Breaking News
Home / বিশ্লেষণ ও গবেষণামূলক / কোরআন ও অধুনা বিশ্বঃ নিমকহারামি আজকের জগৎ

কোরআন ও অধুনা বিশ্বঃ নিমকহারামি আজকের জগৎ

বিডি২৪ডটকম

 কোরআন ও অধুনা বিশ্বঃ নিমকহারামি আজকের জগৎ

بسم الله الرحمن الرحيم

আজকের বিশ্বে সভ্যতা ও সংস্কৃতির যেটুকুই শ্রেষ্ঠ, মনুষ্যত্ব ও নৈতিকতার যেটুকুই অবশিষ্ট এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যেটুকুই বৈপ্লবিক

অভিষ্ট তার পেছনে রয়েছে এক শক্তিশাধরতত্ত্ব ও প্রেরণার উৎস আল- কোরআন।

ছয় শত খৃস্টাব্দের বিশ্ব মনুুষ্যত্ব ও নৈতিকতার বিচারে চরম অধপতনে যে নেমে ছিলো ইতিহাস তা অনায়াসেই বলে যায়।

পূর্ববর্তী ধর্মীয় গ্রন্থাবলীর আদর্শিক শিক্ষা থেকে সরে গিয়ে নুষ কেবল বস্তুবাদী শিক্ষার প্রবর্তনের নামে শিকার হলো নতুন এক প্রবঞ্চনার।

যার দরুন সে যুগেও সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান চিকিৎসাবিজ্ঞান ইত্যাদির ধারণা থাকাসত্ত্বেও

তখনকার যামানা জাহেলী বা তার যুগ বলে বিবেচিত হলো। পাপ আর পঙ্কিলতা ছড়িয়ে পড়লো পৃথিবীময়।

কবির ভাষায়-

“এশিয়া, ইউরোপ, এমেরিকা

পৃথিবীর যত দেশ

যেন নেমেছিলো প্রতিযোগিতায়

দেখিতে পাপের শেষ। “

এ থেকেই আমরা অনুমান করতে পারি তখনকার বিশ্বের ভয়ানক চিত্র।

আবিসিনিয়া-সম্রাটের সামনে সাহাবী জাফর রা. বক্তব্যও এ ব্যাপারে অকাট্য সাক্ষী হয়ে আছে। তিনি

বলেছিলেন, __” আমরা ছিলাম জাহেলী যুগের

মূর্তিপূজা করতাম ও মৃত প্রাণীর মাংস খেয়ে ধারণ করতাম।

অনৈতিক কাজে লিপ্ত ছিলাম, পরিবারকে ত্যাগ করে আমরা তাদের রক্ষা করার মৌখিক চুক্তি লঙ্ঘন করতাম।

আমাদের মধ্যে যে সবল , দুর্বলকে গ্রাস করতো ।

যতক্ষণ পর্যন্ত না আল্লাহ আমাদের মধ্য থেকে একজনকে তাঁর দূৎ করে আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন ততক্ষণ আমাদের অবস্থা ছিলো এ রকম।

” মুর্খতা ও নৈতিক অধপতনের বিষ-বাষ্পের সেই ধারা যদি আজও অব্যাহত থাকতো

তাহলে তো মানব জাতির অবস্থা আজ লন্ড-ভন্ড হয়ে যেত।

পৃথিবী রূপ নিত ভঙ্গুর ও বিশৃঙ্খল ে। নিশ্চিত সেই ধ্বংসের মুখ থেকে ওইসব ভাগ্যহারা মানুষগুলোকে

যে জিনিস আশার আলো দান করলো তা হলো পবিত্র কোরআন।

চরম মূর্খতার যুগে যারা কোরআনী শিক্ষায় নিজেকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলেছিলেন তাঁরা হয়ে উঠেন শান্তি ও মুক্তির প্রতীক।

কোরআন থেকে লব্ধ শান্তির বার্তা নিয়ে তাঁরা সৌন্দর্য আর স্নিগ্ধতার হাওয়া ছড়াতে শুরু করেন বিশ্বের আনাচে-কানাচে ।

আরবের বর্বর ও হিংস্র মানুষগুলোকে মহানবী হযরত মুহাম্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম

এই কোরআনী তা'লীম দ্বারাই শান্ত-শিষ্ট ও উন্নত নৈতিকতার শিক্ষা দিয়ে গড়ে তুলছিলেন।

প্রফেসর পি. কে. হিট্টি তার ” দ্যা হিস্ট্রি অব দ্যা এ্যারাবিক ” নামক গ্রন্থে বলেন,__

” যে আরব এর আগে কখনও একজন মানুষের ইচ্ছার কাছে নতি স্বীকার করেনি,

সে এবার মুহাম্মদের নেতৃত্বে পরিচালিত এবং তার পরিকল্পনায় অঙ্গীভূত হবার প্রবণতা প্রকাশ করলো।”

মহান ধর্ম ইসলামকে বিশ্বাস করা ও উন্নত আদর্শ অর্জন করা সেখানকার বর্বরতার স্থান দখল করলো।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কোরআনী শিক্ষা দান যে কেবল আরবের জন্য ভাগ্যের সুপ্রসন্নতা ছিলো তা নয়,

বরং গুটা বিশ্বের জন্য তা হলো কল্যাণ ও মুক্তির আশীর্বাদ।

এর প্রমাণ ভারতবর্ষের ঐতিহাসিক টি. এইচ অর্নাল্ডের ভাষ্য থেকে স্পষ্ট পাওয়া যায়। তিনি বলেন, __

” ইসলাম এ দেশে এসেছিলো, যুগ যুগ ধরে লাঞ্ছিত ভাগ্যহারা মুখমূড় জনগণের মুক্তির প্রতিশ্রুতি নিয়ে।

” একই ভাবে পবিত্র কোরআন যে কেবল মানুষের চারিত্রিক সংশোধন ও উন্নত আদর্শের ্ভাবন করেছিলো তা নয়।

বরং পবিত্র কোরআন জীবন ও জগতের মৌলিক সমস্যাবলীর এমন নিষ্কলুষ সমাধান দিয়ে গেছে যার উপর গড়ে উঠেছে আধুনিক বিজ্ঞানের স্তম্ভ।

পবিত্র কোরআন যে বিজ্ঞানময় তা কোরআন নিজেই ঘোষণা করে।

সূরা ইয়াসীনের দ্বিতীয় আয়াতে বলা আছে,

 ওয়াল কোরআনিল হাকীম। “

_বিজ্ঞানময় কোরআনের শপথ। পবিত্র কোরআনের আগমন পূর্বে বিজ্ঞান ছিলো চরম অনুন্নত এবং অন্তহীন ত্রুটিপূর্ণ।

পরিধিতে ছিলো একেবারে সংকীর্ণ। তখন কোরআন এসে মানব জাতিকে

জ্ঞান ও সত্যের অনুসন্ধানের নির্দেশ দেয় এবং প্রাকৃতিক ঘটনাবলী ও সৃষ্টির রহস্যকে

বিচার-বুদ্ধি ও অনুধ্যানের মাধ্যমে উপলব্ধি করার প্রেরণা যোগায়।

প্রজ্ঞা প্রয়োগের ব্যাপারে কোরআন মানুষকে উৎসাহিত করে।

এভাবে কোরআন মানুষের চিন্তনমূলক বুদ্ধিকে জাগ্রত করে এবং স্বাধীন চিন্তার ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা যোগায়।

ফলে মানব জাতির চিন্তার ইতিহাসে আলোড়ন সৃষ্টিকারী এক বৈপ্লবিক অধ্যায়ের সূচনা ঘটে।

পবিত্র কোরআন এমন এক মৌলিক জ্ঞানগর্ভ গ্রন্থ,

যেখানে জ্ঞান-বিজ্ঞান , দার্শনিক চিন্তা-চেতনা ও ধ্যান-ধারণার মৌলিক উপাদান বা উপকরণ রয়েছে।

সুতরাং বিভিন্ন বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষিতে মুসলিম চিন্তাবিদগণ কোরআনের আলোকে

উদ্ভুত সমস্যা ও পরিস্থিতির বিভিন্নরকম ব্যাখ্যা দান করেছেন।

ফলে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ইত্যাদি ক্ষেত্রে গড়ে উঠেছে

নতুন নতুন মতাদর্শ, যা আধুনিক বিজ্ঞানের দ্বারকে করেছে উন্মুক্ত।

কোরআন কোন মানুষের অন্ধ আনুগত্য তো দাবি করেই না,

বরং প্রতিনিয়ত সে বিশ্বমানবকে সৃষ্টির রহস্য ও প্রাসঙ্গিক বিষয়ে নিবিড় গবেষণা করার প্রেরণা প্রদান করে।

” ইসলামে দার্শনিক চিন্তার বিকাশ “

গ্রন্থে গ্রন্থকার বিষয়টি সুন্দর ভাষায় তুলে ধরেছেন।

সেখানে আছে, __” কোরআন মাজীদ অবতরণ শুরু হয় জ্ঞানার্জনের নির্দেশ নিয়ে।

বিশ্বমানবকে মহান আল্লাহ প্রথম আদেশ দেন, __' পড়ো তোমার প্রভুর নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন।

‘ পরবর্তীতে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলা হয়, __' তিনি তোমাদের জন্য নিয়োজিত রেখেছেন রাত,দিন, সূর্য ও চন্দ্রকে।

আর নক্ষত্রগুলো তারই আদেশের বিধানাবর্তি করা হয়েছে।

নিশ্চয়ই এসবের মধ্যে বুদ্ধিমানদের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে।

‘ অন্যত্র মু'মিনদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে বলা হয়, __'

আর তারা আকাশসমূহ ও পৃথিবীর সৃষ্টিশৈলী সম্পর্কে চিন্তা-গবেষণা করে এবং বলে,

“আমাদের প্রভু! এসকল তুমি অনর্থক সৃষ্টি করনি।

” সর্বশেষে গবেষণার সাধারণ আদেশ দিয়ে আল্লাহ পাক বলেন, __

‘ অতএব, হে চক্ষুষ্মানেরা, তোমরা গবেষণা করো। ”

সৃষ্টি জগত ও তার রহস্যাদির ক্ষেত্রে জ্ঞান-বিজ্ঞান অর্জন করা

এবং এ সম্পর্কে চিন্তা করার ক্ষেত্রে পবিত্র কোরআনের এরূপ উৎসাহ প্রদান ও আহ্বান মু'মিনদের তাড়িত করে,

ফলে তারা জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল শাখায় বিপুল আগ্রহে বিচরণ করতে শুরু করেন।

জ্ঞান সন্ধানের সেই পথ ধরে বাঁধাহীন ধাবমান ভ্রমরের মতো ছুটে চলা মুসলিম চিন্তাবিদগণ

জ্ঞানের যে সুউচ্চ স্তম্ভ নির্মাণ করেছিলেন তার উপর বিশ্বের আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান চিরঋণী হয়ে আছে।

পবিত্র কোরআনের মর্মবাণীতে উদ্বুদ্ধ হয়ে মুসলিমরা যে জ্ঞানসমুদ্রে জোয়ার তুলেছিলেন তা অস্বীকার করার নয়।

তথাপি হিংসার বশে অনেক অন্ধ বিবেকবানেরা এ সত্যকে গোপন রেখে আপন আক্রোশের প্রকাশ ঘটিয়ে থাকেন।

কিন্তু নিরপেক্ষ বিচারে সত্যকে যারা নেড়ে দেখতে চেয়েছেন

তারা ভিন্ন ধর্মী হওয়া সত্যেও এ বাস্তবতাকে স্বীকার করে গেছেন।

দেখুন ঐতিহাসিক গীবন(Gibbon)-র ভাষ্য। তিনি বলেন, __

” ইসলামের অভ্যুত্থান ও বিস্তার একটি সর্বাপেক্ষা অবিস্মরণীয় বিপ্লব,

যা বিশ্বের জাতিসমূহের উপর নতুন ও স্থায়ী ছাপ রেখে গেছে। ”

দুঃখের বিষয়, যে কোরআনের বদৌলতে বিশ্ব সার্বিক ভাবে প্রাণ ফিরে পেল

সে কোরআনকে আজ উদ্যেশ্যমূলক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার হীনষড়যন্ত্র চলছে।

বিজ্ঞানী মরিস বুকাইলি যিনি পবিত্র কোরআনের একটিমাত্র আয়াতে গবেষণা করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে

বাকি জীবন কেবল পবিত্র কোরআনের উপর গবেষণা চালিয়ে বিজ্ঞানময় কোরআনের ইহ ও পরকালীন

কল্যাণের বাস্তবতা মানুষের সামনে হাতেনাতে পেশ করার চেষ্টা চালিয়ে গেছেন,

এবং কোরআনের বিপক্ষে ষড়যন্ত্রকারীর ষড়যন্ত্রের জাল স্বচক্ষে দেখে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে উঠেছিলেন,

তিনি তাঁর “দি বাইবেল দি কোরআন এন্ড সায়েন্স ” নামক গ্রন্থে লেখেছেন, __

” আধুনিক পাশ্চাত্য জগতে এবং আধুনিক শিক্ষিত সমাজে ইসলাম সম্পর্কে যে ধারণা গড়ে উঠেছে তা সর্বতোভাবে ভ্রান্তিপূর্ণ।

আর ইসলাম সম্পর্কে এই ভ্রান্তিপূর্ণ ধারণা গড়ে উঠেছে

প্রথমতঃ

অজ্ঞতার দরুন ।

দ্বিতীয়তঃ

এই ধারণা পেতে দেওয়া হয়েছে ইসলামকে সুপরিকল্পিত ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে।”

জেনেশোনে বাস্তবতার বিপক্ষে এসব মিথ্যাচার বিজ্ঞানী মরিস বুকাইলিকে মারাত্মক ভাবে ব্যথিত করেছে

যা তিনি এভাবে বর্ণনা করেন, __ ” উল্লেখ্য যে, ইসলাম ধর্মের কোন সত্য ঘটনা সম্পর্কেও যখন কিছু বলা হয়বা লেখা হয়,

দেখা যায় মিথ্যাচার চলে সেখানে সবচেয়ে মাত্রায়।

অথচ স্বীকার না করে উপায় নেই যে, কোনো বিষয়ে প্রদত্ত কোন মতামত অসত্য হলে তা যখন উপেক্ষা করা হয়

তখন তা ক্ষমার অযোগ্য হয়ে দাঁড়ায়। তাই কোন লেখক তার রচনায়

যখন ইসলাম সম্পর্কে এ ধরণের অসত্যের বেসাতি করেন তখন অবশ্যই খারাপ লাগে।

আর সেই লেখক যদি সর্বজন স্বীকৃত কোন পন্ডিত ব্যক্তি হন আর তার সেই রচনা যখন সকল মহলের নিকট

সম্মানিত ও গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হতে থাকে তাহলে সেই খারাপ লাগার মাত্রাটাও তখন বৃদ্ধি না পেয়ে পারে না। ”

বন্ধুগণ,

ইসলামকে শত্রুরা পুরো বিশ্বে তার আসল রূপ বিকৃত করে প্রচার করতে চলেছে।

ফল দাঁড়ালো এমন যে, ধর্মজ্ঞানহীন মুসলিমরাও আজ বিজাতীদের সভ্যতা ও সংস্কৃতির পিছনে লেগে গেছে।

দুঃখের বিষয়, আমরা মুসলিমরা ক্রমেই শত্রুদের বেড়াজালে নিপতিত হচ্ছি

এমনকি শেষ পর্যন্ত আমাদের মস্তিষ্ককেও ওরা বিকৃত করতে সক্ষম হতে চলছে।

অথচ, ইসলামের সৌন্দর্যেই বিশ্ব তার অস্তিত্ব ফিরে পেলো। কবির ভাষায়-

“ইসলাম সে তো পরশ মানিক

তাকে কে পেয়েছে খুঁজি ?

পরশে তাহার সোনা হল যারা

তাদেরেই মোরা বুঝি। ”

হে মুসলিম বন্ধুগণ!

দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন করো এবং নিজ ধর্মজ্ঞান হতে মণিমুক্তা কুঁড়াও আর সজাতিকে বিজারিত কবল থেকে রক্ষা করো।

লেখকঃ সাহিত্যিক,গবেষক,কলামিষ্ট কবি হাতিম আল-ফেরদৌসী।

About আবদুল্লাহ আফজাল

হাফিজ মাওঃ মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আফজাল। ২০১২ সনে হিফজ সম্পন্ন করেন। উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন২০১৬ সনে। দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) সম্পন্ন করেন ২০২০ সনে। ঠিকানা: বালাগঞ্জ, সিলেট। মোবাইল নাম্বার: 9696521460 ইমেইল:hafijafjal601@gmail.com সকল আপডেট পেতে এবং ওয়েবসাইটে লিখা পাঠাতে ফেসবুক পেজ👉MD AFJALツ ফলো করুন।

Check Also

হাদিয়া ও ঘুষের মধ্যে পার্থক্য কী?

(Muslimbd24.com) হাদিয়া ও ঘুষ এক নয়, হাদিয়া ও ঘুষের মধ্যে পার্থক্য বিরাট। হাদিয়া বা উপহার …

Powered by

Hosted By ShareWebHost