(মুসলিমবিডি২৪ডটকম)
بسم الله الر حمن الرحيم
ক্বাওমী পদ্ধতির শিক্ষাঃ অন্যদিকে ক্বাওমী পদ্ধতির শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে,
প্রচলিত আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার তুলনায় সেখানে নৈতিক মান সম্পন্ন জনগোষ্ঠী তৈরী হচ্ছে।
বলতে গেলে আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতির বিয়াবানে ক্বাওমী মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা মরুদ্যানের মতো স্নিগ্ধ,
সুরভিত ও প্রাণ চাঞ্চল্যে ভরা। তাৎপর্যপূর্ণ বৈশিষ্টগুলো নিয়ে আলোচনা করছি-
১। ক্বাওমী মাদরাসায় ধর-মার-কাট ধারার রাজনীতি চর্চা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
ফলে কাঁদা ছোঁড়াছুঁড়ি নেই। একদল অপরকে ঘায়েল করার জন্য কোন রক্তক্ষয়ী প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই।
২। ক্বাওমী মাদ্রাসায় চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড একেবারে অনুপস্থিত।
ছাত্রদের মধ্যে কোন বিবাদ-বিসম্বাদ দেখা দিলে তাৎক্ষণিক বিচার করে অপরাধীকে যথোপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হয়;
প্রয়োজনে মাদ্রাসা থেকে বের করে দেয়া হয়।
৩। অধিকাংশ ক্বাওমী মাদ্রাসায় আবাসিক ব্যবস্থা চালু আছে।
ছাত্রদেরকে হোষ্টেলে রেখে বিজ্ঞ শিক্ষকদের তত্বাবধানে তাদের পাঠদান ও চারিত্রিক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
৪। মাদ্রাসার অভ্যন্তরীণ কাজগুলো ছাত্রদের স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে করানো হয়,
যাতে পরবর্তী জীবনে আত্মনির্ভরশীল হয়ে যোগ্যতার সাথে কাজ করার গুণ ছাত্রদের মাঝে গড়ে উঠে।
৫। ক্বাওমী মাদ্রাসাগুলো সরকারী কোন সাহায্য ও অনুদান নেয় না।
দেশ-বিদেশের সর্বস্তরের মুসলমানদের অর্থায়নে এ সব প্রতিষ্ঠানের ব্যয় নির্বাহ করা হয়।
সরকারের অন্যায় চাপের কাছে নতি স্বীকার না করার জন্যই এ প্রয়াস।
৬। প্রায় ছাত্রদেরকে মাদ্রাসার পক্ষ হতে বিনা বেতনে অধ্যয়ন, ফ্রি আবাসন ও আহারের ব্যবস্থা করা হয়।
৭। শিক্ষকগণ দ্বীনি ইলমের বিকাশের স্বার্থে সামান্য বেতন নিয়ে পাঠদান করে থাকেন।
৮। ক্বাওমী মাদ্রাসায় ছাত্র-শিক্ষকদের সম্পর্ক অত্যন্ত আন্তরিক ও সুমধুর। অনেকটা গুরু-শিষ্যের ন্যায়।
৯। ক্বাওমী মাদ্রাসার ছাত্রগণ আধুনিক কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তুলনায় ভদ্র, শালীন, মার্জিত ও বিনয়ী হয়ে থাকে।
১০। ক্বাওমী মাদ্রাসায় প্রয়োজনীয় বাংলা, ইংরেজী, অংক ও ভূগোল শিক্ষা দেয়া হয়,
যাতে পরবর্তীতে এ বিষয়াবলীর উপর আরো উচ্চতর শিক্ষা নেয়া যায়।
১১। ক্বাওমী মাদ্রাসাসমূহ বার্ষিক সম্মেলন-মাহফিল করে জনগণের সাথে তাদের সম্পর্ক নবায়ন করে এবং শিক্ষা সমাপনকারী
ছাত্রদের সম্মান সূচক পাগড়ী প্রদান করা হয়। এটা অনেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনের মতো।
১২। প্রতিষ্ঠিত ক্বাওমী মাদ্রাসাগুলোতে দাওরায়ে হাদীস পাশ করা ছাত্রদের জন্য,
ইসলামী সাহিত্য ও বাংলা বিভাগের অধীনে এক/দু'বছর ব্যাপী বিশেষ কোর্স চালু রয়েছে। এ বিভাগে বাংলা, ইংরেজী সাহিত্য, গ্রামার,
ইতিহাস, ভূগোল, প্রবন্ধ রচনা, সাংবাদিকতা ও অংক শিক্ষা দেয়া হয় পূর্ণকালীন ও খন্ডকালীন শিক্ষকের মাধ্যমে।
১৩। প্রতিষ্ঠিত ক্বাওমী মাদ্রাসাসমূহ নিয়মিত মাসিক সাহিত্য ও ধর্মীয় পত্রিকা বের করে থাকে,
যার মাধ্যমে ইসলামী সাহিত্য সৃষ্টি, ধর্মীয় প্রশ্নাবলীর জবাব ও দাওয়াতী পরিবেশ গড়ে উঠছে।
এ সব জার্নালের মাধ্যমে ইসলামী ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ একদল লেখক গোষ্ঠী তৈরী হচ্ছে,
যারা সমাজ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম।
শেষ কথাঃ উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে একথা স্পষ্ট হয়েছে যে,
ক্বাওমী মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলিত রাষ্ট্রীয় শিক্ষা কাঠামোর বাইরে একটি স্বতন্ত্র শিক্ষাধারা;
একটি ব্যতিক্রমধর্মী প্রশিক্ষণ কার্যক্রম; দ্বীনের পথে নিবেদিত প্রাণ সৈনিক গড়ার এক সুরক্ষিত দূর্গ।
দারুল উলূম দেওবন্দের শিক্ষাধারায় বাংলাদেশের নগরে জনপদের প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্থাপিত হাজার হাজার ক্বাওমী মাদ্রাসা
শতাব্দী কাল ধরে কুরআন-হাদীসের জ্ঞান চর্চার মাধ্যমে ইলমে দ্বীনের মশালকে প্রজ্জ্বলিত ও অনির্বাণ রেখেছে।
এসব প্রতিষ্ঠান থেকে বিজ্ঞ আলিম, মুহাদ্দিস, মুফতী, মুনাজির তথা আল্লাহর পথে দাওয়াত দানকারীদের একটি উল্লেখযোগ্য জামায়াত বেরুচ্ছে।
পূর্বেই উল্লিখিত হয়েছে যে, বাংলাদেশের ক্বাওমী মাদ্রাসাগুলো ভারতের দারুল উলূম দেওবন্দেরই এদেশীয় সংস্করণ।
বাংলাদেশের ক্বাওমী মাদ্রাসাগুলোর অনেক নবীন ও প্রবীণ শিক্ষক দারুল উলূম দেওবন্দের ডিগ্রী প্রাপ্ত।
মাদ্রাসার পাঠ্যক্রম প্রায় এক ও অভিন্ন।
দারুল উলূম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লবোত্তর পরিস্থিতি মোকাবেলা
এবং মুসলমানদের ধর্মীয় সামাজিক জীবন থেকে শিরক-বিদআতের জঞ্জাল দূর করার মহান উদ্দেশ্যে।
দারুল উলুম দেওবন্দ সরেজমিনে পরিদর্শন করে একজন ভারতীয় প্রাক্তন মূখ্যমন্ত্রী ও সাংবাদিক যে মন্তব্য করেছেন
প্রাসঙ্গিকতার কারণে পাঠকদের উদ্দেশ্যে তা নিবেদন করছি। উত্তর প্রদেশের প্রাক্তন মূখ্যমন্ত্রী শ্রী বিশ্বনাথ দাশ বলেন-
‘‘দারুল উলূমের শিক্ষাক্রম প্রাচীন কালের শিক্ষা ব্যবস্থার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়,
যেখানে গুরু নিজের শিষ্যদের খাদ্য ও আবাসের ব্যয় ভার বহন করতো।
বর্তমান কালে যে শিক্ষা পদ্ধতি প্রবর্তিত রয়েছে তাতে ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে রূহানী সম্পর্ক নেই;
এ পদ্ধতিতে ছাত্র-শিক্ষককে একে অপর থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে গেছে।
জ্ঞান মানুষের মধ্যে যে বিনয় ও ভদ্রতা সৃষ্টি করে তার সুন্দর উদাহরণ দারুল উলূম দেওবন্দ''
নয়া দিল্লীর বহুল প্রচারিত ‘দৈনিক প্রতাপ' এর সাংবাদিক মিঃ মন মোহন লাল দেওয়ানা একদা দারুল উলূম দেওবন্দ পরিদর্শনে এসে মন্তব্য করেন-
‘‘দারুল উলূম সত্যিকার অর্থে ভারতে দেশ প্রেমের বিরাট এক ইসলামী প্রতিষ্ঠান।
যা শতাব্দীরও অধিক কাল ধরে স্বীয় প্রতিষ্ঠাতার পদাংক অনুসরণ করে ভারতের মুসলমানদের সাম্য,
প্রেম এবং দেশ ভক্তির পাঠ দিয়ে আসছে। আমাদের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঋধংযরড়হধনষব ছাত্রদেরকে,
দারুল উলূমের শিক্ষার্থীদের নিকট শিক্ষা গ্রহণ করা উচিৎ।
দারুল উলূমের বিস্তৃত অট্টালিকার কোথাও কোন চেয়ার টেবিল চোখে পড়েনি।
সমস্ত স্টাফ মাটিতে পাতানো বিছানায় বসে নিজ নিজ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
দারুল উলূমে গেলে মানুষ এমন এক দুনিয়ায় পৌঁছে যায়, যেখানে শান্তি ও নিরবতার একচ্ছত্র রাজত্ব।