(মুসলিমবিডি২৪ ডটকম)
সম্মানিত ইসলাম প্রিয় তাওহীদি ভাই ও বোনেরা! জেনে রাখুন হারাম খাবার ভক্ষণ করা বিষ পান করার ন্যায় বরং এর চেয়েও ক্ষতিকর।
কারণ বিষ পানের দ্বারা দেহ হতে প্রাণ পাখি উড়ে যায়, কিন্তু হারাম খাবারের দ্বারা অন্তর কাল কুশ্রী ও হক না হক বুঝার যোগ্যতা চলে যায়।
হালাল খাবার অন্তরে এমন প্রভাব বিস্তার করে যে, ইলম ও হিকমত মাআরিফত ও নূর ইশক ও মহব্বত ইত্যাদি সৃষ্টি হয়। কবি বলেন:
যে খাবারের দ্বারা হিংসা হাসাদ জেহেল ও গাফলত দেখতে পাও,
সে খদ্য হারাম ও অপবিত্র নি:সন্দেহে বুঝে নাও।
ঘোড়ীকে যখন দেখতে পাবে গাধার বাচ্চা প্রসব করেছে,
বুঝবে সে ঘোড়ী কয় গাধার সংশ্রব গায়ে লেগেছে।
যেমন বীজ রোপণ করা হয় তেমনি ফসল উৎপাদিত হয়,
দরিয়া যখন স্বচ্ছ হয় তখনই মনি মুক্তা হয়।
মুখে যখন দিবে তুমি হালাল খাবার দাবার,
দিল তোমার ধাবিত হবে আজ্ঞাবহ হতে খোদার।
মুখে যখন দিবে তুমি হালাল খাবার দাবার,
ইশক ও মাআরিফত অর্জন হবে দিলেতে তোমার।
অর্থাৎ হালাল মাল তালাশ করা ফরজ। অন্যান্য ফরজসমূহ আদায় করার পর অর্থাৎ হালাল মাল তালাশ করা ফরজ,
কিন্তু আরকানে ইসলাম তথা নামাজ, রোজা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদির সমতুল্য নয়। কারণ হালাল মাল তালাশ করা ঐ ব্যক্তির জব্য ফরজ যার জরুরত পরিমাণ মাল নেই।
কিন্তু যে ব্যক্তির পরিবারবর্গের সবার নিত্য প্রয়োজনীয় খাবার দাবার আসবাব পত্র ইত্যাদি যে কোন পন্থায় মিটে যায় তার জন্য হালাল রুজি তালাশ করা ফরজ নহে।
আল্লাহ তায়ালা বান্দার হাজত-প্রয়োজনসমূহ মিটানোর জন্য রুজি রোজগার এর ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
ইবাদতের জন্য খাবার খাওয়া প্রয়োজন
কেননা খাবার দাবার ইত্যাদি ব্যতীত ইবাদত করা যায় না। সুতরাং ইবাদতের জন্য খাবার দাবার করা প্রয়োজন।
সুতরাং ইবাদত করতে গিয়ে যে সমস্ত খাবার দাবারের দরকার তা যদি কোনভাবে হালাল পন্থায় এসে যায় তাহলে হালাল মাল তালাশ করা ফরজ বাকি থাকে না।
বরং এর পরে মাল তালাশ করা গর্হিত ও নিন্দনীয় কারণ অধিক মাল ধন-দৌলত আল্লাহ থেকে গাফেল করে দেয়।
মাল তালাশ করতে গিয়ে ঐ পন্থা অবলম্বন করা উচিত যা দ্বারা হালাল উপার্জন ও হারাম থেকে বেচে থাকা যায়।
হারাম দ্বারা মাল-দৌলতের বরকত চলে যায় এবং নফসের পূজায় লিপ্ত হয়ে আল্লাহ থেকে গাফিল হতে হয়।
আজকাল কেহ কেহ বলে এখন হালাল মাল তালাশ করা অসম্ভব! এমন অবান্তর কথা মূর্খ জাহিল নাদান বেকূফ ছাড়া আর কেহ বলতে পারে না।
হালাল উপার্জনে আল্লাহর গায়েবী সাহায্য
কারণ যে হালাল উপার্জন করতে চায় আল্লাহ তায়ালা তাকে গায়েবী সাহায্য করেন এর ওয়াদা ও অঙ্গীকার কোরআন ও হাদীসে বহু জায়গায় উল্লেখ আছে।
যে কেহ হালাল খেতে ও হারাম থেকে পরিত্রাণ পেতে চায়, আল্লাহ তায়ালা তাকে কুদরতি ভাবে হালাল খাবারের তাওফিক দান করেন।
যারা হালাল খাবার ভক্ষণ করতে চায় আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে সসম্মানে ইজ্জতের সাথে রাখেন। যা এর অন্তরের চক্ষু উন্মুক্ত আছে তারাই তা বুঝতে সক্ষম হবে।
কবির ভাষায়:
চক্ষু যদি বন্ধ হয় দিবস রজনীতে পরিণত হয়,
তাতে কি দোষ রয়েছে সূর্য্য কিরণের।
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূল (সা.) বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র (সর্বগুণে গুণান্বিত ও সমস্ত আয়েব ও দোষ ত্রুটি হতে মুক্ত)
পবিত্র ব্যতীত গ্রহণ করেন না। অর্থাৎ হালাল মাল ব্যতীত গ্রহণ করেন না। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুমিনগণকে করেছেন যে বিষয়ে রাসূলগণকে আদেশ করেছন।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, হে রাসূলগণ! হালাল খাও ও সৎকর্ম কর এবং আল্লাহ তায়ালা ঈমানদারগণকে বলেছে, হে ঈমানদারগয়ান!
তোমাদেরকে যা রিজিক দান করা হয়েছে তা হতে পবিত্র-হালাল খাবার খাও। অত:পর রাসূল (সা.) হারাম ভক্ষণকারীগণের কথা উল্লেখ করে বলেছেন,
সে আল্লাহর রাস্তায় অধিক সফর করে নিজেকে বিলীন করে দিয়েছেন এবং তার উভয় হাতকে আসমানের দিকে উত্তোলন করে,
ওহে আমার আল্লাহ ওহে আমার আল্লাহ বলে ডাকছে। সে হারাম ভক্ষণ করছে হারাম পান করছে তার পোষাক পরিচ্ছদও হারাম এবং সে লালিত পালিত হয়েছে হারাম।
কিভাবে তার দোয়া কবুল হবে। অর্থাৎ হারাম ভক্ষণকারীর দোয়া আল্লাহ কবুল করেন না।
আমাদের ওলামাগণ থেকে কেহ কেহ বলেন যে ব্যক্তি সওয়াবের উদ্দেশ্য হারাম উপার্জন থেকে ব্যয় করে সে কাফির হয়ে যায়।
হে খোদা প্রেমিক দাবীদার মুসলমানগণ! আপনারা একটু মনের সাথে পরামর্শ করে দেখুন যে, এত কষ্টের উপার্জিত মাল হারাম হওয়ার দরুন,
আল্লাহ তায়ালার নিকট দোয়াও কবুল হয় না। হারাম উপার্জন ও ভক্ষণকারীর মাকসাদ বা উদ্দেশ্য যদিও কোন সময় কবুল হয় তাহলে বুঝতে হবে,
এটা দোয়ার কারণে নয় বরং তাকদীরি ফায়সালা হয়েছে বিধায় পূর্ণ হয়েছে। দোয়ার কারণে নয়। যেমন কাফির বেদ্বীনের মাকসাদ বা উদ্দেশ্য পুরা হয়ে থাকে।
দোয়া কবুল করার হাকিকত হল এই যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বান্দার উপর দয়ার দৃষ্টি প্রদান করে স্বীয় রহমতের দ্বারা,
তার উদ্দেশ্যকে পূরণ করে দিয়ে তার পাশাপাশি সওয়াবও দান করেন। এমন সৌভাগ্য তারই হয় যারা শরীয়্যতের বিধানাবলী পুংখানুপুংখ রূপে আদায় করে।
হারাম ভক্ষণ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা নিম্নে তোলে ধরা হল
হযরত ছায়্যিদেনা মাওলানা আবু হামেদ মোহাম্মদ গাযালী (রা.) হযরত সোহাইল (রা.) হতে বর্ণনা করেন,
যে ব্যক্তি হারাম ভক্ষণ করে পঞ্চ ইন্দ্রিয় তার আকলের হুকুমকে ছেড়ে দেয়। অর্থাৎ আকল নেক কাজের আদেশ করে এবং শরীয়তের পূর্ণ অনুসারী হওয়ার জন্যে আদেশ করে।
কিন্তু পঞ্চিইন্দ্রিয় তা নিষেধ করে। কিন্তু এ কথা তাদেরই বুঝে আসবে যাদের অন্তরের চোখ খোলা আছে।
তবে যাদের অন্তর গোনাহের দ্বারা আচ্ছাদিত হয়ে গিয়েছে তারাতো নফসের চাহিদা মিটানোর জন্য দুনিয়ার ভোগ বিলাসে নিমজ্জিত হয়ে হাবুডুবু খাচ্ছে।
হযরত ছায়্যিদেনা আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক (রহ.) যিনি বহুত বড় আলিম ও জাহিদ ছিলেন এবং ইমাম আবু হানীফা (রাহ.)-এর ছাত্র ছিলেন।
তিনি বলেন এক দিরহাম সন্দেহ যুক্ত মাল তথা হালাল না হারাম, যাহা অজানা এমন এক দেরহাম ফিরিয়ে দেওয়া,
যাহা আমার কাছে হাদিয়া স্বরূপ বা অন্য কোন উপায়ে এসেছে ৬ লক্ষ দিরহাম আল্লাহর রাস্তায় দান করা হতে উত্তম।
হে ইসলাম প্রিয় তাওহীদি ভাই ও বোনেরা! এবার একটু চিন্তা করে দেখুন সন্দেহযুক্ত মালের যদি এ অবস্থা হয় তাহলে পরিষ্কার হারাম মালের কি অবস্থা হবে?
কিন্তু শত সহস্র আফসোস আমরা পরিষ্কার হারাম মালকে গ্রহণ করতে দ্বিধাবোধ করি না।
জেনে রাখুন হারাম হতে বাচা ও হারাম মাল ভক্ষণ করা থেকে বেচে থাকা প্রত্যেক মুসলমান নর নারীর উপর ফরজ বা কর্তব্য।
হারাম মাল ভক্ষণ করার দ্বারা নফসের মধ্যে অসীম কুপ্রভাব সৃষ্টি হয় যা মানুষের জন্য উভয় জাহানের ধ্বংসের কারণ হয়।
হযরত নুমান ইবনে বিশির (রাহ.) হতে বর্ণিত
রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন হালাল ও হারাম উভয়টিই স্পষ্ট এতদুভয়ের মধ্যে রয়েছে মুশতাবিহাত তথা সসন্দেহযুক্ত,
যে বিষয়ে অধিকাংশ লোক জ্ঞাত নয়। যে ব্যক্তি এ সন্দেহজনক বিষয় থেকে বেচে থাকবে সে তার দ্বীন ও ইজ্জতকে হিফাজত করল।
যে ব্যক্তি সন্দেহযুক্ত বিষয়ে পতিত হয়ে গেল সে হারামেও পতিত হয়ে যাবে।
যেমন রাখাল সীমান্ত এলাকার নিকট গিয়ে যদি মেশ, গরু, ছাগল ইত্যাদি চড়ায় তাহলে আশংকা আছে সীমানার ভিতর চলে যাওয়ার।
খবরদার জেনে রাখুন! প্রত্যেক শহরেরই সীমান্ত এলাকা তথা নিজস্ব সংরক্ষিত এলাকা আছে। আর আল্লাহর সীমান্ত এলাকা হল হারাম সমূহ।
অর্থাৎ হারামে পতিত হওয়া মানে আল্লাহর সীমানা অতিক্রম করে চলে যাওয়া।
হাদীস শরীফে আছে;- নিশ্চয় প্রত্যেকের শরীর একটি গোস্তের টুকরা আছে এ টুকরা যদি সুস্থ থাকে তাহলে সমস্ত শরীর সুস্থ থাকে।
আর সে টুকরা যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে সমস্ত দেহ অসুস্থ হয়ে পড়ে। আর সে টুকরার নামই হল কলব বা আত্না।
(বুখারী মুসলিম)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা হতে বর্ণিত
রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি হারাম উপার্জিত মাল আল্লাহর রাস্তায় দান করে তা গ্রহণযোগ্য হয় না এবং তার দ্বাএয়া মালে বরকতও হয় না।
ঐ হারাম মাল রেখে মৃত্যুবরণ করলে উহা দোযখের অগ্নি বৃদ্ধি হওয়ার কারণ হয়।
(আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এক গোনাহের দ্বারা অপর গোনাহ মিটিয়ে দেন না বরং গোনাহ আরো বৃদ্ধি করে দেন) অর্থাৎ হারাম মাল সদকা করার দ্বারা গোনাহ মাফ হয় না।
কিন্তু আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সৎকাজের দ্বারা গোনাহকে মিটিয়ে দেন। হালাল মাল সদকা করার দ্বারা গোনাহ মিটে যায়।
নিশ্চয় খবিস তথা হারাম মাল খবিসকে মিটাতে পারে না। অর্থাৎ গোনাহকে মিটিয়ে দিতে পারে না।
(মিশকাত শরীফ)
হযরত জাবের (রা.) হতে বর্ণিত রাসূল (সা.) ইরশাদ ফরমান, সুদ ভক্ষণের দ্বারা যে গোস্ত বর্ধিত হয়েছে তা বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না।
সুদের দ্বারা যে গোস্ত বৃদ্ধি পেয়েছে তা জাহান্নামের অগ্নিকুণ্ড প্রবেশ করারই অধিক উপযোগী।
(দারেমী শরীফ)
(সূত্র: মাজালিছে সিরাজী-২৯২,২৯৩,২৯৪,২৯৫,২৯৬,২৯৭)