(মুসলিমবিডি২৪ডটকম)
بسم الله الرحمن الرحيم
এতেকাফের নিয়তে মসজিদে অবস্থান করাকে এতেকাফ বলে। হানাফীগণের নিকট এতেকাফ তিন প্রকার
প্রথম প্রকার
ওয়াজিব এতেকাফ,যাহা কোন কাজের উপর মান্নাত করার কারণে ওয়াজিব হয়।
যেমনঃ কেহ বলিল যে, যদি আমার অমুক কাজটি হইয়া যায়,তবে আমি এতদিন এতেকাফ করিব।
অথবা কোন কাজের শর্ত ব্যতীত এমনিতেই এইরূপ মান্নাত করিল যে,
আমি আমার উপর এতদিনের এতেকাফ জরুরী করিয়া নিলাম।
অর্থাৎ আমি অবশ্যই এতদিন এতেকাফ করিব-এইভাবে বলিলেও এতেকাফ ওয়াজিব হইয়া যায় ।
এতএব, যতদিনের নিয়ত করিবে ততদিনের এতেকাফ করা জরুরী হইবে।
দ্বিতীয় প্রকার
সুন্নত এতকাফ, যাহা রমযান মাসের শেষ দশ দিনে করা হয়।
হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দিনগুলিতে এতকাফ করিতেন।
তৃতীয় প্রকার
নফল এতেকাফ, ইহার জন্য কোন সময় বা দিনকাল নির্দিষ্ট নাই ।
যতক্ষণ বা যতদিন ইচ্ছা করা যাইবে এমনকি কেহ সারাজীবন এতকাফের নিয়ত করিলেও জায়েয হইব।
তবে কম সময়ের জন্য এতকাফের নিয়তের ব্যাপারে মতভেদ আছে।
ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ) এর মতে একদিনের কম এতকাফ জায়েয নয়।
ইমাম মুহাম্মদ (রহঃ) এর মতে সামান্য সময়ের জন্যও এতেকাফ নিয়ত করিয়া নিবে।
তাহা হইলে যতক্ষণ সে নামায ইত্যাদি অন্যান্য এবাদত-বন্দেগীতে মশগুল থাকিবে, ততক্ষন সে এতেকাফেরও সওয়াব পাইয়া যাইবে।
আমি আমার আব্বাজান (রহঃ) কে সর্বদা এই এহতেমাম করিতে দেখিয়াছি যে, তিনি যখন মসজিদে তাশরীফ নিয়া যাইতেন,
তখন ডান পা মসজিদে রাখার সঙ্গে সঙ্গেই এতকাফের নিয়ত করিয়া নিতেন।
খাদেমগণকে তালীম দেওয়ার জন্য কখনও কখনও আওয়াজ করিয়াও নিয়ত করিতেন। এতকাফের সওয়াব অনেক বেশী ।
এতকাফের ফযীলত ইহার চাইতে বেশী আর কী হইবে যে, স্বয়ং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদা ইহার এহতেমাম করিতেন ।
এতেকাফকারীর দৃষ্টান্ত হইল
ঐ ব্যক্তির মত যে কাহরও দরজায় গিয়া পড়িয়া রহিল আর বলিতে থাকিল যে,
আমার দরখাস্ত মঞ্জুর না হওয়া পর্যন্ত আমি এখান হইতে যাইব না।
অর্থাৎঃ তোমার পদতলে আমার জীবন শেষ হউক-
ইহাই আমার হৃদয়ের আকুতি, ইহাই আমার পরম প্রাপ্তি।
প্রকৃতপক্ষেই যদি কাহারও অবস্থা এ-ই হয় তবে চরম নিষ্ঠুর হৃদয়ও না গলিয়া পারে না।
আর অসীম দয়াবান আল্লাহ তায়ালা তো দেওয়ার জন্য বাহানা তালাশ করেন।
বরং কোন বাহানা ছাড়াই দান করিয়া থাকেন।
হে দয়াময়! তুমি তো এমন দাতা যে, দেওয়ার জন্য তোমার রহমতের দরজা সর্বদাই উন্মুক্ত থাকে।
আল্লাহর দানের অবস্থা হযরত মূসা (আঃ) কে জিজ্ঞাসা কর।
যিনি আগুন আনিতে যাইয়া পয়গাম্বরী পাইয়া গেলেন।
এতএব, কোন ব্যক্তি যখন দুনিয়ার যাবতীয় সংস্রব ছিন্ন করিয়া মহান আল্লার দরবারে আছাড়াইয়া পড়িবে
তখন তাহার মনোবাঞ্ছা পূরণের ব্যাপারে কি কোন দ্বিধা থাকিতে পারে!
আল্লাহ তায়ালা যখন কাহাকেও দিবেন তখন আল্লাহ তায়ালার ভরপুর খাযানার বর্ণনা করিতে পারে?
তবে হাঁ, এরূপ স্থির সিদ্ধান্ত নিয়া নিবে যেমন কবি বলেন-
যে ফূলকে হৃদয় দিয়াছি, যে ফূলের জন্য আমি কুরবান,
সেই ফূল হয়ত হাতে আসিবে; নতুবা জীবন পাখী পিঞ্জর ছিঁড়িয়া উড়িয়া যাইবে। ইবনে কায়্যিম (রহঃ) বলেন,
এতকাফের মূল উদ্দেশ্য এবং উহার প্রাণ হইল,
অন্তরকে আল্লাহ তায়ালার পাক যাতের সহিত এমনভাবে সম্পর্কযুক্ত করিয়া নেওয়া যে,
পার্থিব সকল মোহ ছিন্ন হইয়া আল্লাহ পাকের সহিত মিলিত হইয়া যায়।
দুনিয়ার সমস্ত ধ্যান –খেয়ালের পরিবর্তে একমাত্র আল্লাহ পাকের ধ্যান-খেয়ালে নিমগ্ন হইয়া যায়।
গায়রুল্লার সকল মায়াজাল ছিন্ন করিয়া এমনভাবে আল্লাহর অনন্ত সান্নিধ্যে ডুবিয়া যাইবে যে,
সকল চিন্তা –চেতনা ও কল্পনায় একমাত্র তাঁহারই পাক যিকির এবং তাঁহারই মহব্বত প্রবিষ্ট হইয়া যায়।
মাখলুকের ভালবাসা বিদূরিত হইয়া শুধু আল্লাহর সুনির্মল ভালবাসাই হৃদয়-মনে সৃষ্টি হইয়া যাইবে।
এই ভালবাসাই নির্জন কবরের ভয়ংকর পরিস্থিতিতে কাজে আসবে।
কারণ সেইদিন আল্লাহ তায়ালার পাক যাত ব্যতীত একান্ত বন্ধু ও সান্ত্বনা দানকারী আর কেহ থাকিবে না ।
পূর্ব হইতেই যদি তাহার সহিত মনের সম্পর্ক কায়েম হইয়া থাকে তবে সেখানে কি আনন্দ –উপভোগেই না সময় কাটিবে।
আমার মন সেই সুবর্ণ সুযোগ খুঁজতেছে, যাহাতে রাত্রদিন প্রেমাস্পদের ধ্যানে বসিয়া থাকি।
'মারাকিল ফালাহ'এর গ্রন্থকার বলেন, এতেকাফ যদি এখলাসের সহিত হয় তবে উহা সর্বশ্রেষ্ঠ আমল।
উহার বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী বর্ণনাতীত । কারণ, ইহাতে সংসার জগতের সমস্ত মায়াজাল ছিন্ন করিয়া
অন্তরকে একমাত্র আল্লাহর ধ্যানেই মগ্ন করা হয়।
স্বীয় নফসকে মাওলা পাকের হাতে সোপর্দ করিয়া দিয়া মনিবের দুয়ারে পড়িয়া থাকা হয়।
আবার মন চায়, দারোয়ানেরে দয়ার বোঝা মাথায় লইয়া কাহারো দুয়ারে পড়িয়া থাকি।
তদুপরি উহাতে সবসময় এবাদতে মগ্ন থাকা হয় ।
কেননা, এতেকাফকারীকে ঘুমন্ত জাগ্রত সর্বাবস্থায় এবাদতকারী হিসাবে গণ্য করা হয়;
এইভাবে সর্বদা আল্লাহর নৈকট্য বিদ্যমান থাক।
হাদীসে কুদসীতে বর্ণিত হইয়াছে, আল্লাহ পাক এরশাদ করেন-
যে ব্যক্তি আমার দিকে এক হাত অগ্রসর হয় আমি তাহার দিকে দুই হাত অগ্রসর হই।
আর যে ব্যক্তি আমার দিকে ধীরে ধীরে আসে আমি তাহার দিকে দৌড়াইয়া যাই।'
ইহা ছাড়াও এতেকাফে আল্লাহর ঘরে অবস্থান করা হয় এবং দয়ালু মেজাবান সর্বদা নিজ মেহমানের সম্মান করিয়াই থাকেন।
সর্বোপরি, এতেকাফকারী আল্লাহর দূর্গে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকে যেখানে শত্রু প্রবেশ করিতে পারে না।
এই গুরুত্বপূর্ণ এবাদতের আরও অসংখ্য ফায়ায়েল ও বৈশিষ্ট্য রহিয়াছে।
মাসআলাঃ
পুরুষের জন্য এতেকাফের সর্বোত্তম স্থান হইল মক্কার মসজিদ
অর্থাৎ মসজিদে হারাম, তারপর মদীনার মসজিদে নববী, তারপর বাইতুল মুকাদ্দাসের মসজিদ।
অতঃপর জামে মসজিদ, অতঃপর স্থানীয় মহল্লার মসজিদ।
ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ) এর মতে এতেকাফ সহীহ হওয়ার জন্য মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের জামাআত হওয়ার শর্ত ।
ইমাম আবূ ইউসূফ ও ইমাম মুহাম্মদ (রহঃ)এর মতে মসজিদ হওয়াই যথেষ্ট।
জামাআত না হইলেও এতেকাফের ক্ষতি হইবে না ।
মহিলাগণ নিজের ঘরে নামাযের জন্য নির্ধারিত স্থান এতেকাফ করিবেন।
যদি ঘরে নামাযের জন্য কোন নির্ধারিত স্থান না থাকে তবে এতেকাফের জন্য কোন একটি স্থান নির্দিষ্ট করিয়া লইবেন।
পুরুষের তুলনায় মহিলাদের এতেকাফ অধিকতর সহজ ।
কেননা, তাহারা ঘরে বসিয়া নিজের মেয়ে বা অন্য কাহারও দ্বারা সংসারের কাজকর্মও করাইতে পারেন,
আবার অনায়াসে এতেকাফের সওয়াবও হাসিল করিতে পারেন।
কিন্তু এতদসত্ত্বেও মহিলাগণ এই সুন্নত হইতে প্রায় বঞ্চিতই থাকিয়া যায়।
আরো পড়ুন,শবে কদর হাজার মাসের শ্রেষ্ঠ এক রাত,তাহাজ্জুদ ও তারাবীহ নামাজের পার্থক্য এবং বিশ রাকাত তারাবীহের দলীল, নামাজে মাস্ক ব্যবহারে বৈধতা কতটুকু