহমান বিন হাবীব।

একজন সাধারন মানুষকেও যদি এভাবে খুঁজে ফেরা হয়, তবে তার জীবন হয়ে পড়ে কঠিন সংকটাপন্ন; সেখানে কাঙ্খিত ব্যক্তিটি যদি হন

আব্দুর রহমান বিন মুয়াবিয়ার মতো কেউ, তৎকালীন শাসকপরিবার বনু আব্বাসের দৃষ্টিতে যিনি বনু উমাইয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ,

নিজ ভূখণ্ডে যার উপস্থিতিকেও প্রত্যেক প্রশাসক অনিরাপদ মনে করেন, তাহলে তার জীবন টা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, তা বলাই বাহুল্য। আর তাই,

বাস্তবতার নিরিখে বলতে গেলে আব্দুর রহমান বিন মুয়াবিয়ার সামনের পথ ছিল সুস্পষ্ট, বাঁচতে চাইলে শাসক বা প্রশাসক হয়ে বেঁচে থাকা;

আর এভাবে বাঁচতে না পারলে মৃত্যুকে বরণ করে নেওয়া। সুতরাং বাস্তবতা তার নিয়ম মেনেই

অগ্রসর হলো। বিভিন্ন কারণেই আন্দালুস ভূমি আব্দুর রহমান বিন মুয়াবিয়ার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত ভূমি ছিল।

উল্লেখযোগ্য দুটি কারণ হলো,
১. আন্দালুস ছিল আব্বাসী খেলাফত ও খারেজীদের নাগাল থেকে দূরে ।

২. আন্দালুসের পরিস্থিতি তখন একেবারে অশান্ত ছিল; যেমনটি আমরা প্রশাসক আমলের দ্বিতীয় স্তরের একেবারে শেষ সময়ের প্রশাসক ইউসুফ আলফিহরীর আলোচনায়

উল্লেখ করে এসেছি। আন্দালুস যদি তখন আব্বাসী খেলাফতের অধীনে থাকতো, আব্দুর রহমান কিছুতেই সেখানে প্রবেশ করতে পারতেন না।

ঠিক তেমনই আন্দালুস খারেজী চিন্তাধারার মাধ্যমে প্রভাবিত থাকলেও তিনি পারতেন না সেখানে প্রবেশ করতে।

এসব বিবেচনায় ক্রমাগত বিদ্রোহপ্রবাহে ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ হওয়া সত্ত্বেও দুর্গম আন্দালুসই ছিল তার জন্য সবচেয়ে অনুকূল স্থান।

আব্দুর রহমান বিন মুয়াবিয়ার আন্দালুস-প্রবেশ পরিকল্পনাঃ

১৩৬ হিজরীতে (৭৫৩ খৃস্টাব্দে) আব্দুর রহমান বিন মুয়াবিয়া আন্দালুসে প্রবেশ করার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করলেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করলেন তা হল,

১. তিনি আন্দালুসের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং সেখানকার প্রশাসনে প্রভাবশালী শক্তিগুলো সম্বন্ধে ধারণা নেওয়ার জন্য তার মুক্ত ক্রীতদাস বদরকে আন্দালুসে প্রেরণ করলেন।

আন্দালুসে তখন ইয়ামেনী ও কায়েসীদের মধ্যে বিবাদ চলছিল। ইয়ামেনি দের নেতৃত্বে ছিলেন আবুস সবাহ আলইয়াহসাফী , আর কায়সীদের নেতৃত্বে ছিলেন

আবু জাওশান শামিল বিন হাতিম। মূলত এ দু'পক্ষই ছিল শাসনকর্তা ইউসুফ আলফিহরীর রাষ্ট্র ক্ষমতার মূল চালিকাশক্তি।

২. বদরের মাধ্যমে আন্দালুসে বসবাসরত উমাইয়া রাজবংশের সমর্থকদের পরিচয় জানার পর তিনি তাদের সঙ্গে পত্রের মাধ্যমে যোগাযোগ করলেন।

বাস্তবে তখন অনেকেই উমাইয়া রাজবংশের প্রতি প্রবল অনুরাগী ছিল। খলিফা ওমর রাযিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু, উসমান রাযিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু

ও আলী রাযিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর খেলাফতকালে শামের গভর্নর বিশিষ্ট সাহাবী হযরত মুয়াবিয়া রাযিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর সময় থেকেই ইসলামী বিশ্বের বিভিন্ন

অঞ্চলের মুসলমানগন উমাইয়া বংশকে ভালোবাসতো। এরপর কালের পরিক্রমায় দান ও উদারতা, প্রজ্ঞা ও রাষ্ট্রনীতি, জনমানুষের আস্থা অর্জন,

সদাচার ও ইসলামী বিজয়াভিযানে নেতৃত্বদান এবং দ্বীনের প্রচার প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা রাখার কারণে বনু উমাইয়া বিশেষ খ্যাতি লাভ করে।

একারণেই আন্দালুসের অভ্যন্তরেও উমাইয়া গোত্র ও অন্যান্য বিভিন্ন গোত্রের জনগোষ্ঠীর মধ্যে উমাইয়া রাজবংশের প্রতি অনুরাগী প্রচুর সমর্থক ছিল।

৩. পত্র-যোগাযোগের মাধ্যমে আন্দালুসে বসবাসরত সকল উমাইয়া বংশোদ্ভুত ব্যক্তির কাছে তিনি নিজের পরিকল্পনা উপস্থাপন করলেন,

তার আন্দালুসে আগমনের র কথা ব্যক্ত করলেন এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তাদের সাহায্য-সহযোগিতা কামনা করলেন।

৪. তার মুক্ত ক্রীতদাস বদর অত্যন্ত কার্যকর যে পদক্ষেপটি বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হলেন তা হল, বদর প্রথমে আন্দালুসে বসবাসরত বনু উমাইয়ার মাওয়ালী

( ও মাইয়া রাজ পরিবার কর্তৃক মুক্ত ক্রীতদাসগণ ) ও তাদের নেতা আবু ওসমানের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন।

এরপর তাদের মাধ্যমে কায়সীদের সঙ্গে মৈত্রী স্থাপনের চেষ্টা করলেন। কিন্তু কায়সীদের নেতা শামিল বিন হাতিম, যিনি প্রশাসক আলফিহরির মূল নিয়ন্ত্রক ছিলেন,

আন্দালুসে একজন উমাইয়া রাজপুত্রের উপস্থিতির ব্যাপারে সুস্পষ্ট ভাষায় শঙ্কা ও আপত্তি প্রকাশ করলেন। কারণ, আব্দুর রহমান বিন মুয়াবিয়া আগমন করলে প্রশাসনে

কায়সীদের সেই প্রভাব-প্রতিপত্তি কিছুতেই থাকবে না, যা বর্তমানে আলফিহরীর প্রশাসনে আছে। এখনতো তারা চাইলেই আলফিহরীকে ক্ষমতায় রাখতে পারে,

চাইলেই পারে অপসারণ করতে। কায়সীদের কাছ থেকে নিরাশ হয়ে বদর ও উমাইয়া মাওয়ালীরা ওপর শক্তিশালী পক্ষ ইয়ামেনীদের কাছে গেলে তারা

সাদরে মৈত্রী প্রস্তাব গ্রহণ করল। এভাবে আব্দুর রহমান বিন মুয়াবিয়ার গুরুত্বপূর্ণ একটি পরিকল্পনা সার্থকভাবে সম্পন্ন হল।

বদর সফলতার সঙ্গে আপন দায়িত্ব সমাপন করলেন। এরপর তিনি একজন বার্তাবাহকের মাধ্যমে আব্দুর রহমানের কাছে বার্তা পাঠালেন যে,

পরিস্থিতি এখন আপনাকে আন্দালুস-ভূমিতে স্বাগত জানাতে পূর্ণ প্রস্তুত। বার্তা পাওয়ার পর আব্দুর রহমান বার্তাবাহককে তার নাম জিজ্ঞেস করলেন।

সে জানালো, তার নাম তামাম ( পূর্ণতা ) । তিনি তার উপনাম জিজ্ঞেস করায় সে জানালো, তার উপনাম আবু গালিব (বিজয়ীর পিতা) ।

সু-লক্ষণে আনন্দিত হয়ে আব্দুর রহমান বলে উঠলেন, আল্লাহু আকবার! তাহলে তো আমাদের লক্ষ্য ‘পূর্ণ' হয়েই গেছে

আর আল্লাহ পাকের দয়া ও অনুগ্রহে আমরা ‘বিজয়' অর্জন করতে যাচ্ছি।

এরপর তিনি সফরের প্রস্তুতি নিলেন এবং সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার জন্য একটি নৌযানের ব্যবস্থা করলেন, যা তাকে নিয়ে যাবে অনিশ্চিত আগামীর পথে।

আন্দালুস ভূমিতে আব্দুর রহমান বিন মুআবিয়াঃ

আব্দুর রহমান বিন মুয়াবিয়া একাকী আন্দালুসের তীরে অবতরণ করালেন। সৈকতে তার মুক্ত ক্রীতদাস বদর তাকে স্বাগত জানালেন।

সে সময় আন্দালুসের শাসনকর্তা ছিলেন ইউসুফ আলফিহরী। স্বভাবতই তিনি তখন দেশের উত্তর অংশে বিদ্রোহ দমনে ব্যস্ত ছিলেন।

আব্দুর রহমান বিন মুয়াবিয়া আন্দালুস ভূমিতে পা রাখতেই বনু উমাইয়ার সমর্থক গোষ্ঠী, আমাজিগ সম্প্রদায় ও প্রশাসক ইউসুফ আলফিহরীর প্রতিপক্ষ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের

লোকজন তাঁর পাশে সমবেত হতে শুরু করল। তাছাড়া পালিয়ে বেঁচে যাওয়া উমাইয়া রাজবংশের জীবিত

ব্যক্তিগণও ততদিনে ইয়ামেনিদের সঙ্গে কৃত মৈত্রী চুক্তির কারণে আন্দালুসে আশ্রয় নিয়েছিল। তারাও আব্দুর রহমানের সঙ্গে যোগ দিলো।

সে সময় আন্দালুসে ইয়ামেনীদের নেতৃত্বে ছিলেন আবুস সাবাহ আলইয়াহসবী আর ইয়ামেনীদের মূল ঘাঁটি ছিল সেভিলে।

সেভিল তৎকালে ইসলামী বিশ্বের অন্যতম প্রধান বৃহৎ নগরী হিসেবে বিবেচিত হতো। আব্দুর রহমান নিজে সেভিলে গমন করেন

এবং দীর্ঘসময় আবুস সাবাহ আলইয়াহসবীর সঙ্গে বৈঠক করলেন। এরপর আবুস সাবাহ তার আনুগত্য স্বীকার করে নিলেন।

যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পূর্বে আব্দুর রহমান বেশ কয়েকবার প্রশাসক ইউসুফ আলফিহরীর সঙ্গে পত্রের মাধ্যমে যোগাযোগ করলেন

এবং তার হৃদ্যতা কামনা করলেন। উমাইয়া খলিফা হিশাম বিন আব্দুল মালিকের পৌত্র-সম্পর্কের দাবিতে তিনি ইউসুফকে তার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের অনুরোধ করলেন

এবং আশ্বাস দিলেন যে, তাকে তিনি আন্দালুস প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদ প্রদান করবেন। কিন্তু ইউসুফ আলফিহরী আব্দুর রহমানের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন

এবং আব্দুর রহমান ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে বাহিনী প্রস্তুত করে রওয়ানা হলেন।

মাসারার যুদ্ধঃ

যুদ্ধক্ষেত্রের উভয় দিকে মুসলিম পক্ষ! এমনই এক মর্মান্তিক বাস্তবতায় উভয় পক্ষ অস্ত্রসজ্জিত অবস্থায় মুখোমুখি হলো। কিন্তু এটা অবাস্তব যে, অব্যাহত বিদ্রোহ,

অভ্যুত্থান ও বিশৃঙ্খলার শিকার আন্দালুসে তখনকার একমাত্র ও অবশ্যম্ভাবী দাবি ছিল সামরিক কোন সমাধান। 138 হিজরীর যিলহজ্ব মাসে ( ৭৫৬ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে )

মাসারা প্রান্তর নামে খ্যাত এক ঐতিহাসিক প্রান্তরে ইউসুফ আলফিহরীর বাহিনী ও আব্দুর রহমান বিন মুয়াবিয়ার বাহিনীর মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ সংঘটিত হলো।

ইউসুফ আলফিহরীর পক্ষে লড়াই করছিল কায়সীরা, আর আব্দুর রহমান বিন মুয়াবিয়ার মূল শক্তি ছিল ইয়ামেনিরা।

যুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্বে ইয়ামেনিদের নেতা আবুস সাবাহ শুনতে পেলেন, ইয়ামেনীরা বলাবলি করছে যে, আব্দুর রহমান বিন মুয়াবিয়া তো এদেশে বহিরাগত;

অধিকন্তু তার সঙ্গে আছে ধূসর বর্ণের এক তাজাদম ঘোড়া । যুদ্ধে আমরা পরাজিত হলে তিনিতো যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে পালাবেন

আর আলফিহরীর বাহিনীর ( নির্মমতার শিকার হওয়ার ) জন্য আমাদের ফেলে যাবেন।

একথা আব্দুর রহমান বিন মুয়াবিয়ার কানও পৌঁছল। সদ্যই পচিঁশে পা রাখা বিচক্ষণ, তারুণ্যদীপ্ত ও আত্মমর্যাদাবোধ

সম্পন্ন সেনানায়ক আব্দুর রহমান তৎক্ষণাৎ উঠে দাঁড়িয়ে নিজেই আবুস সাবাহর কাছে উপস্থিত হলেন এবং তাকে বললেন, আমার এই ঘোড়াটি অত্যন্ত দ্রুতগতিসম্পন্ন,

যুদ্ধ চলাকালে এর পিঠে বসে আমার পক্ষে তরবারি-বর্শা চালানো সম্ভব হবে না। তাই আপনি চাইলে আমার ঘোড়াটি নিয়ে আপনার খচ্চরটি আমাকে দিতে পারেন।

এরপর তিনি নিজের দ্রুতগামী ঘোড়াটি আবুস সবাহকে দিয়ে আর খচ্চরটি নিলেন এবং খচ্চরে আরোহন করেই যুদ্ধক্ষেত্রে অগ্রসর হলেন।

তখনই আমেনীরা বলাবলি করতে লাগল, ‘এ-তো যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালাতে ইচ্ছুক কাপুরুষ কোন সৈনিকের আচরণ নয়; এযে এমন বীর যোদ্ধার দুর্বিনীত আচরণ,

রণাঙ্গনে যিনি মৃত্যুকে খুঁজে ফিরছেন।' প্রবল যুদ্ধের পর আব্দুর রহমান বিন মুয়াবিয়া জয়ী হলেন এবং প্রতিপক্ষের পরাজিত নেতা ইউসুফ আলফিহরী পালিয়ে গেলেন।

সংকলনেঃ গবেষক,কলমিষ্ট,কবি হাতিম আল-ফেরদৌসী

About Muhammad abdal

আমি মুহাম্মদ আব্দুর রহমান আবদাল।দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স) সম্পন্ন করেছি ২০২১ ইংরেজি সনে । লেখালেখি পছন্দ করি।তাই সময় পেলেই লেখতে বসি। নিজে যা জানি তা অন্যকে জানাতে পছন্দ করি,তাই মুসলিমবিডি ওয়েব সাইটে লেখা প্রকাশ করি। ফেসবুকে ফলো করুন👉 MD ABDALツ

Check Also

রাসুল(সা.)-এর ঘোড়া ঘোড়াসমূ ঘোড়াসমূহের নাম

রাসুল (সা.)-এর ঘোড়াসমূহের নাম

(মুসলিম বিডি ২৪.কম)  بسم الله الرحمن الرحيم রাসুল (সা.)-এর নিকট বেশ কয়েকটি ঘোড়া ছিলো। এগুলোর …

Powered by

Hosted By ShareWebHost