(মুসলিমবিডি২৪ডটকম)
হযরত ইমাম গাজ্জালী রহ:এর জ্ঞান ও গুন গরিমার কথা পূর্ব থেকেই দূর দূরান্ত পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল।
এবং বাদশাহ নিযামুল মুলক এ খবর ভালোভাবে রাখতেন।তাই তিনি যখন বাদশাহর দরবারে পৌছলেন তখন তাকে যথেষ্ট সম্মান প্রদর্শন করা হল।
তৎকালীন সময়ে কারো জ্ঞান গরিমার কথা জানার মাধ্যম ছিল তর্ক যুদ্ধ।সময় সময় আমীরদের দরবারে আলেম উলামার তর্ক যুদ্ধের আসর বসত।
যিনি প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে পারেন,তাকে বিজয় মাল্য দিয়ে শাহী দরবার থেকে সম্মানিত করা হত।
এ তর্ক যুদ্ধ এমনি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল যে,প্রায়ই বড় বড় শহরে বিশেষ জাকজমকপূর্ণ ভাবে এসব অনুষ্ঠান হত।
জনসাধারণ বিশেষ আগ্রহের সাথে এসব অনুষ্ঠানে যোগ দিত।পরিণামে এসব তর্ক যুদ্ধ একটি প্রচলিত নিয়ম হয়ে দাড়ালো।
ইমাম গাজ্জালী রহ বাদশাহ নিযামুল মুলক এর দরবারে উপস্থিত হলে,তিনি আনুষ্ঠানিক ভাবে একটি তর্ক যুদ্ধের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
পর পর বিভিন্ন বিষয়ে কয়েকটি তর্ক যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হল,ইমাম গাজ্জালী রহ প্রতিটি যুদ্ধে বাকপটুতার বিশেষ দক্ষতায় জয়লাভ করেন।
সাথে সাথে ইমাম গাজ্জালী রহ এর সুখ্যাতি বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ল। এবং সকলেই তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে উঠলো।
এর ফল স্বরূপ নিযামুল মুলক তাকে নিজামিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ পদে বরণ করলেন।
এসময় ইমাম সাহেবের বয়স ছিল ৩৪বছর ।এরপূর্বে এত অল্প বয়সে কেউ এত বড় পদ লাভ করতে পারে নি।
নিজামিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ পদ লাভ করা কিরূপ সম্মানজনক ছিল,সে সম্পর্কে শুধু এতটুকুই বললে চলে যে,
উক্ত মাদরাসায় অধ্যক্ষ পদ লাভ করার আশায় বহু আলেম কবরে আশ্রয় নিয়েছেন।তথাপি তাদের আশা পূর্ন হয় নি।
প্রখ্যাত আলেম ও বুযুর্গ ফখরুল ইসলাম শাশী মুহাম্মদ ইবনে আহমদ নিজামিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ নিযুক্ত হওয়ার পর অধ্যাপকের আসন গ্রহণ করেন।
তখন তিনি অশ্রু গদগদ কন্ঠে এ কবিতা পাঠ করেন।”যোগ্য আলেম থেকে আ্জ পৃথিবী খালি,
তাই আমার মতো লোককে নেতৃত্ব দেওয়া হয়েছে।নতুবা আমার মতো হতভাগার নেতা হওয়া পৃথিবীর জন্য এক দুর্ভাগ্য ব্যপার”
৪৮৪ হিজরী জামাদিউল উলা মাসে ইমাম গাজ্জালী রহ:বেশ আড়ম্বরপূর্ণ অবস্থায় বাগদাদ প্রবেশ করে মাদ্রাসায়ে নিজামিয়ার অধ্যক্ষ পদ অলঙ্কৃত করেন।
কিছুদিনের মধ্যেই ইমাম গাজ্জালী রহ এর জ্ঞান-গরিমা ও বিচক্ষণতার ধরুন বাদশাহ তার মন্ত্রী সভার অন্যতম সদস্যরূপে মনোনীত করেন।
বুদ্ধির প্রখরতায় আমীর-উমারা এবং মন্ত্রী সভার অন্যান্য সদস্যরা তার গুন গ্রাহিতে পরিনত হয়।
অবস্থা এমন দাড়ালো যে, যেকোনো সমস্যার সমাধান তার পরামর্শ ছাড়া সমাধান হত না।এসময় ইসলামী সভ্যতার কেন্দ্রস্থল ছিল, সাজুকি ও আব্বাসীয় বংশ।
ইমাম গাজ্জালী রহ উভয় দরবারেই সমতুল্য ভক্তি ও শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন।
৪৮৫ হিজরী সনে মালিক শাহ সাজুকি ইন্তেকাল করেন।
শাহ মহল তুরকান খাতুন দরবারী আমীরদের চাপ দিতে লাগলেন যে, তার চার বছরের বয়স্ক পুত্র মাহমুদকে সিংহাসনে বসানো হোক।
সঙ্গে সঙ্গে বাগদাদের খলিফা তার নামে খুতবা পড়ার অনুরোধ করেন।খলিফা ও নিজের দুর্বলতার ধরুন তাতেই রাজী হলেন যে,
সাম্রাজ্যের সকল কাজ-কর্ম তুরকান খাতুনের নামে পরিচালিত হবে,এবং খুতবাহ আব্বাসীয় খলিফার নামে পঠিত হবে।
এদিকে তুরকান খাতুন বেকে বসলেন।তিনি বললেন মুদ্রায় আমার নাম অঙ্কিত হবে,এবং খুতবাহ আমার নামেই পাঠ করতে হবে।
এ সমস্যার সমাধান না হওয়ায় ইমাম গাজ্জালী রহ কে প্রতিনিধি হিসেবে তুরকান খাতুনের নিকট পাঠানো হল।
ইমাম গাজ্জালী রহ এর অমায়িক ব্যবহার ও অকাট্য যুক্তির কাছে তুরকান খাতুন নিজের দাবি প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন।
তার এসকল নসিহত ও যুক্তি শায়খ সাঈদ ইবনে কায়েস লিপিবদ্ধ করে রাখতেন।এসংকলন বিরাট গ্রন্থকারে সংকলন করে করে তার নাম দেন মাজলেসে গাজালীয়া